জাতীয় দলের প্রতিশ্রুতিমান তারকা তিনি। বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছেন। তবে এখন তিনি পেট চালানোর তাগিদে ইঁটভাটায় কাজ করছেন। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গীতা সোরেনের জীবন এখন বলিউডের সিনেমাকেও হার মানাবে। গত বছরও করোনা অতিমারীর আগে গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আগে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। তবে আপাতত তিনি ফুটবল খেলা ভুলে ধানবাদের বাসামুদি গ্রামের ইঁটভাটায় কাজ করছেন।
গত বছরই সঙ্গীতা সোরেনের ভিডিও গোটা দেশে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। কার্যত খেলা থেকে সরে গিয়ে প্রতিদিনের পেটের ভাত জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের দুরবস্থা জানিয়ে ভিডিও বার্তা রাখেন সকলের কাছে। তারপরেই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে সেই আশ্বাস, আশ্বাস হয়েই রয়ে গিয়েছে এখনো পর্যন্ত। আপাতত সঙ্গীতার পরিচয় একটাই- ইঁট ভাটার শ্রমিক।
আরো পড়ুন: ছেঁড়া প্যাড-গ্লাভস-বুট! জিম্বাবোয়ে দলের জন্য ভিক্ষা করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার
গত বছর পর্যন্তও সঙ্গীতার কেরিয়ার ঠিক লিতেই6 এগোচ্ছিল। দারিদ্রের মধ্যেই পাখনা মেলছিল বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। উপমহাদেশীয় স্তরে ভুটান এবং থাইল্যান্ডে আয়োজিত টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের জার্সিতে অনুর্দ্ধ-১৭ স্কোয়াডে খেলেছিলেন। সিনিয়র স্কোয়াডে থাকার জন্য নির্বাচিত হন। তবে অতিমারী তছনছ করে দিয়েছে তিলতিল করে গড়ে তোলা সেই স্বপ্ন।
সঙ্গীতার বাবা দুবা সোরেন বয়স বাড়ার সঙ্গেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। দাদাও ইঁট-শ্রমিক। তবে লকডাউনে কাজ জোগাড় করতে পারছিলেন না সঙ্গীতার দাদা। শেষমেশ পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সঙ্গীতা নেমে পড়েছেন ইঁট-ভাটার কাজে। কয়েক সপ্তাহ আগে। নিজের সমস্ত স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে। সঙ্গীতার মা-ও ইঁট ভাটায় কাজ করেন।
হতাশায় সঙ্গীতার বৃদ্ধ বাবা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো রকম সাহায্য করেননি। স্থানীয় বিধায়কও হাত তুলে নিয়েছেন। আপাতত এখনই নিজের স্বপ্নকে ভুলতে রাজি নন সঙ্গীতা। তবে এই দুরবস্তার সময়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তবে খেলাকে এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। ইঁটভাটায় পা রাখার আগে সকালে হাজির হয়ে যান কাছের একটি মাঠে। সেখানে চলে নিভৃতে অনুশীলন।
অনেকে এথলিটই ঝাড়খন্ড ছেড়ে পড়শি রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন। হতাশ সঙ্গীতা জানিয়েছেন, এতে কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই রাজ্য সরকারের। "প্রত্যেক খেলোয়াড়ই খাবার এবং অনুশীলন চান। তবে রাজ্য সরকার খেলোয়াড়দের নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। সেই কারণেই আমার মত খেলোয়াড়রা শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।" জানিয়েছেন সঙ্গীতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন