Anish Sarkar becomes Youngest ever chess player: বয়স মাত্র তিন বছর, আট মাস ১৯ দিন। কৈখালির অনীশ সরকার দাবার ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করল। এবছরের মার্চেই অনীশকে তার অভিভাবকরা বড়ুয়া চেস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিল। আর, তারপরই রাজ্য অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে অভিষেক হয় অনীশের।
যেখানে অনীশ দাবা খেলার জন্য ভর্তি হয়েছে, সেই ধানুকা ধুন্সেরি দিব্যেন্দু বড়ুয়া চেস অ্যাকাডেমির টেবিলে দাবা বোর্ডে পৌঁছনোটাই তিন বছরের অনীশের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তিনটি প্লাস্টিকের চেয়ার রেখে উঁচু করে তার ওপর এই দাবা খেলোয়াড়কে বসাতে হয়। যাতে সে টেবিলে হাত রাখতে পারে। এখনও প্রি-স্কুল পর্যায়ের এই ছাত্র আগামিদিনে ফিডে ব়্যাংক পেলে, তাকে টুর্নামেন্টে খেলতে দেওয়ার জন্য 'হাই বেবি চেয়ার'-এর ব্যবস্থা করতে হবে উদ্যোক্তাদের।
অনীশ দিব্যেন্দু বড়ুয়া চেস অ্যাকাডেমিতে বেশ মনোযোগ দিয়েই খেলছে। ক্যামেরা সম্পর্কে রীতিমতো সাবলীল, আর ততটাই উদাসীন। তার কোচ দিব্যেন্দু বড়ুয়া ভারতীয় দাবার অন্যতম গ্র্যান্ডমাস্টার। তিনি অনীশকে নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। তবে, যাতে কমবয়সে মাথা ঘুরে না যায়, সেই জন্য এখনই বেশি প্রচার করতে মানা করেছেন। অনীশের মা আবার ক্যামেরার সামনে আসতে চান না। তবে, ছেলের দাবা খেলা নিয়ে কথা বললে তিনি সেই ব্যাপারে রাজি।
গত বছরই কলকাতা বছরের সবচেয়ে বড় দাবা ইভেন্টের আয়োজন করেছিল- টাটা স্টিল ইন্ডিয়া দাবা টুর্নামেন্ট। সেখানে খেলেছিলেন দাবার পোস্টারবয় আর প্রজ্ঞানন্ধা। কিশোর এই খেলোয়াড়কে দেখে অনীশের মামা এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে তিনি ভাগ্নেকে দুর্গাপূজায় একটা চেসবোর্ড উপহার দেন। অনীশ সেই চেসবোর্ড নিয়ে ইউটিউব থেকে দাবা খেলা শিখে নেয়। যা দেখে চমকে যান তার বাড়ির লোকজন।
এরপরই বাড়ির লোকজন লক্ষ্য করেন যে অনীশের মধ্যে দাবা খেলার আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। সপরিবারে আগ্রা বেড়াতে গিয়েছিল অনীশের পরিবার। ফেরার পথে অনীশকে দেখা যায় ট্রেনের মধ্যে পাশের সিটে থাকা একটি বড় ছেলের কাছে চলে যেতে। কারণ, সেই ছেলেটি অনলাইনে দাবা খেলছিল। এই ব্যাপারে অনীশের মা বলেন, 'আমরা আগ্রা থেকে ফিরছিলাম। সেখানে আরেকটা ছেলে অনলাইনে দাবা খেলছিল। ছেলেটা বয়সে ওর চেয়ে বড়। অনীশকে দেখলাম ওই ছেলেটার সঙ্গে গোটা ট্রেনপথে দাবা খেলল। অনীশই শেষ পর্যন্ত জিতেছে।'
এরপরই চলতি বছরের মার্চে অনীশের পরিবার তাকে বড়ুয়া অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে। কয়েক মাসের মধ্যেই অনীশ রাজ্য অনূর্ধ্ব-৯ টুর্নামেন্টে খেলে। ৮ এর মধ্যে ৫.৫ পয়েন্ট পেয়ে টুর্নামেন্টে ২৪তম স্থান অধিকার করে। এরপর অনূর্ধ্ব ১৩ জাতীয়স্তরের খেলায় ফিডে ব়্যাংকিয়ের জন্য অনীশ খেলে। সেখানে পাঁচ জন ফিডে রেটেড খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলেছে। পেয়েছে ১,৫৫৫ ব়্যাংকিং।
