Advertisment

বারবার চারবার আলো নিভল ইডেনে, আর কত লজ্জা বাকি?

যদি রাসেল না খেলতে পারতেন বা ডি আর এস পদ্ধতিতে ম্যাচ হেরে যেতে হতো কলকাতা নাইট রাইডার্সকে, তা সিএবির পক্ষে খুব একটা সুখকর হত না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
‘Andre Russell has to be the scariest in world cricket’

আঁদ্রে রাসেলের ১৯ বলে ৪৯ রানের জেরে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে যায় কেকেআর (ছবি- পার্থ পাল)

আইপিএলের দ্বিতীয় ম্যাচে রাসেলের দৌলতে এই সিজনে তাদের প্রথম ম্যাচ জিতে গেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। গতবার যে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে হেরে গিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল, এই মরসুম শুরু হল তাদেরকে হারিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই কেকেআর- এর মনোবল এখন তুঙ্গে। বুধবার ফের ইডেনে বসবে আইপিএলের আসর। কেকেআরের মুখোমুখি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। আপাতভাবে সবকিছু ঠিক মনে হলেও উদ্বেগে আছে কলকাতা। সৌজন্য সিএবির পরিকাঠামো।

Advertisment

রবিবার ইডেনে ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই ইডেনের বেশ কিছু আলো নিভে যায়। সেই সময়ে টানটান উত্তেজনা। কলকাতা আদৌ ম্যাচ বের করতে পারবে কিনা তাই নিয়ে আপামর ক্রিকেটকুল সংশয়ে। ক্রিজে তখন নীতিশ রানা এবং আন্দ্রে রাসেল। রানা থিতু হয়ে গেছেন ২২ গজে। ষোল ওভারের মাথায় হাইকোর্ট প্রান্তের ফ্লাডলাইটের কিছু আলো নিভে যায়। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আম্পায়ররা প্রথমে স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট দেন। তারপর আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করেন পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার জন্য।  টিভি কমেন্টেটাররা আলো কমের কারণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। অবশেষে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ১৪ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। সেই সময়ে যদি খেলা শেষ করে দিতে হত, তাহলে ডি আর এস পদ্ধতিতে ম্যাচ হেরে যেত কেকেআর। শেষ অবধি অবশ্য আলো আসে এবং আন্দ্রে রাসেলের অবিশ্বাস্য ১৯ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচ জিতে যায় নাইট রাইডার্স।

গোটা ঘটনাকে অঘটন হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারত, কিন্তু ইডেনের ইতিহাস বলছে, এই ঘটনা হঠাৎ একদিন ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে কলকাতা। যার শুরু আইপিএল এরই প্রথম মরসুম থেকে।

২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল প্রথম আইপিএলে কেকেআর বনাম ডেকান চার্জার্স ম্যাচেও এমন অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল ইডেন। এবারেও হাইকোর্ট প্রান্তের আলো নিভে যাওয়ার ফলে খেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল প্রায় ২৫ মিনিট। ঠিক তার পরের বছর একই ঘটনা ঘটে ভারত বনাম শ্রীলংকা ম্যাচে, ২৪ শে ডিসেম্বর ২০০৯ সালে। এবারে ২০ মিনিটের বেশি সময়ে ম্যাচ বন্ধ রাখা হয়। তবে সবথেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপের সময়ে। পুরো ক্রিকেট বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচে আলো বিভ্রাট ঘটে ইডেনে। বিশ্বকাপের মত আসরে এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই অনেকরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম দেয়। ওঠে সিএবির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাও।

Eden Flood Light Crisis ম্যাচের দিন রাতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেটর সংস্থা 'টিডিকে এন্টারপ্রাইজ' দফায় দফায় জেনারেটর পরীক্ষা করে

২০১৬ সালের বিদ্যুৎ বিভ্রাট পর্যন্ত ইডেনে রাতের খেলাগুলির সময়ে ফ্লাডলাইটের দায়িত্বে থাকত সিইএসসি। কিন্তু বিশ্বকাপের ঘটনার পর সিএবি সিদ্ধান্ত নেয় ফ্লাডলাইট জ্বলবে জেনারেটরের মাধ্যমে। ম্যাচের দিন মোট চারটি বিশেষ জেনারেটর মাঠে মজুত থাকে। তার মধ্যে দুটি জেনারেটরের শক্তিতে আলো জ্বলে। আর ব্যাক আপ হিসেবে বাকি দুটি জেনারেটর রাখা থাকে। তৃতীয় এবং শেষ ব্যাক আপ হিসেবে থাকে সিইএসসি। অর্থাৎ কোনভাবেই যাতে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা করা থাকে। প্রশ্ন হল, এত কিছুর পরেও রবিবার কেন মাঠে আলো নিভে গেল?

সিইএসসি ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। তাদের দাবি, এ ব্যাপারে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। ম্যাচের দিন রাতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেটর সংস্থা 'টিডিকে এন্টারপ্রাইজ' দফায় দফায় জেনারেটর পরীক্ষা করে। সিএবি যুগ্ম সচিব নিজে তাদের সঙ্গে বারবার কথা বলেন। অবশেষে ওই সংস্থার তরফে তাদের লেটারহডে লিখিত আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়, জেনারেটর ঠিকই ছিল। সমস্যা হয়েছিল ফ্লাডলাইটের তারে। তার জেরে ট্রিপ করে যায় বিদ্যুৎ। অন্যদিকে অভিষেক ডালমিয়া  অফিসিয়াল বয়ান জারি করে জানিয়ে দেন, এটি একটি ‘ইভেঞ্চুয়ালিটি’ মাত্র, যার পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গে  ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইপিএল-এর আগে ‘রুটিন চেক আপ’ হয়েছিল এবং পরবর্তী ম্যাচের আগে আবারও সব পরীক্ষা করা হবে।

কেকেআর যদি রবিবারের ম্যাচ হেরে যেত, রাসেল যদি ওই আলোআঁধারিতে জ্বলে না উঠতেন তাহলে এত সহজে বিতর্ক থেমে যেত না। যে নীতিশ রানা উইকেটে জাঁকিয়ে বসেছিলেন, আলোর সমস্যা না হলে হয়ত তিনি ম্যাচ জিতিয়েই ফিরতেন। ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমার আন্দাজই ছিল না, এ রকমও কিছু হতে পারে। ১৪ মিনিট আলো বন্ধ থাকার সময় আমি  ডাগ-আউটে গিয়ে বসেছিলাম। মনঃসংযোগও নষ্ট হয়ে যায়। মাঠে নেমে পরের বলেই আউট হয়ে গেলাম।’’ কার্যত যদি রাসেল না খেলতে পারতেন বা ডি আর এস পদ্ধতিতে ম্যাচ হেরে যেত কলকাতা নাইট রাইডার্সকে, তা সিএবির পক্ষে খুব একটা সুখকর হত না। আগামী ১২ই এপ্রিল দিল্লি বনাম কলকাতার ম্যাচ আছে ইডেনে। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্বয়ং মরসুমে দিল্লি ক্যাপিটালসের পরামর্শদাতার ভূমিকায় রয়েছেন। এই ঘটনা যদি সেইদিন ঘটত, পরিস্থিতি ঠিক কীরকম হত?

জেনারেটর সংস্থা এবং সিএবি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই এই ঘটনা ঘটে এবং আশা করা হয় যে আর ঘটবে না। প্রতিবারই বলা হয় ‘চেক আপ’ হয়েছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু বারবার এই ঘটনা ঘটেই চলেছে। খুব স্পষ্টতই ২০১৬ সালের পর জেনারেটরের শরণাপন্ন হয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। তবে কি পরিকাঠামোতে কোন গলদ আছে? পরিকাঠামো যদি ঠিক থাকে তাহলে এর প্রকৃত কারণ কী? যে রুটিন চেক আপ এর কথা বলা হয় তা কি তাহলে যথাযথভাবে হয় না? কেন বারবার এইভাবে লজ্জায় মুখ লুকোতে হবে ইডেনকে?

Eden Gardens IPL
Advertisment