ঐতিহাসিক দিনে চরম অস্বস্তিতে পালতোলা নৌকা।
আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। সোমবারে তাই সকাল থেকে তাঁর ঠিকানা বিখ্যাত বাবা-র মূর্তির পাদদেশ। সেখানেই অনশনে বসেছেন তিনি। জল পর্যন্ত স্পর্শ করবেন না। সিএবি-র ঠিক উলটো দিকেই জমাট ভিড় এবার গোষ্ঠ পাল পুত্র নীরাংশু পাল, নাতি গির্বাণ পাল এবং তাঁদের পরিবারকে ঘিরে। সেখানেই আরও একবার ক্ষোভ, হতাশা, অপমান মিলেমিশে একাকার। রবিবার ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক শতবর্ষের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন তিনি। হাজারো হাজারো সমর্থকদের সঙ্গে মশাল মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন।
আর সোমবারে নীরাংশুবাবুর অনশন পিতার ঐতিহাসিক পদক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে। পদ্মশ্রী সহ গোষ্ঠ পালের একাধিক ঐতিহ্যমণ্ডিত পদক ১৯৯২ সালে মোহনবাগানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারপর আচমকাই হাওয়া হয়ে গিয়েছে সেই পদকগুলি। সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার লেখালেখি হয়েছে এই বিষয়ে। মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হওয়ার পরে মোহনবাগান কর্মকর্তারা একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন। পাশাপাশি স্বান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে নীরাংশুবাবুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু পদকের ধ্বংসাবশেষ। যা পেয়ে হাউহাউ করে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল কিংবদন্তি-পুত্রকে। পিতার প্রয়াণ দিবসেই তিনি সেই জরাজীর্ণ পদকের কাঠামো ফেরত দিয়ে দেন মোহনবাগানকে। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
আরও পড়ুন পিতার প্রয়াণ দিবসেই মোহনবাগানে রত্ন ফেরত কিংবদন্তি-পুত্রের, ক্ষোভ শিল্ডজয়ী পরিবারেও
সেই ঘটনার পরে বেশ কয়েকমাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু পদক খোঁজার কাজে গতি আসেনি। তাই এবার নীরাংশুবাবু প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে মোহনবাগান দিবসই বেছে নিয়েছেন অনশন করার জন্য।
অনশনস্থল থেকেই নীরাংশুবাবু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র কাছে ক্ষোভ উগরে দেন। দুঃখ, অপমান মেশানো গলায় নীরাংশুবাবু বলছিলেন, "এটা মোহনবাগান ক্লাবেরই লজ্জা। বহুবার ক্লাব কর্তাদের জানার জন্য ফোন করেছিলাম। কেউ কথা বলতেই আগ্রহী নন। সত্যজিৎ তো আমার কাছে স্বীকারই করে নিয়েছে, পদক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি একান্তই পদক খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে সেটা মোহনবাগান সরকারিভাবে জানিয়ে দিক। আমরাও ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত। পুরো বিষয়টারই সুরাহা হওয়ার প্রয়োজন।" যদিও সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন হাবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইস্টবেঙ্গল কোচের! শতবর্ষের আবহেই চমক ময়দানে
শতবর্ষের আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন না অভিমানী কিংবদন্তি! শুরুর দিনেই তাল কাটল
কাঁধে ইঞ্জেকশন নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে ‘ঐতিহাসিক উপহার’! শতবর্ষে ক্লাবই ভুলল সেই নায়ককে
অভিমান উপচে পড়ছে নীরাংশুবাবু। গলায় কান্না চেপে তিনি আহত গলায় বলতে থাকেন, "এই পদকগুলো গোটা দেশের গর্ব। ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রাক্তন ফুটবলারদেরও তো মুখ খোলার প্রয়োজন। তাঁরা কেন চুপ রয়েছেন! আর ক্লাব কর্তারা যদি না পান পদক, তাঁদেরই পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া দরকার।"
ক্লাব কর্তাদের পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফ থেকে কোনও সাড়া পাননি দাবি করেছেন নীরাংশুবাবু। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী-কে সমস্ত কিছু জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন নীরাংশু পাল। সেই জবাবও মেলেনি। 'চাইনিজ ওয়াল'-এর পরিবার ঐতিহাসিক মোহনবাগান দিবসে আমন্ত্রিত-ও নন। সময় বয়ে যাচ্ছে। হিসেব তবু মেলাতে পারছেন না কিংবদন্তির পরিবার।
এতটা-ও কী অসম্মান প্রাপ্য কিংবদন্তির উত্তরসূরিদের?