চলতি বছরের এপ্রিলে ফকল্যান্ড যুদ্ধের ৪০ বছর সম্পূর্ণ হল। তবে সেই যুদ্ধের তিক্ত স্মৃতি এখনও মোছার নয় ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনার মধ্যে। চলতি বিশ্বকাপের মঞ্চেও এবার ফকল্যান্ড রাজনীতির ছায়া। রবিবার রাতে চূড়ান্ত লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা। দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইনাল ম্যাচের জন্য কোনও ইংরেজ রেফারিকে রাখা হয়নি। ফকল্যান্ড যুদ্ধের তিক্ত স্মৃতিতে ইংরেজ রেফারিরা যাতে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে না করতে পারেন, সেই জন্যই ফিফার এই পদক্ষেপ।
ইংরেজ রেফারি এন্থনি টেলরকে এমনিতে ফাইনাল ম্যাচের রেফারি হিসাবে ভাবা হয়েছিল। কাতার থেকে মাইকেল অলিভিয়ের সহ সমস্ত ইংরেজ রেফারিদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলেও রাখা হয়েছিল টেলরকে। ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে (স্পেন বনাম নেদারল্যান্ডস) হাওয়ার্ড ওয়েবের পর টেলর প্ৰথম ইংরেজ রেফারি হিসাবে কোনও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত লড়াই পরিচালনা করার দায়িত্ব পেতেন। তবে তাঁকে আপাতত ফকল্যান্ড যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে বাতিল করা হল।
আরও পড়ুন: মেসির ‘অপয়া’ রেফারিই বিশ্বকাপের ফাইনালের দায়িত্বে, অপছন্দের ব্যক্তিকে দেখে হয়ত খুশি নন মহাতারকা
পোল্যান্ডের জাইমন মার্সিনিয়াক ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করবেন। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া-বেলজিয়ামের গোলশূন্য ম্যাচ এবং দক্ষিণ কোরিয়া-ঘানা ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। ঘানা সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে হারিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে।
পোল্যান্ডের জাইমন মার্সিনিয়াকের সঙ্গেই সহকারী রেফারির ভূমিকাতেও থাকবেন দুই পোলিশ- পাওয়েল সকোলনিস্কি এবং টমাস লিসকিউইজস।
কী এই ফকল্যান্ড যুদ্ধ:
আর্জেন্টিনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে জানিয়েছিল ইংল্যান্ড তাঁদের দখলে থাকা ফকল্যান্ড দ্বীপ দখল করেছিল ১৮৩৩-এ। ১৯৮২ সালে নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য সেই ব্রিটিশ কলোনিতে হামলা চালায় আর্জেন্টিনা। তারপরে ইংল্যান্ডের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। তিন মাস ব্যাপী সেই যুদ্ধে আর্জেন্টিনা ব্রিটিশ সরকরের ফকল্যান্ড শাসনে চিরতরে ইতি ফেলে দেয়।
আরও পড়ুন: ও ফুটবলটাই বোঝে না! ফাইনালের আগে এমবাপেকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে অপমান আর্জেন্টিনীয় গোলকিপারের
জেনারেল গালটেরির নেতৃত্বে আর্জেন্তিনা ১৯৮২-তে জোরপূর্বক ফকল্যান্ড দ্বীপের দখল নেয়। দু-মাস পরেই ব্রিটিশ টাস্কফোর্সের হামলায় পিছু হটে আর্জেন্তিনা। দুই দেশের মধ্যে এখনও কোনও শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয়নি। তারপর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপ বরাবর ট্রুপস, জেটস, যুদ্ধ জাহাজের আগমন লেগেই রয়েছে বরাবর।
দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফকল্যান্ড যুদ্ধে ব্রিটেনের ২.৮ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান মূল্য অনুযায়ী, যার পরিমাণ ৯.৫ বিলিয়ন ইউরো। এখনও এই দ্বীপের সামরিক খাতে বার্ষিক খরচ হয় ৬০ মিলিয়ন ইউরো। ২০১২ সালে এই সমীক্ষায় জানা যায়, ব্রিটিশ কর দাতাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার ইউরো দিতে হয়েছে ফলল্যান্ডের সামরিক খাতে।