Greg Chappell vs Sourav Ganguly: ভারতের প্রাক্তন প্রধান কোচ থাকাকালীন গ্রেগ চ্যাপেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এবার নতুন তথ্য ফাঁস হল। যাতে চ্যাপেলের দুষ্কর্ম আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। অভিযোগ উঠল, ভারতীয় দলে চ্যাপেল-কুম্বলে যুগ চলাকালীন সিনিয়র খেলোয়াড়দের 'ফ্রি হ্যান্ড' এবং 'সম্মান' দেওয়া হত না। চ্যাপেলের জমানায় ২০০৭ সালে ভারত একদিনের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছিল। বাংলাদেশের কাছে শোচনীয়ভাবে পর্যন্ত হেরেছিল। শুধু তাই নয়, চ্যাপেল এসে ভারতের অধিনায়ক পদ থেকে সৌরভ গাঙ্গুলিকে সরিয়ে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
২০০৭ একদিনের বিশ্বকাপের পর চ্যাপেল পদত্যাগ করেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার জন রাইটের জায়গায় ভারতের কোচ হয়েছিলেন। রাইটের জমানায় টিম ইন্ডিয়া বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছিল। ১৯৮৩ সালের একদিনের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য সন্দীপ পাটিল মনে করেন যে রাইটের অধীনে ভারতের সাফল্যের মূল কারণ, রাইট সিনিয়রদের খোলাহাতে খেলতে দিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ওপর ছড়ি ঘোরাতেন না।
তাঁর আত্মজীবনী 'বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ'-এ রাইটকে 'ভারতের একজন আদর্শ কোচ' হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন পাটিল। এই বই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পাটিল লিখেছেন, '২০০০ সাল থেকে, ভারতে বিদেশি কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফরা কাজ করছেন। এতে ভারতের প্রচুর লাভ হয়েছে। কারণ ভারতের বিদেশে রেকর্ড ক্রমশ ভালো হয়েছে। এই উন্নতি শুরু হয়েছিল জন রাইট ভারতের প্রথম বিদেশি কোচ হওয়ার পর থেকে। আমি মনে করি জন ভারতের জন্য আদর্শ কোচ ছিলেন। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী, ভদ্র, সদাচারী, সর্বদা নিজের সীমার মধ্যে থাকতেন। সৌরভ গাঙ্গুলির ছায়ায় থাকতে পেরে খুশিই ছিলেন। এসবের পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যম থেকেও দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে এত ভালোভাবে পরিচালনা করতেন যে, তাঁকে নিয়ে খুব কমই খবর হত। গ্রেগ চ্যাপেলের বছরগুলোয় ঠিক তার উলটোটা ঘটেছিল।'
পাটিল লিখেছেন, 'চ্যাপেল প্রতিদিন খবরে থাকতেন। একজন কোচের জন্য প্রথমে সেই নির্দিষ্ট বোর্ডের নীতি, বোর্ডের সদস্যদের চিন্তাভাবনা এবং সভাপতিকে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি এবং অবশ্যই ক্যাপ্টেন আর দলের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক থাকা উচিত। জন সেটাই দুর্দান্তভাবে করেছিলেন। তাঁর জমানায় দলে সিনিয়র জুনিয়র ভেদাভেদ ছিল না। টিম ইন্ডিয়া একটা দল হিসেবে খেলত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত সিনিয়ররা কোনও না কোনওভাবে একজন নেতা। তিনি তাঁদের সম্মান দিতেন। ফ্রি হ্যান্ড দিতেন। আমার মনে হয়, সেটা অনিল কুম্বলে আর গ্রেগ চ্যাপেল করেননি।'
প্রাক্তন ভারতীয় কোচ পাটিল তাঁর বইয়ে অভিযোগ করেছেন, চ্যাপেলের 'ব্যক্তিত্ব', 'আক্রমণাত্মক' মেজাজ ভারতীয় ড্রেসিংরুমের উপযুক্ত ছিল না। তিনি সমগ্র ভারতীয় ক্রিকেট ব্যবস্থাকে বদলাতে চেয়েছিলেন। গ্রেগ কঠিন মানসিকতার লোক। খুব আক্রমণাত্মক মেজাজের। যেই জগমোহন ডালমিয়া বলেছিলেন যে আপনাকে খোলা হাতে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছি, অমনি তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি রাতারাতি সবকিছু বদলে দিতে পারেন। জন অপেক্ষা করেছিলেন। সিস্টেমটা শিখেছিলেন। গ্রেগ পুরো সিস্টেম, পুরো চিন্তাভাবনা, নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই বদলে দিতে চেয়েছিলেন।'
পাটিল লিখেছেন, 'তিনি ভারতীয় দলে নানা বদল এনেছিলেন। গাঙ্গুলির থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব দ্রাবিড় নিয়েছিলেন। দ্রাবিড়কে খোলামনে কাজ করতে দেননি। ইরফান পাঠানকে ওপরে খেলিয়েছেন। সিনিয়ররা সাধারণত নিজের জায়গা বদলাতে চান না। তা সে শচীন তেণ্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় বা বীরেন্দ্র শেওয়াগ- যে ই হোক না কেন। অনেক ভারতীয় খেলোয়াড়ই সেই সময়ের সহকারি কোচ ইয়ান ফ্রেজারকে পছন্দ করতেন না। ফ্রেজার ছিলেন চ্যাপেল জমানায় ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সমস্যা। গ্রেগ ভারতীয় ক্রিকেট অস্ট্রেলীয় সংস্কৃতি চালু করতে চেয়েছিলেন। তিনি সেজন্য যে সময় লাগত, সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেটকে দেননি। উলটে যাঁদের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হয়নি, তিনি দলের সেই সিনিয়রদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন।'
আরও পড়ুন- অন্যায় টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে! অজি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত দেখে ছিঃছিঃ করছে বিশ্ব ক্রিকেট, দেখুন ভিডিও
নিজের বইয়ে পাটিল আরও লিখেছেন, 'সৌরভ এমন লোক নয় যে কথা শুনে উঠে দৌড়তে শুরু করবে। তাঁকে এজন্য সময় দিতে হবে। আমি মনে করি, গ্রেগ সিনিয়রদের সঙ্গে ভুল আচরণ করেছেন। যদিও কয়েকজন সিনিয়র এখনও তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। যেমন, কুম্বলের মত অনেকেই এখনও চুপ আছেন। দ্রাবিড়ও কিছু বলেননি। মজার ব্যাপার হল, গাঙ্গুলিই তাঁকে এনেছিলেন। কিন্তু, সেই গাঙ্গুলিকেই তাড়িয়েছিলেন চ্যাপেল।'