Government amends policy: সরকারের নীতি সংশোধনের পর ভারতের জুনিয়র ক্রীড়াবিদরা আর আন্তর্জাতিক পদকের জন্য নগদ পুরস্কার পাবেন না। ক্রীড়া মন্ত্রকের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে জানান, এই সিদ্ধান্তের কারণ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদল। ওই কর্তা জানান, জুনিয়র স্তরের প্রতিযোগিতাকে সরকার স্রেফ জয়-পরাজয়ের মানদণ্ডে বিচার করতে চায় না। বরং, উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হিসেবে দেখাতে চায়।
আর, সেই কারণেই আন্তর্জাতিক পদকজয়ী জুনিয়র ক্রীড়াবিদরা আর সরকারের কাছ থেকে নগদ পুরস্কার পাবেন না। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারের এই নীতি কার্যকর হয়েছে। এই নীতির পাশাপাশি ক্রীড়া মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন হল- ডোপিংয়ের পাশাপাশি, বয়স জালিয়াতিও রোখা। যাতে ক্রীড়াক্ষেত্রে, প্রকৃত 'তরুণদের' সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।
সরকারের আগের নীতি অনুযায়ী, জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পেলে একজন ক্রীড়াবিদ প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা পেতেন। এশিয়ান গেমস বা কমনওয়েলথে সোনা জিতলে পেতেন ৫ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার। ক্রীড়া মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, 'আমরা লক্ষ্য করেছি যে শুধুমাত্র ভারতই এমন একটি মডেল অনুসরণ করে যেখানে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে, আমরা লক্ষ্য করেছি, যে সব ক্রীড়াবিদরা জুনিয়র স্তরে কঠোর পরিশ্রম করেন, তাঁরা যখন সিনিয়র পর্যায়ে পৌঁছন, তখন হয় তাঁদের খেলার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় অথবা তাঁদের খেলার খিদে হারিয়ে যায়।'
আর, এই সব কারণে সিনিয়র ক্রীড়াবিদদের জন্য পুরস্কার নীতিও বদলেছে। মন্ত্রক পুরস্কার তালিকার ইভেন্ট থেকে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং দক্ষিণ এশিয়ান গেমস বা সাফকে বাদ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইন্টারন্যাশনাল (আন্তর্জাতিক) মাস্টার্স বা গ্র্যান্ডমাস্টার জয়ী দাবা খেলোয়াড়দেরও আর আর্থিক উৎসাহ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।
গত বছরের প্যারিস গেমসে শ্যুটার মনু ভাকেরের অভূতপূর্ব দুটি ব্রোঞ্জ জয়ের পর, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ক্রীড়াবিদ এবং তাঁদের কোচদের এখন অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে 'প্রতিটি পদক জয়'-এর জন্য পুরস্কৃত করা হবে। আখড়া বা একাডেমি, যেখানে একজন পদকপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, সেই প্রশিক্ষকও পুরস্কার পাবেন। একজন ক্রীড়াবিদের হয়ে তাঁর 'পত্নী, বাবা, মা, ভাই এবং বোন'-এর পুরস্কার গ্রহণ এতদিন আইন করে বন্ধ রাখা ছিল। সেই আইনও সংশোধন করে বাদ দিয়েছে সরকার।
সরকারের দাবি, বছরের পর বছর ধরে জুনিয়র ক্রীড়াবিদরা অর্থ পাওয়ায় তারা এবং তাঁদের কোচরা জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর, এই কারণেই বয়স জালিয়াতি এবং ডোপিংয়ের মত ঘটনা ঘটছে। ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে ডোপ অপরাধীদের ১০%-এরও বেশি নাবালক। প্রতি ২০৪ জনের মধ্যে সংখ্যাটা ২২ জনেরও বেশি।
যদিও বিপুল সংখ্যক বয়স জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও জালিয়াতি করেন, এমন অ্যাথলিটের সংখ্যা নথিবদ্ধ করার মত কোনও কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই। পরিসংখ্যান শুধু এটুকু বলছে যে, কয়েক বছরে খেলাধূলার জগতে গত কয়েক বছরে শত শত অ্যাথলিটকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরও অনেকের জাল নথি ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন- সমানতালে টক্কর দিয়েও পরাজিত মহামেডান, অ্যাওয়ের পর হোম ম্যাচেও জয়ী হায়দরাবাদ
ক্রীড়া মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, 'নগদ পুরস্কার অ্যাথলিটদের অন্যায্য উপায় অবলম্বন করার অন্যতম কারণ। তাঁদের বেশিরভাগই আসেন দরিদ্র ঘর থেকে। তাই নগদ পুরস্কার তাঁদের দেওয়াটা খুব ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যায়।' কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং দক্ষিণ এশীয় গেমসের মতো ইভেন্টগুলিকেও আর্থিক পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য ক্রীড়াবিদরা যাতে মহাদেশীয় এবং বিশ্বকাপ বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলির দিকে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারেন। তবে, ক্রীড়ামন্ত্রক ঠিক করেছে যে, অল-ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ বা দাবাতে ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের মত ইভেন্ট জয়ী অ্যাথলিটদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ীদের সমান পরিমাণ নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে। কারণ, সেখানে প্রতিযোগিতার মান বেশ উঁচু।