/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/04/Shakib-Al-Hasan-Taslima-Nasrin_copy_1200x676.jpg)
মঈন আলিকে সন্ত্রাসবাদী বলে হঠাৎ ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনায় উঠে এসেছেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাঁর সেই বিতর্কিত টুইট, "ক্রিকেট না খেললে মঈন আলি সিরিয়ায় গিয়ে আইসিসে যোগ দিত!" তুফান বইয়ে দিয়েছে।
তসলিমা নাসরিনের সেই অবমাননাকর টুইটের পরেই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা পাল্টা সমালোচনায় সরব হন। তসলিমাকে সমালোচনা করে কার্যত ধুয়ে দেন জোফ্রা আর্চার, বেন ডাকেট, রায়ান সাইডবটমরা। তসলিমাকে পাল্টা আক্রমণকারীর তালিকায় ছিলেন ইংল্যান্ডের উঠতি ক্রিকেটার সাকিব মাহমুদও। প্রথমে তসলিমা নাসরিন মঈন আলিকে সন্ত্রাসবাদী বললেও, পরে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে জানান, তিনি রসিকতা করেই এমনটা বলেছিলেন। তারপরেই সাকিব মাহমুদ টুইট করে তসলিমাকে বলেন, "রসিকতা! আপনার রসিকতা করার মানসিকতা কার্যত অসুস্থতার পর্যায়ে।"
আরো পড়ুন: সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গি হয়ে যাক! মঈন আলিকে বিস্ফোরক আক্রমণ তসলিমার
Sarcastic? You have a sick sense of humour https://t.co/u4KnIB1I7w
— Saqib Mahmood (@SaqMahmood25) April 6, 2021
সাকিব মাহমুদকেই তসলিমা ভুল করে ভেবে বসেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তারপরেই নিজের ফেসবুক পোস্টে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে লম্বা একটি পোস্ট করেন তিনি। সেই পোস্টের মাঝামাঝি তিনি লেখেন, "….
সাকিবকে নিয়ে করা সেই পোস্ট...
আরো পড়ুন: মঈনকে জঙ্গি বলে শ্লেষ! ক্ষোভ উগরে তসলিমাকে নিষিদ্ধের দাবি আর্চারদের
বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিবও বেশ এবিউজ করলেন আমাকে। 'ডিজগাস্টিং টুইট, ডিজগাস্টিং ইন্ডিভিজুয়াল'। এর মানে আমার টুইট যেমন খারাপ, আমি মানুষটাও তেমন খারাপ। সাকিব কিন্তু কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদিদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, তখন কিন্তু ওদের আক্রমণকে ডিজগাস্টিং বলেননি, ওদেরকেও ডিজগাস্টিং বলেননি। আমি তো সাকিবের পক্ষ নিয়ে কলাম লিখেছিলাম, সাকিবের অধিকার আছে যে খানে খুশি যাওয়ার, যা কিছু উদবোধন করার, সাকিবকে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন। আর সাকিব কী করলেন, যারা ওঁকে আক্রমণ করেছিল, তাঁদের কাছে করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, বললেন, তাঁর পুজোয় যাওয়াই উচিত হয়নি, তিনি ইসলামে প্রচণ্ড বিশ্বাসী, এবং ইসলামই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আমাকে আক্রমণ করে তিনি তাঁর সেই আক্রমণকারীদেরই খুশি করলেন। এমন কৌশল যে আমি জানি না, সে কারণে আমি নিজেকে ভালোবাসি আরও একটু বেশি।…"
আরো পড়ুন: মঈনকে দাড়ি কামাতে বলা হয়েছিল! তসলিমা-মন্তব্যে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি বাবা মুনিরের
