ম্যাচ শুরুর আগেই বিগ স্ক্রিনে দেখা গিয়েছিল শার্দূল ঠাকুরের মুখ। তখনই স্টেডিয়ামে গুঞ্জন উঠে যায় অশ্বিনের অনুপস্থিতিতে স্লো ঢিমেতালের পিচে কুলদীপ-জাদেজা মিডল ওভারে কীভাবে পাক ব্যাটিং অর্ডারকে থামাবেন? ম্যাচে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন দুই স্পিনার।
জাদেজা প্ৰথম ওভারে আক্রমণে এসেই ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন। রিজওয়ান-কে চমকে দিয়ে প্যাডে আছড়ে ফেলা। যাতে আম্পায়ার-ও আউটের নির্দেশ দিতে বাধ্য হলেন। পরে ডিআরএস নিয়ে কোনওরকমে বাঁচলেন মহম্মদ রিজওয়ান। স্লো পিচে কুলদীপ-জাদেজার লক্ষ্য ছিল একটাই, লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলা পাক ব্যাটারদের। লুপ, ফ্লাইটের প্রলোভন নয়, ডিপিং বলে শর্ট কভারের হাতে ক্যাচ তোলার প্রচেষ্টা নয়, বল টার্ন করিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করা নয়- স্রেফ লেগ বিফোরের জন্য অনবরত চেষ্টা করে যাওয়া। এই ছকেই বাজিমাত।
ওয়ার্ল্ড কাপের ওপেনিং ম্যাচে এই ছকেই ইংল্যান্ড বধ করেছিল নিউজিল্যান্ড। চড়া রোদে পোড়া পিচে কিউই বোলাররা স্রেফ স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল কোনও বল যদি স্কিড করে যায়। ইংল্যান্ড এই স্ট্র্যাটেজি সামলাতে পারেনি। পারল না পাকিস্তানও।
১৪তম ওভারে জাদেজার প্ৰথম বল আদতে অনেকটা টার্ন করেছিল। মনে করিয়ে দিয়েছিল চেন্নাইয়ের পিচকে। তবে সেই প্রলোভনে নিজেদের কৌশল থেকে সরে আসেননি ভারতীয় স্পিনাররা। রিজওয়ান সুইপ খেলে এই অস্ত্রের মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন। তবে জাদেজার বল ব্যাটের ফাঁক দিয়ে প্যাডে লাগতে সময় নেয়নি। যদিও অল্পের জন্য বেঁচে যান রিজওয়ান। তবে জাদেজাদের মারণাস্ত্র কী হতে চলেছে বাকি ম্যাচে, আভাস দিয়ে যায় সেই ওভার।
শুরু হল যেভাবে:
প্ৰথম ওভার থেকেই জাদেজার স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বলে স্কিড করানোর চেষ্টা করে গেলেন। জাদেজা চাইছিলেন রিজওয়ান-বাবররা ব্যাকফুটে ডিফেন্সিভ খেলতে অথবা সুইপ খেলুক। ঘটনা হল, জাদেজা-কুলদীপদের বেশ কিছু সময় ধরে আটকে দিতে পেরেছিলেন বাবর-রিজওয়ানরা।
কুলদীপ বড় টার্ন পাচ্ছিলেন না। তবে ঠাসা কোনে বল ফেলে যাচ্ছিলেন। কখনও গুগলি করছিলেন। পাক ব্যাটারদের পুশ করতে বাধ্য করছিলেন। ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ দেখিয়ে দিয়েছিল ফ্লাডলাইটে খেলার সময় বল দারুণভাবে ব্যাটে আসে। ভারত অশ্বিনকে না খেলিয়ে কিছুটা সুবিধাই করে দিয়েছিল। ৩০ ওভার নয়, ২০ ওভার স্পিন সামলানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল ভারত।
প্ৰথম ধাক্কা খেয়েছিলেন রিজওয়ান। ২৩তম ওভারে কুলদীপকে সুইপ করে, স্কুপ করে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যান। লেগ বিফোরের ঝুঁকি নিয়েই রিজওয়ান শট খেলতে বাধ্য হচ্ছিলেন। ২৪ তম ওভারে জাদেজার স্কিড করা বল প্রায় আছড়ে পড়েছিল বাবরের প্যাডে। তবে পাক ক্যাপ্টেন একদম শেষ মুহূর্তে ব্যাট নামিয়ে বিপদ এড়ান। পরের ওভারে কুলদীপকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের আবেদন শুনতে হয় বাবরকে। তবে ডিআরএস আম্পায়ারের নট আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
তবে কুলদীপ-জাদেজা বেপরোয়া হয়ে যাননি এরপরেও। ওভার গড়াতে থাকে। সিরাজ যখন ক্রস সিমে হার্ড লেন্থে বল করে বাবরকে আউট করেন, তখনই যেন ফ্লাডগেট খুলে যায়। কুলদীপ ৩৩ ওভারেই জোড়া শিকার করেন।
সাউদ শাকিল কার্যত নির্বাক ভঙ্গিতে আউট হলেন। লুপি বল ল্যান্ড করেছিল লেগ এবং মিডল স্ট্যাম্পের মাঝামাঝি। লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দিয়ে আউট হয়ে গেলেন। ইফতিকার আহমেদ অনেক অভিজ্ঞ। চাপ শুষে খেলার ক্ষমতা রয়েছে। টেম্পারমেন্টও ভালো। তবে দিনটাই যে তাঁর ছিল না। টিপিক্যাল এক কুলদীপের বলে আউট হতে হল তাঁকে। বাইরের বল টেনে এনে কুলদীপের শিকার ইফতিকার।
এরপরে যা হওয়ার সেটাই হল। হঠাৎ করেই প্যানিক বাটন প্রেস করে ফেললেন পাক ব্যাটাররা। যাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পাক লাইন আপ। অ-উপমহাদেশীয় বাইরের দলগুলোর মত একের পর এক উইকেট খোঁয়া গেল সুইপ শট খেলতে গিয়ে। পাক লোয়ার অর্ডার ধ্বংস করলেন জসপ্রীত বুমরা। স্লোয়ার, লেগ কাটারে পাক ব্যাটিংয়ের পূর্ণচ্ছেদ ফেলে দিলেন তারকা পেসার। এমন পিচে অশ্বিনকে না খেলানো রীতিমত অপরাধ। তবে সেই ভুল বোঝাই গেল না কুলদীপ-জাদেজাদের দাপটে।