বিশ্বকাপ মানে শুধুই অবিস্মরণীয় গোলের কোলাজ নয়, মনের মণিকোঠায় আজীবন ভাস্বর হয়ে থাকা কিছু গোলের সেলিব্রেশনও। বিশ্বকাপের সেরকমই সব গোল সেলিব্রেশনের ভিডিও দেওয়া রইল এই প্রতিবেদনে।
বেবেতো (১৯৯৪): রক আ বাই বেবি!
১৯৯৪ বিশ্বকাপে বেবেতোর হাত ধরে রক আ বাই বেবি সেলিব্রেশনের পথ চলা শুরু হয়। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে গোল করে তিনি এভাবেই উদযাপন করেছিলেন। টাচলাইনের কাছে ছুটে গিয়ে হাসি মুখে অদৃশ্য বাচ্চা দোলানোর ভঙ্গিমা প্রকাশ করেন বেবেতো। তাঁর সতীর্থরাও তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। এখন আসন্ন পিতৃত্বের খবর মাঠে কী ভাবে জানাতে হয় সে ব্যাপারে বেবেতোই ট্রেন্ডসেটার।
ব্রায়ান লড্রাপ (১৯৯৮): পাথরে খোদাই ভাস্কর্য
সম্ভবত এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে স্মরণীয় গোল উদযাপনের মধ্যে এটি একটি। ডেনমার্কের ব্রায়াল লড্রাপ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৯৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গোল করার পরেই নিজেদের গোলপোস্টের কাছে ছুটে যান। তারপর আচমকাই কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন পাথরে খোদাই করা ভাস্কর্য সৃষ্টির এক মডেল।
জুলিয়াস আঘাহোয়াআ (২০০২): ফ্লিপ মি আ পারফেক্ট টেন!
২০০২ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড জুলিয়াস আঘাহোয়াআ সুইডেনের বিরুদ্ধে গোল করে কী কাণ্ডটাই না করেছিলেন। এটিকে-তে খেলে যাওয়া ফিকরু তেফেরার সামারসল্টও লজ্জা পাবে দেখে। জুলিয়াস পরপর সাতবার ফ্লিপ করিয়েছিলেন নিজের শরীরটাকে।
মার্কো তারদেলি (১৯৮২): রান, রান, রান...
১৯৮২-র বিশ্বকাপ ফাইনাল। ইতালি নেমেছিল জার্মানির বিরুদ্ধে। পেনাল্টি বক্সের কাছ থেকে তারদেলির বুলেট শটের কোনও কিনারা করতে পারেননি জার্মান গোলরক্ষক টনি শ্যুমাখার। এই গোলের পর মুষ্টিবদ্ধ দু’হাত সামনে নিয়ে ছুটতে থাকেন তারদেলি। দেখে মনে হয়েছিল এ দৌড় যেন থামার নয়।
ইভান কাভিয়েদেস (২০০৬): ওয়েব স্লিঙ্গার অন দ্য পিচ
স্পাইডারম্যান ফুটবল খেলে না। কিন্তু একবার স্পাইডারম্যান বিশ্বকাপে গোল করে বিখ্যাত হয়ে যান। ২০০৬ বিশ্বকাপে ইকুয়েডর বনাম কোস্তারিকা ম্যাচে গোল করার পর স্পাইডারম্যানের অবতারে ধরা দেন ইভান কাভিয়েদেস। প্যান্টের পকেট থেকে স্পাইডারম্যানের মুখোশ বের করে পরে নেন তিনি। প্রয়াত এক সতীর্থের স্মৃতির উদ্দেশে এমনটা করেছিলেন ওই ফুটবলার।
রজার মিল্লা (১৯৯০): শেক ইট, বেবি!
৯০-এর বিশ্বকাপে ৩৮ বছর বয়সে মাঠে নেমেছিলেন ক্যামেরুনের রজার মিল্লা। বয়স যে শুধুই সংখ্যা বই আর কিছু নয়, সেকথা প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন তিনি। ওই বয়সেও তাঁর স্কিল ও বল পজিশনিংয়ে মুগ্ধ করেছিলেন আপামর ফুটবলবিশ্বকে। গোল করার পর সাপের মতো এঁকে বেঁকে তাঁর নাচ দীর্ঘ দিন মনে রাখার মত।
আরও পড়ুন:FIFA World Cup 2018: ১২ দিন বাকি থাকতেই দেখে নিন ১২টি স্টেডিয়াম
জিনেদিন জিদান (১৯৯৮): কিস দ্য শার্ট…
৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলছিল জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স। ভাসানো কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন তিনি। ঠিক আগের গোলের মতোই। ফ্রান্স সেবার ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। গোলের পর জিদান নিজের টি-শার্টে চুমু এঁকেই সেলিব্রেট করেছিলেন। সাধারণত উচ্ছ্বাস প্রকাশ জিজুর স্বভাববিরুদ্ধ। কিন্তু সেবার ছিল ব্যাতিক্রম।
পাপা বউবা দিওপ (২০০২): স্মরণীয় নাচ
২০০২ বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছিল সেনেগাল। পাপা বউবা দিওপের গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়েছিল সেনেগাল। গোল করার পর দিওপ জার্সি খুলতে খুলতে চলে যান কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে। তারপর সেখানে জার্সিটিকে ঘিরে সতীর্থদের নিয়ে গোল হয়ে নাচতে শুরু করেন।
ফিন্দিনি জর্জ (১৯৯৪): যেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া!
১৯৯৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ানরা গোল সেলিব্রেশনের সংজ্ঞা নতুন করে লিখতে চেয়েছিলেন। যেমন ফিন্দিনি জর্জ। গ্রীসের বিরুদ্ধে গোল করার পর তিনি যে উদ্ভট সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন তা দেখে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মত। যদিও অশ্লীল ভঙ্গিমার জন্য কোনও কার্ড দেখেননি তিনি।
সিপি শাবালা (২০১০): ডান্স ইন সিঙ্ক!
২০১০ বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গোল করে সিপি শাবালা দল বেঁধে নেচেছিলেন মাঠের মধ্যে। গোলের পরেই সাইডলাইনে ছুটে যান তিনি। তারপর সতীর্থদের নিয়ে যা শুরু হল তা যেন গ্রুপ ডান্স!
মিরোস্লাভ ক্লোজ (২০১৪) সেলিব্রেশনই শেষ করে দিতে পারত তাঁর জীবন!
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের (১৬টি) মালিক জার্মানির ফরোয়ার্ড মিরোস্লাভ ক্লোজে। গতবার বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান দলের অন্যতম তারকা ছিলেন তিনি। ঘানার বিরুদ্ধে গোল করে ব্রাজিলিয়ান রোনাল্ডোর সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৫টি) হয়ে যান তিনি। ফ্লিপ করেই সেলিব্রেট করেছিলেন তিনি। কিন্তু ল্যান্ডিংয়ের সময় আরএকটু হলেই গুরুতর চোট পেতে পারতেন তিনি। এই জন্য পরের ম্যাচে শুধুই স্লাইড করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।