কেপটাউনে টস হেরে বল হাতে নিতেই নতুন পরিকল্পনা ছকে নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। আর, বুধবার তাতেই এল সাফল্য। মহম্মদ সিরাজ, জসপ্রিত বুমরাহরা ভেস্তে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বড় রান করার চেষ্টা। ভারতের সেই পাতা ফাঁদে পা-ও দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ১০ ওভারে ১৫ রানে ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়া স্কোয়াড। ভারতের টার্গেট ছিল, বিপক্ষের বাঁ-হাতি খেলোয়াড়দের লেগ সাইড ধরে আক্রমণ।
আর শর্ট লেগে ফিল্ডার রেখে বিপক্ষকে আটকে দেওয়া। অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজেই ছিলেন শর্ট লেগ স্কোয়ারে। অর্থাৎ, দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের বড় শট খেলতে না-দেওয়া। বুমরাহ সেঞ্চুরিয়নে এমনটাই করার চেষ্টা করেছিলেন। সেটাই কেপটাউনে করে দেখালেন পূর্ণমাত্রায়। জুটির সঙ্গী হিসেব অনবদ্য ভূমিকা নিলেন মহম্মদ সিরাজ। এ যেন বিপক্ষকে আহ্বান করা, 'যাও, পারলে বন্ধ্যা অফ সাইডে একটা জাঁকিয়ে শট মারার চেষ্টা কর।'
এলগারের বাবা রিচার্ড এই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনি একটা বিশেষ চিহ্ন দেখে বোঝেন যে ছেলে সেদিন ভালো খেলবে কি না! রিচার্ড জানিয়েছিলেন, স্কোয়ার লেগের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি রান এলেই তিনি খুশি হয়ে যান। অদ্ভূত হলেও সেদিন তিনি বুঝতে পারেন যে ছেলে ওই দিন ভালো খেলবে। তাঁর ছেলের ওই দিন খেলার প্রতি গভীর মনোযোগ রয়েছে। তাঁর শারীরিক ভারসাম্য ঠিক আছে। আর, বড় রান উঠবে। বুধবারও সেই সুযোগটা এসেছিল। কিন্তু, সেঞ্চুরিয়নের বিগ স্কোরার কিছুই করতে পারেননি। উলটে একটা বাইরের বলকে মারতে গিয়ে উইকেট হারান দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন- সিরাজ একাই ৬, দক্ষিণ আফ্রিকা বান্ডিল ৫৫-এ! অপমানের বদলায় কেপটাউনে আগুন জ্বালাল ভারতীয় বোলিং
এইডেন মার্করাম, আবার মহম্মদ সিরাজের বলের লেংথ বুঝতেই ব্যর্থ হন। সিরাজের আঁটোসাঁটো বল তাঁকে বারবার পরাজিত করে। ভারতীয় বোলারদের এই দুর্দান্ত সাফল্যের সঙ্গে সমানতালে সঙ্গত করে যাচ্ছিলেন দলের উইকেটকিপার কেএল রাহুল। বুমরাহ আবার ডান-হাতি ট্রিস্টান স্টাবসকে লেংথ মেনে বল করে আটকে দেন। শেষ পর্যন্ত স্টাবস শর্ট-লেগে রোহিতের কাছে লোপা ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। এভাবেই মাত্র ১০ ওভাবে ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সময় প্রোটিয়াদের রান ছিল মাত্র ১৫। তখনও প্রসিধ কৃষ্ণ ও মুকেশ কুমার বল হাতেই তোলেননি।
আরও পড়ুন- পাক ক্রিকেটে গৃহযুদ্ধ! টেস্টে শাহিন আফ্রিদি সরতেই বোমা ফাটানো প্রশ্ন ইউনিস-আক্রমের
টসে জিতে প্ৰথমে ব্যাটিং সহায়ক কেপটাউনে ভারতকে বল করতে পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার। তবে তিনি কি জানতেন সিরাজ মারণ-মূর্তিতে হাজির হবেন অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য। এলগারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন আইডেন মারক্রাম। মারক্রাম চতুর্থ ওভারেই ফিরে যান সিরাজের বলে। স্লিপে জয়সোয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সেই শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ভারতকে। এরপরে সিরাজ শিকার করেন ফেয়ারওয়েল টেস্টে অধিনায়কত্ব করা ডিন এলগারকে। অফসাইডে বল পাঞ্চ করতে গিয়ে উইকেটে বল টেনে আনেন তিনি।
টনি দি জর্জি সিরাজের তৃতীয় শিকার। লেগ সাইডে বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটকিপার কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মাত্র ১৫ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল।
সেই সময় ইতিমধ্যেই প্ৰথম স্পেলে টানা সাত ওভার হয়ে গিয়েছিল সিরাজের। তবে অষ্টম ওভারেও আক্রমণ থেকে রোহিত সরাননি সিরাজকে। সেই বিশ্বাসের পুরো সদ্ব্যবহার করে সিরাজ আরও দুই উইকেট তোলেন। সিরাজের বল গ্লাভসে ঠেকিয়ে স্লিপে জয়সোয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন বেডিংহ্যাম। ১৬তম ওভারের শেষ বলে সিরাজের লেগ কাটার বোকা বানিয়ে দেয় মার্কো জ্যানসেনকে। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে যিনি কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
সেই সময় ক্রিজে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফেলেছিলেন প্রোটিয়াজ উইকেটকিপার কাইল ভারান। সিরাজ টানা নবম ওভার বোলিং করতে এসে ফেরান তাঁকেও। ৩০ বলে ১৫ করে ফিরতে হয় তাঁকে।