Advertisment

তারার আর্বিভাবে মহারণের আকাশে আজ নক্ষত্র পতন

স্কোরলাইন এক হয়ে যাওয়ার পর প্রাক্তন গুরু-শিষ্য সুভাষ-শঙ্করলাল ফিরলেন চেনা ম্যাচ-বাঁচিয়ে-ড্র-করার স্ট্র্যাটেজিতে। যদিও এদিন ডিকা জোড়া সিটার থেকে গোল করতে ব্যর্থ না হলে মোহনবাগান জিতেই মাঠ ছাড়ত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Derby Express Photo Shashi Ghosh

অ্যাম্বুলেন্সে মেহতাব হোসেন। ছবি-শশী ঘোষ।

ইস্টবেঙ্গল ২ (অ্যাকোস্টা ৪৫’, রালতে ৬১’)

Advertisment

মোহনবাগান ২ (পিন্টু ২০’, হেনরি ৩০’)

কর্পোরেট জৌলুস বনাম বঙ্গজ আবেগ। ভারতীয় ফুটবলে দৃশ্যমান বৈরিতা এখনও প্রবাহমান। সভ্য, সমর্থক থেকে ক্লাব কর্তা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ নামক দৈত্যকে একটা বার্তা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। বুঝিয়ে দেওয়া “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।”

Derby Express Photo Shashi Ghosh কানায়-কানায় ভর্তি গ্যালারি। ছবি: শশী ঘোষ

স্টেডিয়ামের খালি বাকেট সিটে জার্সি পরিয়ে দর্শকে টইটুম্বুর গ্যালারি দেখানোর প্রয়াস যখন ফেসবুকে ফ্ল্যাশ হয়ে যায়, ঠিক তখনই খড়দা থেকে খড়গপুর, বর্ধমান থেকে মেদিনীপুরের সর্মথক ভর্তি ট্রাকগুলো এসে জানান দেয়, কলকাতা ময়দানের ফুটবল মহোৎসবের এ সামান্য আয়োজন ডার্বিকে উপলক্ষ্য করে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের জন্য পুস্পার্ঘ হয়ে যুবভারতীর ফ্লাডলাইটেও জ্বলে ওঠে হাজার হাজার মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট। মায়াবী দৃশ্যায়নের মাঝেই ক্লাবের নামে দেওয়া জয়ধ্বনি উৎপন্ন করে হাজার ওয়াটের শব্দব্রহ্ম। বলে দেয় কলকাতা আছে ফুটবলেই।

Derby Express Photo Shashi Ghosh আলোর খেলা। ছবি: শশী ঘোষ

আরও পড়ুন: ভালবাসার নিদর্শন: ইস্টবেঙ্গল ভক্তের লাল-হলুদ বাড়ি

ডার্বির চিরন্তন সেন্টিমেন্টে চিনিয়ে দেয়, ভারতীয় ফুটবলের সেরা বিজ্ঞাপনটা দেখা যায় বড় ম্যাচেই। মরসুমের প্রথম ডার্বির আবহাওয়া ঠিক এটাই। কলকাতা লিগ যদি ট্রেলার লঞ্চের মঞ্চ হয়ে থাকে তাহলে ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’ তোলা থাকবে আই-লিগের জন্য।

ডার্বির বেশ কয়েকদিন আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল যে, লাইমলাইটে থাকা ফুটবলারটিই আসবেন স্ক্যানারের নিচে। ইস্টবেঙ্গলের মহানায়ক চলতি বিশ্বকাপার জনি জেরার্ডো অ্যাকোস্টা জামোরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলে আসা কোস্টা রিকার ডিফেন্ডারের দিকেই ছিল চোখ। ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে ভারতীয় ফুটবলে আজ অভিষেক হল তাঁর। তাও আবার ডার্বিতে। যদিও অ্যাকোস্টার এই যাত্রা গলি থেকে রাজপথের নয়, রাজপথ থেকে বেরিয়ে গলিতে ঢোকা।

Derby Express Photo Shashi Ghosh আগুয়ান জনি অ্যাকোস্টা। ছবি: শশী ঘোষ

কলকাতার ফুটবল আর ডার্বির মাহাত্ম্য বুঝতে বুঝতেই অ্যাকোস্টার দফতরকে ধ্বসিয়ে দিল মোহনবাগান। নেইমারকে রুখে দেওয়া ফুটবলার দিশাই পেলেন না বলের। ৩০ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল হজম করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ জনগনের চোখে হয়ে গেলেন ভিলেন। অ্যাকোস্টার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না দলের দ্বিতীয় স্টপার মেহতাব সিংয়ের। এর আগে তাঁরা যে একসঙ্গে খেলেননি সেটা বোঝাপড়ার ভাষাতেই বুঝিয়ে দিলেন। লাল-হলুদ রক্ষণভাগকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল সবুজ-মেরুন। পিন্টু মাহাতো আর হেনরি কিসেক্কার জোড়া ফলায় বিদ্ধ হলেন সুভাষ ভৌমিক। ২০ মিনিটে অরিজিৎ বাগুইয়ের মাপা ক্রসে ফটো ফিনিশ শটে গোল করে গেলেন ঝাড়গ্রামের ছেলে পিন্টু। আর তার ১০ মিনিট পরেই সেই অরিজিতের একই রকম ক্রস থেকে হেনরির দুরন্ত গোল। নীরব দর্শক অ্যাকোস্টা-মেহতাব।

