দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫/১০ এবং ১৭৬/১০
ভারত: ১৫৩/১০ এবং ৮০/৩
India vs South Africa: মাত্র পাঁচ সেশন। এবং দেড় দিন। তাতেই কেপটাউন টেস্টের ফয়সালা হয়ে গেল। সহজ সরলভাবে ৯ উইকেটে নিউল্যান্ডসে জিতে সিরিজ ১-১ করে ফেলল টিম ইন্ডিয়া। গতকাল ২৩ উইকেট পতনের পরেই কার্যত ঠিক হয়ে গিয়েছিল। দুদিনেই ম্যাচ ফিনিশ হয়ে যাবে। সেটাই হল।
গতকাল ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এদিন দেখার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল এবং লোয়ার অর্ডার কেপটাউনের উঁচু-নিচু বাউন্সি পিচে কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে কিনা। তবে বাকি সাত উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ করল রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একা লড়াই চালিয়ে গেলেন আইডেন মারক্রাম (Aiden Markram)। দুর্ধর্ষ শতরান করে গেলেন তিনি। একশো-র ওপর স্ট্রাইক রেট নিয়ে। নিঃসন্দেহে কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে গেলেন তিনি। দলীয় ১৭৬ রানের মধ্যে তিনি একাই করলেন ১০৬। অর্থাৎ বাকি ১০ জনের সম্মিলিত অবদান ৭০ রানের। এতেই মারক্রামের ব্যাটিং শৌর্য স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: ভুল লোকের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছ! কোহলিকে মারার চেষ্টা করতেই ফুঁসে উঠলেন গাভাসকার
গতকাল সিরাজের (Mohammed Siraj) হাফডজন উইকেটের পর দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিংয়ের নেমেসিস হিসাবে আবির্ভূত হলেন বুমরা (Jasprit Bumrah)। তিনিও তুললেন ছয় উইকেট। সকালেই বেডিংহ্যাম, কাইল ভারেইন, এবং মার্কো জ্যানসেনকে প্যাভিলিয়নে পাঠান তিনি। ১১১/৭ হয়ে যাওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকা যে শেষ ৩ উইকেটে ১৭৬ পর্যন্ত টানল, তাঁর পুরো কৃতিত্বই মারক্রাম-রাবাদার জুটি। মারক্রাম ৭৩ রানের মাথায় একবার জীবন পান কেএল রাহুল সহজ ক্যাচ মিস করায়।
তারপর তিনি প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং মুকেশ কুমারের একটা স্পেলে কার্যত ওয়ানডের মেজাজে ব্যাট করে যান। শতরান পূর্ণও করেন। রাবাদা অন্যপ্রান্তে স্রেফ সঙ্গ দিচ্ছিলেন তারকাকে। দুজনে অষ্টম উইকেটে ৬১ রান যোগ করে ভারতের কপালের চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন।
তবে সিরাজ আক্রমণে আসতেই খেল খতম। মারক্রাম সিরাজের বলের লেন্থ বুঝতে না পেরে উঁচুতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। রোহিত ক্যাচ তালুবন্দি করেই আগ্রাসী সেলিব্রেশনে মেতে ওঠেন। স্পষ্ট হয়ে যায়, কতটা দুশ্চিন্তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রোটিয়াজ ওপেনার। এরপরে দক্ষিণ আফ্রিকা খতম মাত্র ১৭৬-এ।
৭৯ রানের টার্গেট চেজ করা এরপরে সমস্যা হয়নি ভারতের। জয়সোয়াল, শুভমান গিল এবং বিরাট কোহলির উইকেট হারিয়েই ভারত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। সাত উইকেটে এল দুর্ধর্ষ জয়।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে এটাই স্বল্পতম টেস্ট ম্যাচ। পাঁচ সেশনে দুই দলের চার ইনিংস মিলিয়ে খেলা গড়াল মাত্র ১০৭ ওভার। নিউল্যান্ডসের কেপটাউন দেখল ৩৩ উইকেটের পতন।
দেড় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট ম্যাচ জিতেও আক্ষেপ অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। এখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয় অধরা থাকল। যে সিরিজের ভারতীয় ক্রিকেট মহলে নাম হয়ে গিয়েছে 'দ্য লাস্ট ফ্রন্টিয়ার'। তবে বৃহস্পতিবার ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চম টেস্ট জিতল (জোবার্গ - ২০০৬, ২০০৮), ডারবান (২০১০), সেঞ্চুরিয়ন (২০১৮) এবং কেপটাউন (২০২৩)।
টসে জিতে কেপটাউনে প্ৰথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগার। তবে মাত্র ৫৫ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরাজের টানা নয় ওভারেই স্পেলের ধকল সামলাতে পারেনি প্রোটিয়াজরা। জবাবে ভারত ব্যাট করতে নেমে একসময় ১৫৩/৪ ছিল লাঞ্চ ব্রেকের সময়।
তবে তৃতীয় সেশনের প্ৰথম এগারো বলেই ম্যাচে মোচড় হাজির হয়ে যায়। ভারত স্কোরবোর্ডে আর কোনও রান যোগ না করতে পেরে ১৫৩-তেই অলআউট হয়ে যায়। ৯৮ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে ৩ উইকেট হারায়। অধিনায়ক ডিন এলগার কেরিয়ারের শেষ টেস্টে একই দিনে দুবার আউট হলেন। এমন ঘটনাও বিরল।
বিরলতম টেস্ট জিতেই রেকর্ড বইয়ে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিল রোহিতের টিম ইন্ডিয়া। আক্ষেপ একটাই সিরিজ জয় আর হল না।