পারল না ভারত। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর হল না। পদ্মাপাড়ের এগারো বাঙালির দাপটে হেভিওয়েট ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটল। স্কোরবোর্ডে ১৭৭ তোলার পরে বাংলাদেশ সেই রান অতিক্রম করল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে। ৪৭ বল বাকি থাকতে। ম্যাচের শেষলগ্নে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ ছিল কিছুক্ষণ। অষ্টম উইকেটে দাত চাপা লড়াই চালাচ্ছিলেন আকবল ও রাকিবুল হাসান। তবে খেলা পুনরায় শুরুর আগেই জানিয়ে দেওয়া হল, ডার্কওয়ার্থ লুইস নিয়মে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
ব্যাটে যশস্বীর দুরন্ত ইনিংস এবং রবি বিষ্ণোইয়ের দুর্ধর্ষ স্পেল সত্ত্বেও ভারতকে এগারো বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হল।
Incredible scenes as Bangladesh celebrate their first ever U19 World Cup title!!#U19CWC | #INDvBAN | #FutureStars pic.twitter.com/OI2PXU7Eqw
— Cricket World Cup (@cricketworldcup) February 9, 2020
কপিল দেবদের ১৯৮৩-র স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল ভারত। তফাত ছিল একটাই ভারত সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আন্ডারডগ হয়ে ট্রফি জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। এদিন অবশ্য ইন্ডিয়া ছিল ফেভারিট। সিনিয়র ও জুনিয়র পর্যায়ের দুই বিশ্বকাপের মেলবন্ধন আর ঘটল না। পৃথক হয়েই রয়ে গেলে।
আরও পড়ুন ধোনির মতোই ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশার! এই তারকাকেই ফাইনালে ভয় ভারতের
পিচ আঠালো। বল পড়ে ব্য়াটে ঠিকমতো আসছে না। এমন পিচেই ভারতের ১৭৭ রানের টার্গেটের রিংটোন সেট করে দিয়েছিলেন পারভেজ হোসান আর তানজিদ হাসান। তবে মাঝের ওভারে রবি বিষ্ণোইয়ের অসাধারণ এক স্পেল এলোমেলো করে দিয়েছিল বাংলাদেশের কাপ জয়ের স্বপ্ন। ওপেনিং পার্টনারশিপে হাফসেঞ্চুরি ওঠার পরে প্রথমে বিষ্ণোই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তানজিদকে।
EPIC scenes after Bangladesh secure their historic #U19CWC win!
Follow LIVE here ????https://t.co/4hTEdJn0qb pic.twitter.com/W6J0Pzh9H4
— Cricket World Cup (@cricketworldcup) February 9, 2020
বিনা উইকেটে ৫০ থেকে একসময় বাংলাদেশ বিষ্ণোইয়ের বিষাক্ত স্পিনের ছোবলে ৮৫/৫ ও ১০২/৬ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বেপথু হয়ে পড়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফেরে অধিনায়ক আকবল আলি ও পারভেজ হাসান ইমনের পার্টনারশিপে ভর করে। মাঝে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন পারভেজ।
তবে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে চোট পাওয়া সত্ত্বেও ক্রিজে এসে আকবর আলির সঙ্গে অমূল্য ৪১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান। চোট পাওয়া পারভেজকে হাফসেঞ্চুরির ঠিক আগে আউট করে বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্য়ে আতঙ্কের সঞ্চার করেছিলেন জয়সোয়াল। তবে এতেও শেষরক্ষা হয়নি ভারতের।
অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক আকবর আলি (৪৩) রাকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের সীমান্ত পার করে দেন। ভারতের হারে ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে থাকলেন যশস্বী জয়সোয়াল ও রবি বিষ্ণোই। বিষ্ণোই শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ৩ মেডেন সহ ৩০ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট দখল করেন।
আরও পড়ুন রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী, সৌরভের একরত্তি সানা এখন আঠারো
তার আগে টসে জিতে প্রথমে ভারতে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। শুরু থেকেই বাংলাদেশি পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে হাসফাঁস করছিলেন দুই ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ও দিব্যাংশ সাক্সেনা। প্রথম দুই ওভারই বাংলাদেশের পেসারদের সামনে যশস্বীরা কোনও রান তুলতে পারেননি স্কোরবোর্ডে। প্রথম ছয় ওভারে উঠেছিল মাত্র ৮ রান। দিব্যাংশ সাক্সেনা আউট হলেন মাত্র ২ রানে। সপ্তম ওভারের মাথায়।
অনন্ত চাপের সেই পরিস্থিতি থেকেই যশস্বী জয়সওয়াল টানলেন দলকে। ৮৯ বলে পূর্ণ করলেন হাফ-সেঞ্চুরি। চলতি টুর্নামেন্টে স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন তিনি। এর আগে চারবার হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। পঞ্চমবারও করে ফেললেন বিশ্বকাপের ফাইনালে।
আরও পড়ুন ভারতের বিরুদ্ধে বারেবারেই হার! বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিশোধের স্বপ্ন বাংলাদেশের
ব্যক্তিগত ৮৮ রানে তাঁকে তানজিদ হাসানের কাছে ক্যাচ তুলে যশস্বীকে আউট করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। এরপরে বেশিক্ষণ টেকেননি ক্রিজে টিকে যাওয়া তিলক ভার্মা ও অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ। ১১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। সেখান থেকে যখন মনে করা হচ্ছিল ভারত ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে, তারপরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের অবশিষ্টাংশ।
১৫৬ থেকে ১৭৭- ২১ রানের মধ্য়ে ভারত শেষ সাত উইকেট হারায়।