মাঠে চলছে মেসি ম্যাজিক। মাঠের বাইরে চলছে কালা, জাদু, তুকতাক, তন্ত্রবিদ্যা। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাফল্যের পিছনে এবার ডাকিনি যোগ প্রকাশ্যে চলে এল। গোটা আর্জেন্টিনা জুড়ে চলছে শয়ে শয়ে তুকতাক প্রথা। যার বলে বলীয়ান হয়েই নাকি এবার অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে মেসিদের জয়রথ।
প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনা হেরে বসেছিল সৌদি আরবের কাছে। তারপরেই দেশের জাদু-বিদ্যায় পারদর্শী শয়ে শয়ে স্ব-ঘোষিত ডাকিনি নিজেরা একটি হোয়াটসআপ গ্রুপ খোলে। সেখানেই সমস্ত 'ডাকিনি'রা একে অন্যকে পরামর্শ দিতে থাকে বিভিন্ন বিষয়ে। আর্জেন্টিনীয় এই ডাকিনী সংস্থাকে সেদেশে বলা হচ্ছে 'লা ব্রুহিনেতা'।
আরও পড়ুন: মেসির ‘অপয়া’ রেফারিই বিশ্বকাপের ফাইনালের দায়িত্বে, অপছন্দের ব্যক্তিকে দেখে হয়ত খুশি নন মহাতারকা
এদের মধ্যেই অন্যতম মাগালি মার্টিনেজ যেমন পার্ট-টাইম বেবিসিটার (শিশুকে দেখভাল করার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন) তিনি যেমন প্ৰথমে মেসিকে মাঠে খোঁড়াতে দেখে ঠিক করে ফেলেন, অলৌকিক শক্তিতে মেসিকে চোটমুক্ত করতে হবে। বাড়িতেই তিনি মন্ত্র:পুত জলের ওপর অল্প অল্প করে তেল ছিটিয়ে দিতে থাকেন। তাঁর ব্যাখ্যা যদি তেল পুরোপুরি জলে দ্রবীভূত হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা মিটে যাবে। তবে দেখা যায়, জলের মধ্যেই ছিটিয়ে দেওয়া তেল জড়ো হয়েছে। এতেই তিনি বুঝতে পারেন সমস্যা অনেক গভীরে। অভিশাপ কাটানোর জন্য তিনিই উদ্যোগ নিয়ে দেশের ডাকিনী-বিদ্যায় পারদর্শী সকলকে একসঙ্গে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। খোলা হয় হোয়াটসআপ গ্রুপ।
বলা হচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার আর্জেন্টিনীয় এই তন্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী তরুণী, মহিলারা জড়ো হয়েছেন তাবিজ, মন্ত্র, মোমবাতি, বেদী সমেত।
আরও পড়ুন: ও ফুটবলটাই বোঝে না! ফাইনালের আগে এমবাপেকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে অপমান আর্জেন্টিনীয় গোলকিপারের
মেসির শহর রোজারিও-য় স্থানীয় শিক্ষিকা রোসিও ক্যাবরাল জানাচ্ছেন, তিনি আর্জেন্টিনার প্রত্যেক ম্যাচের আগে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী স্কোরলাইন কলাপাতায় লিখে তা পুড়িয়ে ফেলছেন।
আর্জেন্টিনীয় এই ডাকিনীদের দাবি, তাঁরা ফুটবলারদের নেগেটিভ এনার্জি শুষে নিয়ে পজিটিভ এনার্জিতে ভরিয়ে দিচ্ছেন। এতে যদিও তাঁদের মারাত্মক ক্লান্তি গ্রাস করছে। ডাকিনীদের হোয়াটসআপ গ্রুপের যিনি প্রতিষ্ঠাতা সেই আন্তনেল্লা স্পাদাফোরা বলেছেন, "সমস্ত নেতিবাচক শক্তি আমাদের গ্রাস করছে। এতে আমাদের শারীরিক সক্ষমতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সারাক্ষণ মাথাব্যাথা, ক্লান্তি, বমি, পেশিতে যন্ত্রণা অনুভব করছি আমরা। কারণ ফুটবলাররা সকলেই পাবলিক ফিগার। তাই অন্যদের কাছ থেকে গৃহীত নেগেটিভ এনার্জি ওঁদের মধ্যে ভয়াবহ পরিমাণ বেশি।"
একই ব্যক্তিকে যাতে বেশি নেতিবাচক শক্তি গ্রাস না করতে হয়, সেই কারণে সেই হোয়াটসআপ গ্রুপের মাধ্যমেই প্রত্যেক ফুটবলারের জন্য আলাদা আলাদা করে ডাকিনী-বিদ্যায় পারদর্শী মহিলাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র আর্জেন্টিনীয় ফুটবলারদের জন্যই নয়, বিপক্ষের কিছু নামি প্লেয়ারদের জন্যই ঝাড়-ফুঁক করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে না পারেন। এর মধ্যে একটি প্রথা হল, একটি ছোট পেপারের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনও ফুটবলারের নাম লিখে তা জমিয়ে ফেলা হচ্ছে বিশেষ কোনও মন্ত্র:পুত অভিশাপ আউরে। পরে ম্যাচের আগে তা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন ফাইনালে, সরাসরি বাতিল করা হল ইংরেজ রেফারিকে
তবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এই জাদু-মন্ত্রের অভিশাপ সম্ভবত কাজ করবে না। কারণ ডাকিনী-সিদ্ধ মহিলারা বলছেন, ফরাসি ফুটবলাররা বিশেষ করে এমবাপে কালা জাদু দ্বারা সুরক্ষিত। তাঁদের ওপর অভিশাপ নামিয়ে আনতে গেলে তা বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে। অত:পর তাই অন্য স্ট্রাটেজি!
বলা হচ্ছে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবলাররাও হালকা তুকতাকে ভরসা রাখছেন। যেমন আলেহান্দ্র গোমেজ, লিয়েন্দ্র পারেদেস এবং ডি পল তিন তারকা মিডফিল্ডার ম্যাচ শুরুর আগে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করছেন। মুখে চুইংগাম নিয়ে। গত কোপা আমেরিকা থেকেই এই ট্র্যাডিশন ফলো করছেন তিন তারকা। এবারও সেই কাণ্ড বজায় রেখেছেন। ফাইনালে শেষরক্ষা হবে এই জাদুতে? দেখা যাক।