Advertisment

দ্বিতীয় টেস্টেও ভারতের সামনে হারের ভ্রূকুটি, ব্যাটে ফের ব্যর্থ বিরাট

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুশো-সোয়া দুশোর বেশি 'চেজ' করাটা ফোর্থ ইনিংসে সহজ হবে না এই উইকেটে। কিন্তু এখন যা অবস্থা, দুশোর লিডকে বহু দূরের গ্রহ মনে হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ind vs nz second test

দ্বিতীয় টেস্টেও ভরাডুবি? ছবি সৌজন্য: বিসিসিআই

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেও হারের ভ্রূকুটি ভারতের সামনে। আজ নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংকে মাথা তুলতে দেননি শামি-বুমরা-জাদেজারা, ২৩৫ রানে প্রথম ইনিংসে ফুলস্টপ পড়েছিল উইলিয়ামসনের টিমের। কিন্তু তাতে কী হবে, সাত রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে ফের ভারতীয় টপ অর্ডার ডাহা ফেল। দিনের শেষে ভারতকে অসহায় দেখাচ্ছে। বোর্ডে ৯০-৬, রথী-মহারথীরা প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। ক্রিজে হনুমা বিহারী (৫)আর ঋষভ পন্থ (১)। আগামিকাল যাঁরা অন্তত আরও একশো রান যোগ করতে না পারলে এখানেই সিরিজের শেষকৃত্য অবধারিত। উইলিয়ামসনরা এগিয়ে যাবেন ২-০।

Advertisment

চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করা টেস্ট ক্রিকেটে সবসময় কঠিন। কত রানের টার্গেট রাখা উচিত কিউয়িদের সামনে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুশো-সোয়া দুশোর বেশি 'চেজ' করাটা ফোর্থ ইনিংসে সহজ হবে না এই উইকেটে। কিন্তু এখন যা অবস্থা, দুশোর লিডকে বহু দূরের গ্রহ মনে হচ্ছে। দেড়শোর মধ্যেই না গুটিয়ে যায় কোহলির বাহিনী!

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় টেস্টের উইকেটও হবে প্রথম টেস্টের মতোই, ভারত সাবধান!

অথচ প্রথম দুটো সেশনে আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারত। গতকাল দুই কিউয়ি ওপেনার ল্যাথাম আর ব্লান্ডেলকে দিব্যি জমাট দেখিয়েছিল। বিনা উইকেটে ৬৩-র প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দিন শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। আর ভারতের বোলারদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল, যেভাবেই হোক অন্তত তিনশোর মধ্যে বিপক্ষকে বেঁধে রাখার। শামি-বুমরার নেতৃত্বে ভারতীয় বোলিং দুর্দান্ত সামলাল সেই চ্যালেঞ্জ। ২৩৫-এ দাঁড়ি পড়ল কিউয়িদের ইনিংসে। বিদেশের মাটিতে ভারতীয় পেসারদের মরিয়া প্রত্যাঘাতের সাক্ষী থাকল ক্রাইস্টচার্চ।

ind vs nz second test ল্যাথামের উইকেট ছিটকে দিলেন শামি

পাল্টা দেওয়ার শুরু শামির হাতে। লাঞ্চের ঠিক আগে এবং পরে যাঁর হাত থেকে বেরোল গতি আর নিশানায় অভ্রান্ত দুটো দুরন্ত স্পেল। ক্রিজে জমে যাওয়া সদ্য পঞ্চাশ-পেরনো ল্যাথামের উইকেট সেই যে ছিটকে দিলেন শামি, ছন্দ পেয়ে গেল টিম ইন্ডিয়ার বোলিং। যে বুমরার অফ ফর্ম নিয়ে এত কথা হচ্ছিল, তিনিও ফিরলেন চেনা চেহারায়, তুলে নিলেন কিউয়িদের সেরা ব্যাট উইলিয়ামসনকে।

বিপক্ষের আরেক ব্যাটিং-স্তম্ভ রস টেলরকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখালেন অশ্বিনের জায়গায় টিমে ঢোকা জাদেজা। কোহলির বোলারদের দাপটে একটা সময় মনে হচ্ছিল দুশোও পেরোবে না নিউজিল্যান্ড। ১৭৭ -৮ থেকে যে ২৩৫ ছুঁয়ে ফেলল কিউয়িরা, তার নেপথ্যে সেই জেমিসন ( ৪৯), যিনি নিজের অভিষেক সিরিজে ব্যাটে-বলে ভারতের মাথাব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠেছেন ইতিমধ্যেই। গ্রান্ডহোমকে (২৬) সঙ্গে নিয়ে নবম উইকেটের জুটিতে করে গেলেন অমূল্য ৫১ রান।