আরও পড়ুন: মোহনবাগান নিয়ে গর্ব করে এই পাড়া

Derby Express Photo Shashi Ghosh গোলের পর মোহনবাগানের উচ্ছ্বাস। ছবি: শশী ঘোষ

চলতি লিগে ইস্টবেঙ্গল গর্ব করেছে তার মাঝমাঠ নিয়ে। কাশিম আইদারা, আল আমনা, কমলপ্রীত ও ব্রেন্ডন-খচিত মাঝমাঠ। এদিন দূরবিন দিয়েও দেখা যাচ্ছিল না। মাঝমাঠের জেনারেল আমনা গতিতেও আর পেরে উঠছিলেন না। মোহনবাগানের হয়ে তখন ফুল ফোটাচ্ছেন অরিজিৎ বাগুই, পিণ্টু মাহাতো, ব্রিটো ও সৌরভরা। আমনার মার্কার হিসেবে সৌরভকে ব্যবহার করলেন শঙ্করলাল। আমনা হাফলাইন পেরোতে হিমসিম খেয়ে গেলেন।

Derby Express Photo Shashi Ghosh গোলের পর লালডানমাইয়া রালতের সেলিব্রেশন। ছবি: শশী ঘোষ।

প্রথমার্ধের সংযোজিত সময় ইস্টবেঙ্গলের পাল্টায় নড়ে গেল মোহনবাগান। প্রথমার্ধের ফ্লপ শো দেওয়া অ্যাকোস্টা হয়ে গেলেন রাতারাতি হিরো। সেট পিস থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়েই গোলে বল রেখেছিলেন অ্যাকোস্টা। কিন্ত শিল্টন পাল রুখে দিয়েছিলেন। যদিও রিবাউন্ড থেকে ফের অ্যাকোস্টার বুকে হয়ে বল চলে যায় তে-কাঠিতে। আর এটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

দ্বিতীয়ার্ধে ভাল খেললেন অ্যাকোস্টা ও গোটা ইস্টবেঙ্গল। ঠিক বিরতির আগের মোহনবাগানের খেলাটা ধরে নিল ইস্টবেঙ্গল। আর অন্যদিকে মোহনবাগান ক্রমেই ফ্যাকাশে হতে থাকল। ম্যাচের ৬১ মিনিটে লালডানমাইয়া রালতের গোলেই লাল-হলুদ সমতায় ফিরল। স্কোরলাইন এক হয়ে যাওয়ার পর প্রাক্তন গুরু-শিষ্য সুভাষ-শঙ্করলাল ফিরলেন চেনা ম্যাচ-বাঁচিয়ে-ড্র-করার স্ট্র্যাটেজিতে। যদিও এদিন ডিকা জোড়া সিটার থেকে গোল করতে ব্যর্থ না হলে মোহনবাগান জিতেই মাঠ ছাড়ত। পৌঁছে যেত কলকাতা লিগের খেতাবের একদম কাছে।

আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান: দেখে নেওয়া যাক স্মরণীয় পাঁচ ডার্বি

Derby Express Photo Shashi Ghosh স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ছেন মেহতাব হোসেন। ছবি: শশী ঘোষ

অ্যাকোস্টা, আমনা, ডিকা, কিংসলে ও হেনরি। ডার্বিতে বিদেশিদের ভিড়েও আজ এদেশের এই বাংলার মেহতাব হোসেন হয়ে গেলেন ট্র্যাজিক পরিণতির শিকার। আগেই বলে দিয়েছিলেন, কলকাতা লিগের পর বুটজোড়া তুলে রাখবেন তিনি। খেলে ফেললেন জীবনের শেষ ডার্বি। লাল-হলুদ জার্সিতে বহু ডার্বির নায়কের জন্য ফুটবল বিধাতা শেষটায় তুলে রেখেছিলেন যন্ত্রণার বিদায়। তিন মিনিটের জন্য মাঠে থাকলেন তিনি। হাত ভেঙে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়লেন।

ড্রেসিংরুমেও ফেরা হল না। অ্যাম্বুলেন্সে শুইয়ে স্ক্যান করার জন্য নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। বাংলার ফুটবলের সুপারস্টার যখন অস্তাচলে, ঠিক তখনই ঝাড়গ্রামের পিন্টু উঠে এলেন। আগামীর তারকা তিনি। শঙ্করলালও বললেন, পিন্টু পরেরবার আইএসএল খেলবে। মেহতাবের প্রস্থান এবং পিন্টুর আগমন যেন বলছে, তারার আর্বিভাবে মহারণের আকাশে আজ নক্ষত্র পতন।

East Bengal Mohun Bagan
Advertisment