মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে বিশেষ মিষ্টি। শুক্রবার সন্ধেতেই। রুনা লায়লা ঢাকা থেকে কলকাতায় পা রাখছেন। সঙ্গে থাকছে ঢাকার স্পেশ্যাল মিষ্টি। কলকাতায় আমন্ত্রণ। আর সেই আমন্ত্রণ পেয়েই প্রতীক্ষা বেড়েছিল। ঠিক করে রেখেছিলেন কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে উপহার দেবেন মিষ্টি। বুধবার রাতে ঢাকার বাড়ি থেকে ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়ে দিলেন, "দেখি কী নেওয়া যায়। ভালো মিষ্টি নিয়ে যেতে পারি।"
তারকাখচিত মঞ্চ। চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য। ইডেনের সবুজ গালিচায় দু-দেশের ক্রিকেটারদের গোলাপি যুদ্ধের প্রাক্কালে সংবর্ধনা মঞ্চে দেখা যাবে ক্রিকেট ও রাজনৈতিক জগতের 'হুজ হু'-দের। তবে তারও আগে নভেম্বরের মখমলে দুপুরে শহরে সুরের ঝড় তুলবেন কিংবদন্তি রুনা লায়লা। সুরসম্রাজ্ঞী বৃহস্পতিবারেই কলকাতায় পা রাখছেন। তার আগেই একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানিয়ে দেন, কলকাতায় আসার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন ইডেনে স্বপ্নপূরণের আমন্ত্রণ, অপেক্ষায় সৌরভের প্রিয় শান্ত
সুরের মুর্চ্ছনায় ভেসে যাওয়ার অপেক্ষায় স্বর্গোদ্যান। আর শিল্পী সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন কয়েক সপ্তাহ ধরে। ফোনে তিনি বলছিলেন, "ইডেন টেস্টের জন্য প্রাথমিকভাবে আমাকে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আমাকে জানানো হয়, গোলাপি বলের টেস্টে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এরপর সৌরভ নিজে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ফোন করেছিলেন। ওঁর আমন্ত্রণ রক্ষা না করে উপায় রয়েছে?" হেসে প্রশ্ন ছুড়ে দেন সুরের রানী।
সৌরভ নিজে জানিয়েছেন, সংবর্ধনা সভার আগে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রুনা লায়লা। সিএবি সূত্রেও জানা গিয়েছে, উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী দুটো বাংলা এবং একটি হিন্দি গান পরিবেশন করবেন। রুনা লায়লার সঙ্গে থাকবেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন, এক টেস্ট খেলেই বিদায়! ইডেনে বিকাশের যন্ত্রণার শরিক হবেন শচীন-সৌরভও
ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক বহু পুরনো। আট বছর আগে ঢাকায় ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনে রুনা লায়লার গান বাইশ গজের লড়াইয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিল। ঐতিহাসিক গোলাপি টেস্টের আবহেও তাঁর সুরের মৌতাত আমেজ সৃষ্টি করবে ক্রিকেট মননে। ক্রিকেটের মঞ্চেই বিশ্ব মাতাবেন তিনি। আরও একবার। তার আগে তিনি বলছিলেন, "ক্রিকেট খেলা সবসময়ে ফলো করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাংলাদেশের খেলা হলে মাঝে মাঝে স্কোর দেখি। বিশ্বকাপের সময় লর্ডসে গিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছি। সেই সময় আমার মেয়ে এবং জামাই সঙ্গে ছিল। ক্রিকেটের পরিবেশ দারুণভাবে উপভোগ করেছিলাম।"
রুনা লায়লার সঙ্গেই ইডেনে আমন্ত্রিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য এই বিষয়ে আলাদা করে কোনও কথা হয়নি। ইডেনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় তিনি। সুরশিল্পী জানান, "কথা হয়নি এখনও। ওখানে গেলে নিশ্চয় দেখা হবে ওঁর সঙ্গে। কথাও হবে।"
আরও পড়ুন, দাদার মন্ত্রেই বাইশ গজে সাফল্য, বলছেন বাংলাদেশের শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। তিন দেশই তাঁর কাছে আপন। বাবা সৈয়দ মহম্মদ এমদাদ আলি বাংলাদেশি হলেও, মা অনিতা সেন ছিলেন এপার বাংলার। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে চলে গিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই রুনার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।
কাঁটাতার মুছে যায় তাঁর সুরে। তাঁর শৈশব, কৈশোরের গন্ধে মিশে থাকে তিন দেশের ভালবাসার ছোঁয়া। পুরনো স্মৃতির প্রসঙ্গ উঠলে তিনি কেবল সংক্ষিপ্ত কথায় উত্তর দেন, "কলকাতায় আমার দাদুর বাড়ি। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে!" স্মৃতি ভিড় করে থাকা কলকাতার ইডেনে তাঁর কেবল একটাই চাওয়া, "ভাল ম্যাচ হোক। ক্রিকেটাররা ভাল খেলুন। ওঁরা বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনুন। এটাই তো চাওয়া, আর কী?"