আগুনে টাইব্রেকার পর্ব শেষের পরেই দুই দলের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা। আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বারবার আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। আর সেই ঘটনার রেশ রয়ে গেল অনেকক্ষণ।
ম্যাচের পরেই মেসি টিওয়াইসি স্পোর্টসকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচের শেষলগ্নে আর্জেন্টিনার নেমেসিস হয়ে ওঠা ওয়াট ওয়েঘর্স্ট। মেসি ডাচদের ওপর এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে সঙ্গেসঙ্গেই বেসিকতাসের স্ট্রাইকারকে বলে দেন, "ওহে বোকা, এদিকে কী দেখছ? যাও, ভাগো।" মেসি বিষ্ফোরকভাবে সাক্ষাৎকারে বলে দেন, গোটা ম্যাচে তাঁকে কখনই সম্মান দেয়নি নেদারল্যান্ডস। এমনকি ডাচ কোচ লুই ভ্যান গাল-ও তাঁকে অসম্মান প্রদর্শনে পিছপা হননি।
আরও পড়ুন: লাথালাথি থেকে হাতাহাতি! ভয়ঙ্কর কাণ্ডে উত্তাল আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ! দেখুন চরম ভিডিও
ভ্যান গাল-কে সেই সাক্ষাৎকারে একহাত নিয়ে মহাতারকা মেসি বলে দেন, "ম্যাচের আগে কথা বলা একদম পছন্দ করি না। উনি যতবার খেলায় ঢুকেছেন বারবার আমাদের প্ররোচনা করে গিয়েছেন, ধাক্কাধাক্কি করেছেন। অনেক কথা শুনিয়েছেন। এগুলো মোটেই ফুটবলের অংশ নয়। আমি সকলকে সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখি। ওঁরাও যদি এরকম সম্মান দেয়, সেটা ভালো লাগবে। ওঁদের কোচ মোটেই আমাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। আমাদের অনৈতিকভাবে আক্রান্ত হতে হচ্ছিল। ভ্যান গাল বরাবর বলেন, উনি সবাইকে ফুটবলের নৈতিকতার পাঠ দেন। তারপরে লম্বা ফুটবলারদের মাঠে নামিয়ে মারামারি করতে পাঠান।"
ম্যাচের মধ্যেই ওয়েঘর্স্টকে বেশ কয়েকজন আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার ঘিরে ধরেন। লিসেন্দ্র মার্টিনেজ, লাউতারো মার্টিনেজ, এমনকি ডাগ আউটে থাকা সের্জিও আগুয়েরোও। গোটা ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আগুয়েরো বলেন, "আমরা তখন মাঠে ঢুকছিলাম। ও বলতে শুরু করেছিল, হে মেসি, হে মেসি। মেসিও ঘুরে তাকায় ওঁর দিকে। ও তখন বলল, এখানে এসো। সঙ্গেসঙ্গেই আমি ওকে মুখ বন্ধ করতে বলি। ও পাল্টা বলতে থাকে, আমাকে মুখ বন্ধ রাখতে বলো না। ওঁকে তখন বলি, মেসির সঙ্গে যেন এভাবে কথা না বলে।"
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের অমর ম্যাচে টাইব্রেকার ক্ল্যাসিক! মেসির স্বপ্ন বাঁচিয়ে কমলা ঝড় থামালেন মার্টিনেজ
আর্জেন্টিনা সহজে জয়ের পথে পৌঁছে গিয়েছিল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে। প্ৰথমে নাহুয়েল মলিনা আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার পর মেসি পেনাল্টি থেকে ২-০ করে যান। তবে ভ্যান গালের চতুর পরিবর্তনের পরে ডাচরা ৮৩ মিনিটে এক গোল শোধ করে। তারপরে আর্জেন্টিনা কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
এমন টেশশনের আবহেই লিয়েন্দ্র পারেদেস স্লাইড ট্যাকেলে বল ক্লিয়ার করার পরেই পরস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার আগে শারীরিক ফুটবলে দুই দলই একের পর এক ফাউল করতে থাকে। আর চাপের মুখে আর্জেন্টিনা ২ গোলের লিডও ধরে রাখতে পারেনি। একদম শেষ মিনিটে ডাচ বাহিনী ২-২ করে দেয়। তারপরেই ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময় এবং পেনাল্টি শ্যুট আউটে।
আরও পড়ুন: চোখের জলে বিদায় নিক মেসি! আর্জেন্টিনাকে এবার চরম অভিশাপ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ তারকার
রেফারি মাতেও লাহুজ গোটা ম্যাচে ফুটবলার এবং সাপোর্ট স্টাফ মিলে মোট ১৭ বার হলুদ কার্ড দেখান। যদিও কাউকে কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়নি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনও ম্যাচে এতবড় কার্ড দেখানোর নজির ছিল না। ম্যাচের পরে স্প্যানিশ রেফারিকেও একহাত নেন মেসি। বলে দেন, এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচের দায়িত্ব নেওয়ার মত যথেষ্ট যোগ্যতা নেই লাহুজের।
"রেফারিকে নিয়ে একদম কথা বলতে পছন্দ করি না। কারণ ওঁরা পরে প্রতিশোধ নেয়। সবসময় সৎ থাকা সম্ভব হয়না। তবে ফিফার এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তার করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মত এরকম ম্যাচে এমন একজন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত হয়নি।"