দাবার প্রতি অনীশের এত আগ্রহ কীভাবে জন্মাল? এই প্রসঙ্গে অনীশের মা গোথাম চেস নামে একটি চ্যানেলের উল্লেখ করেছেন। যার ৫.৫ মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহক। হোস্ট লেভি রোজম্যান। রোজম্যানের লক্ষ্য হল দাবাকে মজাদার করা এবং এজন্য একটি ডব্লিউডব্লিউই স্টাইলের বুমিং সিগনেচার চ্যান্ট রয়েছে— 'স্যাক্রিফাইস দ্য রূক'। রোজম্যান প্রায়ই শোতে এই কথা বলেন।
অনীশ এটি পছন্দ করত। আর, মা-বাবাকে এটি শুনতে দিতে বলত। ওর মা বলেন, “ও বাড়িতে বারবার রূকের কথা বলত। ওই শো ওর দাবার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তার পরে ও দাবা খেলা দেখতে শুরু করে।' একাডেমিতে দিব্যেন্দু বড়ুয়া অনীশকে মুগ্ধ করেছে। এই প্রসঙ্গে দিব্যেন্দু বলেন, 'আমরা ওকে কিছু সমস্যা সমাধান করতে দিয়েছিলাম। ও দিব্যি করে দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কীভাবে জানলে? বলল, ইউটিউব দেখে। এত কমবয়সে এতকিছু শেখা অসম্ভব। এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা।'
দাবা দুনিয়ার সেরারা অনেকেই কিন্তু অনেক কমবয়সে দাবা খেলা শুরু করেছিলেন। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু করেন। বিশ্বনাথন আনন্দ খেলা শুরু করেন ছয় বছর বয়সে। এবছরের গোড়ার দিকে, গ্র্যান্ডমাস্টার আর বি রমেশ, যিনি প্রজ্ঞানান্ধা এবং আর বৈশালীর মতো তারকাদের তৈরি করেছেন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে একটি শিশুর দাবা শেখার আদর্শ বয়স হল চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে। তিনিও আট বছর বয়সের ঠিক আগেই খেলা শেখা শুরু করেছিলেন।
গ্র্যান্ডমাস্টার প্রভিন থিপসে আবার বলেছেন যে তিনি মনে করেন যে একটি শিশুর ৬ বছর বয়সের পরে দাবা খেলা উচিত। অনীশকে দেখে অবশ্য থিপসে তাজ্জব। তিনি বলেন, 'এতে বোঝা যায় যে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কতটা অসাধারণ। আশা করব যাতে ও সঠিক পথে হাঁটতে পারে। রেটিং একটা বড় সমস্যা। শিশুরা রেটিং বজায় রাখতে চায়। অনেক খেলোয়াড় রেটিং হারানোর ভয়ে দাবা খেলাই বন্ধ করে দিয়েছে।'
আরও পড়ুন- ভারতের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ১১-য় চমকের পর চমক! ওয়ার্নারের বদলি হিসাবে অভিষেক হচ্ছে এই তারকার
বড়ুয়া এসব সম্পর্কে বলেছেন, 'আমি ওকে এবং ওর বাবা-মাকে বলেছি যে রেটিং নিয়ে ভাববেন না। ওকে স্বাধীনভাবে খেলতে দিন। আমরা এই সব নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের অভিভাবকদের পরামর্শ দিই।' এই ব্যাপারে অনীশের মা বলেছেন, 'আমরা ওকে জোর দেব না। ও যা ঠিক করবে, তাই করবে।'
READ THE FULL ARTICLE IN ENGLISH