Advertisment

Domestic red-ball cricket: ঘরোয়া ক্রিকেটই খেলতে পারেন না, টেস্ট খেলবেন কীভাবে? বিরাট অভিযোগ বিরাটদের বিরুদ্ধে

Indian domestic red-ball cricket: ২০২০ সাল থেকে কোহলি, রোহিত, রাহুল, গিল ও পন্থ মাত্র চারটি লাল বলের ম্যাচ খেলেছেন। বিরাট কোহলি শেষবার রঞ্জি ট্রফি খেলেছিলেন ২০১২ সালে।

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
Indian Cricket Team, ভারতীয় ক্রিকেট দল

Indian Cricket Team: ভারতীয় দল। (ফাইল ছবি)

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের প্রথমসারির ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পিছনে কারণ হিসেবে উঠে আসছে সাংঘাতিক সব অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে কোহলি, রোহিত, রাহুল, গিল ও পন্থ মাত্র চারটি লাল বলের ম্যাচ খেলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একজন টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্য বলেছেন যে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে সমস্ত ত্রুটিগুলি ঠিক করা সম্ভব না। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেট খেললে খেলোয়াড়রা টেস্ট খেলার মত প্রয়োজনীয় ছন্দে ফিরতে পারেন। 

Advertisment

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের প্রধান ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি শেষবার রঞ্জি ট্রফি খেলেছিলেন ২০১২ সালে। রোহিত শর্মা নয় বছর ধরে ঘরোয়া লাল বলের ক্রিকেট খেলেননি। গত চার বছরে, শুভমান গিল, রবীন্দ্র জাদেজা, মহম্মদ সিরাজ ও কেএল রাহুল মাত্র চারটি লাল বলের ম্যাচ খেলেছেন। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে যে ভারতীয় দলের প্রথমসারির ক্রিকেটাররা ঘরের মাাঠে কেন তেমন একটা ভালো খেলতে পারছেন না। আর, তাঁদের লাল বলের ম্যাচ অনুশীলনের অভাব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রভাব ফেলছে।

রবিবারই রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল এক দশক পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি (বিজিটি) সিরিজে আত্মসমর্পণ করেছে। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার কয়েক মাস পর, সফরকারী দলের কাছে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর, ভারত অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিল। এই দুটি টেস্ট বিপর্যয়ের ফলে ভারতীয় ক্রিকেটে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যে পরিস্থিতির দরুণ টিম ইন্ডিয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে পারেনি।

এসব দেখেই টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর বলেছেন যে ভারতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়দের দীর্ঘতম ফরম্যাটে রাজ্যদলের হয়ে খেলা উচিত। তিনি বলেছেন, '২৩শে জানুয়ারি, রঞ্জি ট্রফির পরবর্তী রাউন্ড রয়েছে। দেখা যাক এই স্কোয়াডের কতজন রঞ্জি ট্রফি খেলে। যদি ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ না খেলেন, তবে আমি বলব যে গৌতম গম্ভীরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গম্ভীরকে বলতে হবে, খেলোয়াড়রা তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তাঁদের দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে। খেলে দেখাতে হবে।' 

Advertisment

টিম ম্যানেজমেন্টের 'মধ্যে দীর্ঘদিন না খেললে, যে কোনও খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স স্থবির হয়ে পড়বে। লাল বলের ক্রিকেট খেলার পর সাদা বলের ক্রিকেট খেলা সহজ। কিন্তু উলটোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই ঘনঘন রঞ্জি খেললে ছন্দে থাকা সহজ হয়ে যাবে।' 

গত আগস্টে তৎকালীন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ টিম ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়দের সতর্ক করে বলেছিলেন যে তাঁরা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়ে টি২০ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-কে অগ্রাধিকার দেন, তবে তাঁদের 'গুরুতর পরিণতি' ভোগ করতে হতে পারে। চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে শাহ বলেছিলেন, 'ঘরোয়া ক্রিকেট ভারতীয় ক্রিকেটের ভিত্তি। তার কখনও অবমূল্যায়ন করা হয়নি।' শাহ ওই কথা বললেও নামী টেস্ট তারকারা ঘরোয়া ক্রিকেট এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁরা সেজন্য কোনও নিষেধাজ্ঞার আওতাতেও পড়েননি। তবে, মাঝারি স্তরের তারকাদের মধ্যে শ্রেয়স আইয়ার, ঈশান কিষাণরা ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলায় বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েন। 

প্রাক্তন ভারতীয় খেলোয়াড় ইরফান পাঠান, স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে এক কথোপকথনে এই সমস্যা মেটাতে ভারতীয় ক্রিকেটের 'সংস্কৃতি পরিবর্তন' করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। শচীন টেন্ডুলকরও রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন। এমনকী, তাঁর যখন প্রয়োজন ছিল না, তখনও তিনি মাঠে এতটা সময় কাটাতেন, যা আজকালকার খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে ভাবাই যায় না।'

বিজিটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ৩-১ ব্যবধানে ভারতের পরাজয় 'লাল বল'-এর ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়দের ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করেছে। বিজিটি দেখিয়েছে, ঋষভ পন্থ বারবার অযৌক্তিক ঝুঁকিপূর্ণ স্ট্রোক খেলে আউট হয়েছেন। ব্যাটসম্যানরা ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছেন। কোহলি অফ-স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে বারবার আউট হয়েছেন। বোলাররা দীর্ঘসময় ধরে বল করার মত অবস্থায় ছিলেন না। সিরাজ প্রায়শই ছন্দ হারিয়ে ফেলছিলেন। হর্ষিত রানা বলের গতি ধরে রাখতে পারছিলেন না। ক্রিজে শুভমান গিলের অস্থিরতা সকলের নজর কেড়েছে। রোহিত শর্মা সময়মতো স্টেপ আউট করতে পারেননি। তিনি ইনিংসের শুরুতে সাদা বলের স্ট্রোক নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যা বুঝিয়ে দিয়েছে যে ভারতীয় দলে টেস্ট মেজাজের অভাব আছে।