তসলিমার এই ভুল ধারণা নিয়ে করা পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছুক্ষণ ছিল। তবে কিছুক্ষণ পরেই হয়ত টনক নড়ে তসলিমার। তিনি সাকিবের অংশটি শেষপর্যন্ত নিজের পোস্ট থেকে মুছে দেন।
তসলিমার সেই পোস্টের বয়ান, "টুইটারে হাজার হাজার এবিউজ বিরোধী সেনা আমাকে এবিউজ করছে, আমার দোষ কেন আমি মইন আলীকে 'এবিউজ' করেছি। এর মানে মইন আলীকে এবিউজ করা ঠিক নয়, আমাকে এবিউজ করা ঠিক। অপমান অসম্মান অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি ততদিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদি, ফেক বাম, আমাকে না-পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে। পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেরকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি । দোষটা কী ছিল আমার? একটি জোক। আযান পড়লে যে মানুষ খেলার মাঠেই নিজের জায়নামাজ পেতে নামাজ পড়েন, খেলা চলতে থাকলে নাকি আম্পায়ারকে বলে চলেও যান নামাজ পড়তে, বিজয়ের শ্যাম্পেন খুললে দ্রুত সরে যান দূরে, বিয়ার কোম্পানীর লোগো থাকলে সেই জার্সি পরবেন না বলে জানিয়ে দেন, পয়গম্বরের আদেশ মাফিক গোঁফ ট্রিম করতে থাকেন, দাড়ি বড় করতে থাকেন, কোনও মেয়ে-সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলে মুখের দিকে একটিবারও না তাকিয়ে সাক্ষাৎকার দেন, স্ত্রীকে হিজাব পরান -- তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি টুইটারের একাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ এমনই থ্রেট এসেছে। আমাকে যারা গতকাল থেকে এবিউজ করছে, তারা তো অনেকেই শার্লি আব্দোকে সমর্থন করে। শার্লি আব্দো তো মস্করা করে বিখ্যাত লোকদের নিয়ে, তাহলে সেটা সমর্থন করে কিভাবে? নাকি ওরা ফরাসি বলে ওদের সমর্থন করা চলে!
মইন আলীকে নিয়ে লেখা টুইট ছিল তিনদিন আগের। সেটি চার হাজারের ওপর লাইক পেয়েছিল, কেউ কিন্তু তখন কোনও অভিযোগ করেনি। হঠাৎ গতকাল কবিতা কৃষ্ণন নামে একজন বামপন্থী আমাকে গালিগালাজ করলেন টুইটটি নিয়ে। অমনি শুরু হয়ে গেল, তথাকথিত বাম এবং মুসলিম মৌলবাদিদের তসলিমা এবিউজ । গালি, গালি এবং গালি। সংগঠিত মৌলবাদিরা আজও চালিয়ে যাচ্ছে এবিউজ। সাধারণ মানুষও এসে কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। মাঝখানে ইংলেণ্ডের ক্রিকেটাররাও যা নয় তা তো বললেনই, আমার টুইটার একাউণ্ট রিপোর্ট করার জন্যও ভক্তদের বলে গেলেন। ঘৃণার মতো সংক্রামক বোধহয় ডেডলি ভাইরাসও নয়।
কেউ জানলো না আমার স্ট্রাগল, আমার দীর্ঘ বছরের সংগ্রাম। মানবতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সমতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবধি আমার লেখালেখি। সবাই মনে করতে লাগলো আমি সারাজীবন ধরে ওই এক লাইনের একটা টুইটই লিখেছি, আমার আর কোনও কন্ট্রিবিউশান নেই, তাই আমাকে শায়েস্তা করা উচিত। মৌলবাদিদের দু'দিন ব্যাপী উৎসব চলছে । কারণ বড় বড় ক্রিকেটার আমাকে গালি দিচ্ছেন, বামপন্থী গালি দিচ্ছেন, নামী দামী লোক গালি দিচ্ছেন, তাদের আনন্দ আর ধরছে না।"
তসলিমা এডিট করে দিলেও 'এডিট হিস্ট্রি'-তে এখনো সাকিবকে নিয়ে করা পোস্ট দেখা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন