চিন্নাস্বামীতে দাদাগিরি ভারতের। টার্গেট ছিল মাত্র ২৮৭। ৪৭.৩ ওভারে ১৫ বল বাকি থাকতেই স্কোরবোর্ডে সেই রান তুলে দিয়ে ম্যাচ জেতার সঙ্গে সিরিজও দখল করে নিল টিম ইন্ডিয়া। ৭ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের সিরিজ জয় ২-১ ব্যবধানে।
একা হিটম্যানে রক্ষা নেই, সঙ্গী আবার সুপারম্যান। ভারতের দুই সেরা তারকা ফর্মে থাকলে কী হয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেল অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা শুরু করলেন। ১১৯ রানে চিন্নাস্বামী মাতিয়ে দিলেন। আর কোহলি শেষ করলেন। ফিনিশিং টাচ যাকে বলে আর কী! ব্যাটে রোহিত-কোহলিদের মতো বল হাতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স শামির। এদিনও। অন্যদিকে, স্মিথ দুরন্ত শতরান করলেও এদিন ট্র্যাজিক নায়কের শিরোপা নিয়ে মাঠ ছাড়লেন।
শিখর ধাওয়ান কাঁধে চোট পেয়ে ব্যাট করতে পারবেন না, ম্যাচের মাঝপথেই জেনে গিয়েছিল ভারত। অর্থাৎ নয় জনে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট পেরোতে হত ভারতকে। এত টেনশনের অবশ্য কোনও সুযোগই দিলেন না রোহিত-কোহলিরা। মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট সহজে তুলে দিয়ে ভারত যেন জানিয়ে দিল, বিশ্বক্রিকেটের বস কে!
আগের ম্যাচে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে রান পাওয়া লোকেশ রাহুলকে ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে পাঠানো হল। ওপেনিং পার্টনারশিপে রোহিত-রাহুল ৬৯ রান তুলে দিয়েছিলেন। রাহুল অবশ্য বেশি রান করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ১৯ রানের মাথায় অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে লেগ বিফোর হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
৬৯ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পরে ক্রিজে এসেছিলেন ক্যাপ্টেন বিরাট। তারপর 'ভিনি ভিডি ভিসি'। স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডদের ক্লাবস্তরের বোলিংয়ে নামিয়ে এনে চিন্নাস্বামী শাসন করে গেলেন বিশ্বক্রিকেটের দুই মহাতারকা। স্কোরবোর্ডে ১৩৭ রান যোগ করেন দুজনে।
রোহিত যখন নিশ্চিত দেড়শো-র দিকে এগোচ্ছেন, তখন জাম্পার বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে যান হিটম্যান। ১২৮ বলে ১১৯ রানের ইনিংসে রোহিত ৮টি বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। এরপরে কোহলি-শ্রেয়স আয়ার মিলে ফিনিশ করেন।
কোহলি অবশ্য পুরোটা খেলতে পারেননি। জয়ের জন্য যখন মাত্র ১২ রান প্রয়োজন, সেই সময় হ্যাজেলউড কোহলির উইকেট নড়িয়ে দেন। ৯১ বলে ৮৯ রানের সংযমী ইনিংসে কোহলি মারেন ৮টি বাউন্ডারি। শ্রেয়স আয়ার শেষ পর্যন্ত ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
তার আগে মুম্বই, রাজকোটের ট্র্যাডিশন বজায় রেখে রবিবারেও টস জিতেছিলেন ফিঞ্চ। তবে আগের দুই ম্যাচের মতো শুরুতে বোলিং নয়, বরং ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কোহলিরা আগের ম্যাচের একাদশই অপরিবর্তিত রেখে খেলতে নেমেছিলেন। অর্থাৎ ঋষভ পন্থ ফিরলেও বাইরে বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। অস্ট্রেলিয়া আবার নিজেদের একাদশে একটি পরিবর্তন ঘটায়। কেন রিচার্ডসনের বদলে জোস হ্যাজেলউডকে খেলানো হয়।
শুরু থেকেই বিপর্যয় শুরু হয় অজিদের। মহম্মদ শামির সৌজন্যে। একাই এদিন ৪ উইকেট দখল করলেন তিনি। শুরুতে ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে প্রাথমিক ঝটকা দিয়েছিলেন শামি। অ্যারন ফিঞ্চও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। স্কোরবোর্ডে ৫০ ওঠার আগেই অস্ট্রেলিয়া দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল।
সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরান স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানে। দুই তারকা ১২৭ রানের পার্টনারশিপে অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমতো শক্ত পজিশনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরে লাবুশানে জাদেজার বলে কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে হাফসেঞ্চুরির ঠিক পরেই বিদায় নিলেও স্মিথ একাই টানতে থাকেন।
স্মিথ ছয় নম্বরে নামা অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে তিনশো রানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। তবে ফের একবার স্মিথকে ফিরিয়ে ঝটকা দেন শামি। মিড অনের উপর দিয়ে তুলে হাঁকাতে গিয়েছিলেন স্মিথ। অনবদ্য ক্যাচে শ্রেয়স আয়ার ফেরান স্মিথকে। তিনশো রান যেখানে অনায়াসে তোলা যেত, সেখানে স্মিথ আউট হয়ে যাওয়ায় গড়বড়িয়ে যায় অজিদের ইনিংস।
অজি লোয়ার অর্ডারের উপর দিয়ে বুলডোজার চালান শামি। পরপর বোল্ড করেন কামিন্স ও জাম্পাকে। শামির ৪ উইকেটের পাশাপাশি এদিন জাদেজার সংগ্রহে ২ উইকেট। বুমরা ১০ ওভারে মাত্র ৩৮ রান খরচ করলেও কোনও উইকেট পাননি।
ভারতীয় একাদশ- শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আয়ার, লোকেশ রাহুল, মণীশ পাণ্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, নভদীপ সাইনি, মহম্মদ শামি এবং জসপ্রীত বুমরা
অস্ট্রেলিয়া একাদশ- অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, মার্নাস লাবুশানে, স্টিভ স্মিথ, অ্যালেক্স ক্যারে, অ্যাস্টন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জাম্পা