Mohammed Shami in Bengal vs Madhya Pradesh Ranji Trophy: গত একদিনের বিশ্বকাপের পর থেকেই চোটের জন্য জাতীয় দলের বাইরে। সেখান থেকে ২২ গজের দুনিয়ায় ফিরে আসার লড়াইয়ে চেষ্টার কসুর করেননি মহম্মদ শামি। এজন্য খালি পায়ে কাদায় পর্যন্ত দৌড়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই বোলার। কোচ মহম্মদ বদরুদ্দিন কাছ থেকে দেখেছেন শামির সেই ফিরে আসার লড়াই। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে ফিরে আসার চেষ্টা চালিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। বাংলার বোলার ইতিমধ্যেই রঞ্জি ট্রফিতে খেলছেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে এখন জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ বিসিসিআই (BCCI) মহম্মদ শামির ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। সেখানে স্পষ্ট যে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজ হারের (০-৩ ব্যবধানে) সময় ভারত শামিকে ঠিক কতটা মিস করেছে। ১৭ বলের স্পেলের এই ক্লিপে ৩৪ বছর বয়সি শামির সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরা হয়েছে। একবছর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা শামিকে নিয়ে এত আলোচনার কারণ, এই বোলার ইন্দোরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির খেলায় বাংলার হয়ে চার উইকেট নিয়েছেন।
শামির বোলিংয়ের স্ট্যান্ডআউট বৈশিষ্ট্য তাঁর সিম। তাঁর নিপ-ব্যাকার তিক্ষ্ণ, আউটসুইঙ্গার মারাত্মক। তাঁর শিকারের মধ্যে তিন জন ব্যাটার হলেন— সাংরাশ জৈন, কুমার কার্তিকেয় ও কুলবন্ত খেজরোলিয়া। শামির কবজির অনবদ্য মোচড় অন্যান্য পেসারদের কাছে রীতিমতো ঈর্ষার ব্যাপার। গত একদশকে ভারতের সবচেয়ে ভয়ংকর বোলারদের মধ্যে তিনি একজন। ঘরোয়া উইকেটের স্পিন-বান্ধব পরিস্থিতিতেও তিনি পেস বোলিংয়ে অনবদ্য। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত, শামি ভারতের হয়ে ২১টি টেস্ট খেলে ২২.১০ গড় রেখে ৭৬ উইকেট নিয়েছেন।
শামির ছেলেবেলার কোচ মহাম্মদ বদরুদ্দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আমি ওঁর বোলিং ক্লিপ দেখেছি। একবছর পর ও বোলিং করছে বলে মনে হয়নি। আপনি শিল্পীর থেকে শিল্প কাড়তে পারবেন না। ও এই মুহূর্তটির জন্য খুব ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করছিল।' গত বছর একদিনের বিশ্বকাপে গোড়ালিতে চোটের পর শামির অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এমাসের শুরুতে, তিনি ফোলা হাঁটুর জন্য অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে বাদ পড়েন। তাঁকে ১৮ সদস্যের ভারতীয় স্কোয়াডে রাখা হয়নি। তবে, কোচ বদরুদ্দিন আশাবাদী, শামি যে কোনও সময় জাতীয় দলে ডাক পাবেন। তিনি অ্যাডিলেড (দ্বিতীয়) টেস্ট-এর পর ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন বলেই আশা কোচ বদরুদ্দিনের। তিনি বলেন, 'শামি ইতিমধ্যেই তাঁর ফিটনেস প্রমাণ করেছেন, উইকেট নিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন।'
এটাই ছিল রঞ্জি মরশুমের প্রথমংশের শেষ রঞ্জি ট্রফি খেলা। সৈয়দ মুশতাক আলি টি২০ ট্রফি ২৩ নভেম্বর শুরু হবে। বদরুদ্দিন মনে করেন যে, ঘরোয়া টি২০ টুর্নামেন্টেও শামি বাংলার হয়ে খেলতে পারেন। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, 'ও সৈয়দ মুশতাক আলিতে খেলতে চায়। তবে সেটা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কী চায়, তার ওপর নির্ভর করছে। ওকে ফিটনেস প্রমাণ করতে বলা হয়েছিল। ও ১৯ ওভারের স্পেলে দেখিয়েছে যে ওর বোলিংয়ের ধারে মরিচা পড়েনি। শামির বোলিংয়ে একটা ছন্দ আছে। ও যত বেশি বল করবে, তত ভালো পারফরম্যান্স আসবে। তবে, সবটাই টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশের ওপর নির্ভর করছে।'
আরও পড়ুন- ১ ইনিংসেই ১০ উইকেট! কুম্বলের সেই ঐতিহাসিক রেকর্ডে ফের এক ভারতীয়, তছনছ ইতিহাস
শামির ফিরে আসার লড়াই নিয়েও মুখ খুলেছে বদরুদ্দিন। তিনি বলেছেন, 'হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পরে ও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। বয়সের জন্য রিহ্যাবে বেশি সময় লেগেছে। তিনি এই সময় ও নিজেকে আরও পরিণত করেছে। বারবার হতাশ হয়ে পড়ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু, সেখান থেকে বাদ পড়ার পর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করছিল। এতদিন খেলতে না পারলে, এই প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই আসবে। ও আমার অনেক পুরোনো ছাত্র। একশোভাগ সুস্থ হয়ে এবার ফিরে আসতে চেয়েছিল। আঘাত লুকিয়ে খেলতে চায়নি। ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি ওঁকে সবুজ সংকেত দেওয়ার পর আলিনগর, সহসপুরের বাড়িতে ফিরেছিল। ওখানে কাদায় খালি পায়ে দৌড়েছে। এটাই ছিল ওঁর নিজের ফিটনেস পরীক্ষার কায়দা। শামি যে পরিশ্রম করেছে, এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ও একবছর খেলতে পারেনি। কিন্তু, এখন এতটা ফিট যে আগামী তিন বছর খেলতে পারবে।'