বোলারদের উইকেট ভাগাভাগির হিসেব? শামি চারটে, বুমরা তিনটে, জাদেজা দুটো আর উমেশ একটা। আর হ্যাঁ, শামির বলে নিল ওয়াগনারের (২১) যে অবিশ্বাস্য ক্যাচটা এক হাতে নিলেন জাদেজা, সেটার উল্লেখ না করলে এই ম্যাচ রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থাকবে। কয়েক ফুট লাফিয়ে এক হাতে যে ক্যাচটা তালুবন্দি করলেন, সেটা 'স্যার' জাদেজার পক্ষেই সম্ভব।

সাত রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার সময় ওপেনারদের থেকে একটা জমাট বুনিয়াদের প্রত্যাশায় ছিল ভারত। হয়নি। ময়াঙ্ক (৩) আর পৃথ্বী (১৪) দ্রুত ফিরলেন বোল্ট-সাউদির জোড়া ফলা সামলাতে না পেরে।

এবং ঠিক এমন পরিস্থিতিতে যাঁর ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, সেই কোহলি (১৪) ফের ব্যর্থ। শুরুটা বিরাটোচিতই করেছিলেন, সহজাত স্ট্রোকপ্লে-তে ভরসা রাখছিলেন, টাইমিং নিখুঁত হচ্ছিল। তিনটে মন ভালো করে দেওয়া বাউন্ডারির পর যখন মনে হচ্ছে কিং কোহলির আজ স্বমহিমায় ফর্মে ফেরার দিন, তখনই ছন্দপতন! গ্রান্ডহোমের যে বলটা অফের সামান্য বাইরে পড়ে সিম করে ঢুকে এল, সেটা কোহলির ব্যাট এড়িয়ে পা খুঁজে নিল উইকেটের সামনে। পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। ডিআরএস নিয়ে সময় নষ্ট করেননি বিরাট। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে যখন ফিরছিলেন, হতাশাটা বোঝা যাচ্ছিল কোহলির। স্বাভাবিক। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ তো তৈরিই ছিল আজ। আজ খেলবেন না তো কবে খেলবেন? কিন্তু হলো আর কই?

আরও পড়ুন: ‘হামারি লড়কিয়ো মে দম হ্যায়’, টুইটারে উচ্ছ্বাস বীরুর

হতাশ করলেন রাহানেও (৯)। ৪৩ টা বল খেলে ক্রিজে জমে যাওয়ার পর কী মতিভ্রম হল কে জানে, ওয়াগনারের মিডল-লেগে পড়া মাঝারি গতির বলকে অনেকটা অফের দিকে সরে এসে ফাইন লেগে পাঠাতে গিয়ে বোল্ড! ক্ষমাহীন শট। স্কুল ক্রিকেটেও এই শট খেললে কোচেরা নিল ডাউন করিয়ে রাখবেন ক্রিকেটারকে। আর এ তো সিরিজের মরণ-বাঁচন টেস্ট ম্যাচ।

পূজারা? আগাগোড়া জমাট ব্যাটিংয়ের পর দিনের শেষ ঘন্টায় বোল্টের ইনসুইং সামলাতে না পেরে বোল্ড। অবদান? ৮৮ বলে ২৪। প্রায় ১৮ ওভার ব্যাট করার পরে, সেট হয়ে যাওয়ার পরে, অন্তত একটা ৫০-৬০ তো টিম আশা করবেই তাঁর তিন নম্বর ব্যাটের থেকে। কিন্তু ওই... কী আশায় বাঁধি খেলাঘর!

এই ম্যাচ যে মোহনায় দাঁড়িয়ে, তাতে প্রকৃতি বিরূপ না হলে ফয়সালা হচ্ছেই। ড্র হওয়ার কোনও চান্স নেই। আপাতত নিঃসন্দেহে অ্যাডভান্টেজ নিউজিল্যান্ড। অবশ্য টেস্ট ক্রিকেট বলে কথা। প্রথম দু'দিনেই যা চড়াই-উতরাই দেখেছে এই ম্যাচ, কে বলতে পারে, আগামি দু'দিন হয়তো আরও বহু নাটকীয় মুহূর্ত অপেক্ষা করে আছে।

থাকুক। আশা করতে তো আর ট্যাক্স লাগে না!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Test cricket Virat Kohli
Advertisment