যশস্বী জয়সওয়াল ছাড়া, সফরে কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান ২০০ বা তার বেশি বল খেলেননি। মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান ১৫০-এর বেশি বল খেলতে পেরেছিলেন। তাঁরা হলেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও নীতীশকুমার রেড্ডি। গিলের সেরা ছিল ৫১। পন্থ মাত্র একবার ১০০ বা তার বেশি বল খেলেছেন। আর, মাত্র দুবার ৫০-এর বেশি বল খেলেছেন। রোহিত ৫টি ইনিংসে ১১০ বল খেলেছেন।

পার্থে সেঞ্চুরি ছাড়া, কোহলি তার আট ইনিংসের মধ্যে ১০০ বল খেলেননি। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে জয়সওয়াল সবচেয়ে বেশি, ৭৩২ বল খেলেছেন। এর সঙ্গে তুলনা টানলে বলতে হয়, ২০১৮-১৯ সালে চেতেশ্বর পূজারা ৭ ইনিংসে ১,২৫৮ বল খেলেছিলেন। ২০০৩-০৪ সফরে রাহুল দ্রাবিড় ১,২০৩ বল খেলেছিলেন। ২০২০-২১ সালে পূজারা ৯২৮ বল খেয়েছিলেন। সত্যি কথা বলতে গেলে, অস্ট্রেলিয়ায় চলতি শতাব্দীতে ভারতের সেরা মুহূর্তগুলো দুই ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সই উপহার দিয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত সিরিজও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু না। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন টেস্টে, টিম ইন্ডিয়া মাত্র ১টি সেঞ্চুরি এবং ৭টি হাফ সেঞ্চুরি করেছিল। আরও ভয়াবহ বিষয় হল, রাচিন রবীন্দ্র যে কোনও ভারতীয় ব্যাটারের চেয়ে স্পিনের বিরুদ্ধে ভালো খেলেছেন।  কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম ভারতীয় দলের বিখ্যাত টপ অর্ডারের চেয়ে টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিংয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তা দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের স্কোর ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ- ৩৪/৭, ৪৬ অলআউট, ৫৪/৭ এবং ৫৩/৬।

সমস্যা কেবল ব্যাটিংয়েই না। জসপ্রীত বুমরার পারফরম্যান্স ভারতীয় বোলিংয়ের ত্রুটি ঢাকলেও অন্য কোনও বোলার পুরো স্পেল-এ বোলিংয়ের তীব্রতা ধরে রাখতে পারেননি। সেটা কোনও ইনিংস, ম্যাচ বা সিরিজ- কিছুতেই না। সিরাজ ধারাবাহিক ছিলেন না। রানা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষম। ২০২০-২১ সিরিজে উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা বা শার্দুল ঠাকুররা ছিলেন। তেমন কোনও পরিশ্রমী বোলার সদ্যসমাপ্ত সিরিজে অনেক বিশেষজ্ঞরই চোখে পড়েনি। 

পাশাপাশি, বিজিটি সিরিজ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দলের সফরসঙ্গী সরফরাজ খান এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণ, গত পাঁচ বছরে ঘরোয়া সার্কিটের দুই সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান, নেটে খুব কমই সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের পাঁচ ম্যাচের কোনওটাতেই প্রথম একাদশে নেওয়া হয়নি। পার্থে হর্ষিত রানার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করে চলা আকাশ দীপ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা বুঝিয়েছে যে ভারতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট  ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্সের প্রতিদান দেয় না।

টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের যুক্তি, আজকাল আর ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে তেমন ভালো খেলোয়াড় উঠে আসে না। এই ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্তা বলেন, 'আগে যখন টেন্ডুলকর, দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণ টেস্ট দলে ছিলেন, তখন অমল মুজুমদার ও এস শরথের মত খেলোয়াড়রা টেস্ট ক্যাপ ছাড়াই প্রায় ৯,০০০-১০,০০০ রান করেছিলেন। এখন আমাদের কোনও খেলোয়াড় ধারাবাহিকভাবে ওরকম রান করতে পারেন না।'

আরও পড়ুন- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই দল নিয়েই খেলবে টিম ইন্ডিয়া, দেখে নিন একনজরে

যেমন, রঞ্জি ট্রফির শেষ তিনটি সংস্করণে মাত্র দু'জন ব্যাটার রঞ্জির ইতিহাসে শীর্ষ রান সংগ্রহকারীদের প্রথম দশে স্থান পেয়েছেন। গত মরশুমে মাত্র একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং ১২টি ডাবল সেঞ্চুরি দেখা গেছে। সেই তুলনায় ২০১৯-২০ সালে ৩টি ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং ২৫টি ডাবল সেঞ্চুরি ছিল। যে ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে টেস্ট-শ্রেণির খেলোয়াড় তৈরি করে আসছে, তা রাতারাতি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে না। তবে, জাতীয় দলের তারকাদের প্রত্যাবর্তনের ফলে ঘরোয়া ক্রিকেট অবশ্যই উপকৃত হবে। একথা অনস্বীকার্য।

cricket Team-India Test cricket Cricket News Indian Cricket Team Team India Team India
Advertisment