মুম্বইয়ের বদলা এল রাজকোটে। দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ ১-১ করল ভারত। ব্যাটে বলে পাঁচতারা পারফরম্যান্সে এদিন অজি বধ। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ৩৪০ রান। টি২০-র যুগে এই রান অনতিক্রম্য না হলেও, চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বশ্যতা মানল অজি ব্রিগেড। পুরো ৫০ ওভার খেলার আগেই অস্ট্রেলিয়া থেমে গেল ৩০১ রানে। ভারতের জয় এল ৩৯ রানে।
স্কোরবোর্ডে প্রায় সাড়ে তিনশো রানের লক্ষ্য। ওয়ার্নার-ফিঞ্চের থেকে ভাল শুরু আশা করেছিল অস্ট্রেলীয় বাহিনী। তবে মহম্মদ শামি ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে যায়। শামির বলে চলতি সেরা ক্যাচ নিলেন মণীশ পাণ্ডে। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে এক হাতে ক্যাচ তালুবন্দি করে যে ক্যাচ নিলেন মণীশ, তা জন্টিকে স্মরণ করায়।
অবিশ্বাস্য ক্যাচে ওয়ার্নার ফিরে যাওয়ার পরে ফিঞ্চের সঙ্গে স্মিথ টানছিলেন অজি ইনিংসকে। তবে ফের একবার ঝটকা দেন জাদেজা। দুরন্ত ক্ষিপ্রতায় লোকেশ রাহুল স্ট্যাম্প আউট করে দেন ফিঞ্চকে। স্কোরবোর্ডে ১০০ উঠতে না উঠতেই ফিরে গিয়েছিলেন দুই অজি অধিনায়ক।
স্মিথ-লাবুশানে জুটিতেও স্বপ্ন দেখছিল অজিরা। স্মিথ যে যে কোনও ফর্ম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তা বারেবারেই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন রাজকোটে। তিন নম্বর পার্টনারশিপে ৯৬ রান তুলেও ফেলেছিলেন। ম্যাচ যখন ক্রমশই ভারতের হাতের থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, সেই সময়েই ত্রাতা জাদেজা। হাফসেঞ্চুরির আগে ফিরিয়ে দিলেন লাবুশানেকে।
লাবুশানে ফিরে গেলেও ক্রিজে একা কুম্ভ হয়ে লড়ছিলেন স্মিথ। আস্কিং রেট বাড়তে থাকলেও ক্রিজের একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন তিনি। তবে অস্ট্রেলিয়ার কফিনে শেষ পেরেক পোঁতেন কুলদীপ। ঠিক সেঞ্চুরির ঠিক আগে স্মিথকে বোল্ড করে দেন।
এরপরে অস্ট্রেলিয়ার জেতার কথা ছিল না। তা হয়ওনি। বাকি ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে ৩০১ তুললেও ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া হেরে গিয়েছিল অনেক আগেই। ব্য়াটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দলগত সাফল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন ভারতীয় বোলাররা। সামি একা নেন ৩ উইকেট। নভদীপ সাইনি, জাদেজা এবং কুলদীপ প্রত্যেকে ২টো করে উইকেট দখল করেন।
আরও পড়ুন বোর্ডের চুক্তি থেকে বাদ ধোনি! বড় ধাক্কায় অবসরের পথে মাহি
প্রথম ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হয়েছিল শুরুতে। টসে হেরে বসেছিলেন কোহলি শুরুতেই। ফিঞ্চ টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে দুটো পরিবর্তন ঘটিয়ে এদিন খেলতে নামছে ভারত। কনকাশনে ছিটকে যাওয়া ঋষভ পন্থের বদলে প্রথম একাদশে এদিন রাখা হয় মণীশ পাণ্ডেকে। পাশাপাশি শার্দুল ঠাকুরকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে নভদীপ সাইনিকে।
আগের ম্যাচে ব্যাটিং পজিশন নিয়ে হারাকিরি করেছিলেন ক্যাপ্টেন কোহলি। সেই ভুল শুধরে নিজের তিন নম্বরেই ব্যাট করতে নামলেন কিং কোহলি। ৭৬ বলে ঝকঝকে ৭৮ রানের ইনিংসও খেললেন তিনি। অন্যদিকে, ৫ নম্বরে ব্য়াট করতে রান পেলেন রাহুলও (৫২ বলে ৮০)। তবে তার আগে ম্যাচের রিংটোন সেট করে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা।
প্রথম উইকেটের জুটিতেই ৮১ রান তুলে ধাওয়ান-রোহিতরা ভাল শুরুয়াত উপহার দেন। রোহিত এরপরে লেগবিফোর হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেও বিরাট-ধাওয়ান সেই জুটিকেই টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুই তারকা আরও যোগ করেন ১০৩ রান। শ্রেয়স আইয়ার এদিনও ব্যর্থ। ৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
শ্রেয়স ফিরে যাওয়ার পরে কোহলি ইনিংসের হাল ধরেন লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। চতুর্থ উইকেটে বিরাট-রাহুল জুটিতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আরও ৭৮ রান। নিশ্চিত শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন কোহলি। তবে কোহলি-ঘাতক এদিনই জাম্পা। জাম্পার বলে ছক্কা হাকাতে গিয়েছিলেন কোহলি। স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় ঘটে তাঁর। এই নিয়ে ওয়ানডেতে কোহলিকে সাতবার আউট করলেন অজি স্পিনার।
আরও পড়ুন মধুচক্রের ফাঁদে ভারতীয় ক্রিকেটার, নিশানায় সুন্দরী অভিনেত্রী
ভারত একাদশ- শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার, মণীশ পাণ্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা, নভদীপ সাইনি, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ সামি, জসপ্রীত বুমরা
অস্ট্রেলিয়া একাদশ- ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, মার্নাস লাবুশানে, স্টিভ স্মিথ, অ্যালেক্স ক্যারে, অ্যাস্টন টার্নার, অ্যাস্টন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, কেন রিচার্ডসন এবং অ্য়াডাম জাম্পা।