বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছে ভারতের জয়রথ। বৃহস্পতিবারেই ভারত খেলছে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে নামার আগেই অবশ্য় মনখারাপ। না দেখার দেশে চলে গেলেন শ্যামসুন্দর মিত্র। প্রবাদপ্রতিম বাঙালি ক্রিকেটার বলতেই মনের চোখে ভেসে ওঠে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা পঙ্কজ রায়ের নাম। কিংবদন্তিতুল্য বাঙালি ক্রিকেটারদের ব্র্যাকেটে একইভাবে রয়েছেন শ্যামসুন্দর মিত্র-ও। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ভর্তি ছিলেন নার্সিংহোমে। বৃহস্পতিবার শহরের সেই বেসরকারি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার ক্রিকেটের মহীরূহ।
দু-বছর আগেই মোহনবাগান রত্নে সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। মোহনবাগান অন্তঃপ্রাণ হওয়ার কারণেই দেশের জন্য খেলেননি একসময়ে। ষাটের দশকে যখন কেরিয়ার মধ্যগগনে, তখন ময়দানের এক কর্তা তাঁকে বলেছিলেন, মোহনবাগান ছেড়ে স্পোর্টিং ইউনিয়নে খেলার জন্য। তাহলে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ 'পাইয়ে' দেবেন তিনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ছিলেন। তাই সেই 'প্রস্তাবে' হ্যাঁ করতে পারেননি তিনি। প্রিয় মোহনবাগানেই খেলে গিয়েছেন আজীবন। আর খেসারত দিয়ে গিয়েছেন আজীবন।
বাংলার রনজি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুম্বই থেকে বলছিলেন, "নিজের দাদা-কে হারালাম। উনি একসময়ে আমাকে চাকরি করে দিয়েছিলেন। সর্বকালের সেরা পাঁচ বাঙালি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবসময়ে থাকবেন। সকালে এমন খবর শুনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।" বাংলার আর এক তারকা পেসার রণদেব বসু আবার শ্য়াম-দার নাম শুনলেই একরাশ নস্ট্যালজিয়ায় ভেসে যান। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলছিলেন, "শৈশব থেকে বাবা-জ্যাঠার কাছে শ্যাম দা-র কথা শুনে বড় হয়েছি। উনি যে কিংবদন্তি ,তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাঠে যখনই কোনও বিপদে পড়েছি, ওনার পরামর্শ নিয়েছি। গোপাল (রায়) দা, রাজু (মুখোপাধ্যায়) দার কাছে ওঁর বিষয়ে অনেক শুনেছি। শুনে শ্রদ্ধা আর সম্মান আরও বেড়ে গিয়েছে। ওঁর মৃত্যুতে শোকাহত।"
প্রয়াত কিংবদন্তি শ্য়ামসুন্দর মিত্র (ফেসবুক)
সুনীল গাভাসকার তাঁকে এতটাই শ্রদ্ধা করতেন যে বইয়ে লিখেওছিলেন তাঁর কথা। সেই বই যত্ন করে এখনও রাখা রয়েছে তাঁর বুক শেলফে। লিটল মাস্টার ১৯৬৮-র রঞ্জিতে মুম্বই বনাম বাংলা ম্যাচে শ্যামসুন্দর মিত্রের ১৩৫ রানের নটআউট ইনিংসে এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে লিখেছিলেন, "ওই ইনিংসটা সব তরুণ ক্রিকেটারের জন্য শেখার। আমি নিজেও শিখেছি, ধৈর্য কাকে বলে!"
এমন ক্ষণজন্মা প্রতিভাধর ক্রিকেটারের প্রয়াণে বাংলার ক্রিকেট যে অভিভাবকহীন হল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।