কার্যত অপ্রতিরোধ্য। অপ্রতিদ্বন্দ্বী বললেও অত্যুক্তি হয় না। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যেন আইপিএলে হারতেই শেখেনি। বাকি দলগুলোর থেকে যে শতযোজন এগিয়ে তারা, প্রমাণ করে দিল প্লে অফের প্রথম ম্যাচেই। তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে রিকি পন্টিং জমানার দুরন্ত সেই অস্ট্রেলীয় দলের সঙ্গেও। একমাত্র শতকের শুরুর দিকে অজি দল-ই নাকি এই মুম্বই টিমকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। গতকাল-ই দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে ফাইনালেও উঠে গেল তারা। পঞ্চমবার ট্রফি জয়ের জন্য এখন হট ফেভারিট রোহিত শর্মা ব্রিগেড। দিল্লিকে ৫৭ রানে উড়িয়ে এই নিয়ে টুর্নামেন্ট ফাইনালে ষষ্ঠবার পৌঁছাল তারা। ম্যাচের পরে ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা বলেও দিলেন, দল একদম নিখুঁত খেলেছে।
চলতি টুর্নামেন্টে পাঁচবার হেরেছে মুম্বই। তবে এর মধ্যে দু-বারই ছিল সুপার ওভারে। কিন্তু কীভাবে এই নিরঙ্কুশ আধিপত্য অর্জন করছে মুম্বই, প্রতিটি সিজনে। দেখা যাক-
আরো পড়ুন: এই ছোট কাজ করলেই কেল্লাফতে! ধোনির ব্যাটে আসবে রানের ফুলঝুরি, আইপিএলে হবে ৪০০-ও
দুরন্ত মিডল এবং লোয়ার অর্ডার:
চলতি টুর্নামেন্টের সেরা দশ রান গেটারের মধ্যে দুজন-ই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। ঈশান কিষান চলতি মরশুমে ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে ৫৩ গড় নিয়ে প্রতি ম্যাচে খেলতে নামছেন। সেই সঙ্গে রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। দলকে একাধিক ম্যাচে ফিফটি করে জয়ের বৈতরণী পার করিয়েছেন।সূর্য-র গড় ৪৮। এবং স্ট্রাইক রেট ১৫০-এর আশেপাশে। সূর্যকুমার এবং ঈশান কিষান মুম্বইয়ের মিডল অর্ডারকে কার্যত অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
লোয়ার অর্ডারে বাফার হিসাবে খেলছেন কায়রণ পোলার্ড এবং হার্দিক পান্ডিয়া। কোনো কারণে ঈশান কিষান এবং সূর্যকুমার ব্যর্থ হলে, ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিচ্ছেন পোলার্ড-পান্ডিয়া।কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে পান্ডিয়া-পোলার্ডের শেষ ৩ ওভারে ৬২ হোক বা রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে পান্ডিয়া-সূর্যকুমারের ৫১ বারবারই ব্যাটিং অর্ডারের এই সামঞ্জস্য ঘুম উড়িয়েছে প্রতিপক্ষের। কোয়ালিফায়ারেও শেষ তিন ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ১৪ বলে ৩৭ করে স্রেফ রিংয়ের বাইরে ছিটকে দিল দিল্লিকে। মিডল ও লোয়ার অর্ডারে মুম্বইয়ের এই আগ্রাসন এবং বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পাল্টা কোনো 'ওষুধ' বের করতে পারেনি বাকি দলগুলি। রোহিত শর্মা সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও বাকিদের কারণে সেই ব্যর্থতা সেভাবে প্রকট হয়নি।
ফ্যাক্টর যখন বুমরা-বোল্ট:
টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং জুড়ি। জসপ্রীত বুমরা এবং ট্রেন্ট বোল্ট যেন একে অন্যের পরিপূরক। শুরুর এবং শেষের ওভারে মুম্বইয়ের এই বোলিং জুড়ি বাকি দলগুলোর কাছে ত্রাস হিসাবে ধেয়ে এসেছে। চলতি আইপিএলে বুমরা-বোল্ট জুটির সংগ্রহে ৪৯ উইকেট। এর মধ্যে বুমরা নিয়েছেন ২৭টি। কোনো আইপিএলের সংস্করণে এর আগে কোনো ভারতীয় বোলার এত উইকেট সংগ্ৰহ করতে পারেননি। বুমরার ইকোনমি রেট ৬.৭১। এই কারণেই বুমরাকে বলা হচ্ছে অন্য গ্রহের বোলার। মাইকেল ভন তো বলেই দিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা বোলার বুমরা।
অন্যদিকে, বোল্টের ইকোনমি রেট প্রায় ৮, তবে স্ট্রাইক রেট ১৪.৫৪। যা ন্যূনতম ১৫ উইকেট সংগ্ৰহ করা বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা।
এই জুটি হিসাবে খেলার প্রয়োগ ক্ষমতাতেই মুম্বই বাকি দলগুলোর থেকে অনেক এগিয়ে। রোহিত শর্মা বুমরাকে যেভাবে শুরু ও শেষের ওভারে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করেন, তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। কোনো একক পারফরম্যান্সে নয়, টিম হিসাবে খেলেই মুম্বই সেরার সেরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন