ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল চারটে। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সামনের কয়েকটা গাছে বাঁধা ঘোড়া। তারা আপন মনে ঘাস খাচ্ছে। মাউন্টেড পুলিশের কর্মীরা তাদের আগলে বসে রয়েছেন চেয়ারে। জিরিয়ে নিচ্ছেন খানিকটা। আর পাঁচটা দিনের মতোই সবুজের সমারোহে পড়ন্ত দুপুরের শান্তি বিরাজমান ময়দান চত্বরে।
একটু এগিয়ে হাওড়া ইউনিয়নের মাঠের সামনেটায় বেশ কিছু মানুষের জটলা। অধিকাংশই জড়ো হয়েছেন টিকিটের খোঁজে। তাঁদের মধ্যে সিংহভাগ অনলাইনে বুক করা টিকিটের হার্ড-কপি সংগ্রহ করতে এসেছেন। বাকিদের মাথায় ঘুরছে যদি ঘুরপথে, থুড়ি, ব্ল্যাকে টিকিট পাওয়া যায় দিল্লি এবং চেন্নাই ম্যাচের।
একটা নয়, ব্যাক-টু-ব্যাক ম্যাচ রয়েছে ইডেন গার্ডেন্সে। শুক্রবার রাত আটটায় দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে খেলবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর এর ঠিক একদিন বাদেই বিকেলবেলা ধোনিদের সঙ্গে কার্তিকদের মহারণ। প্রত্যাশিত ভাবেই টিকিটের চাহিদা তুঙ্গস্পর্শী।
আরও পড়ুন: IPL 2019: কলকাতায় নতুন অজি পেসার, কে তিনি?
মহামেডান ক্লাবের আশেপাশে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক এবং সিভিক পুলিশদের কাছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার একটাই প্রশ্ন ছিল। তাঁরা কি কোনও টিকিটের কালোবাজারির খবর পেয়েছেন আজকে? প্রত্যেকেই ঘাড় নেড়ে না বলে দিলেন। এমনকি ময়দান থানায় ফোন করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মীও বললেন যে, তাঁদের কাছেও আইপিএলের টিকিট ব্ল্যাক হওয়ার কোনও খবর নেই আজ। তাঁরা এ বিষয়ে কোনও অভিযোগও পান নি। আশ্চর্যজনক উত্তর হলেও চমকে দেওয়ার মতো ব্যাপারটা অন্য জায়গায়।
টিকিট কাউন্টারের সামনে পুলিশের ঠিক ঢিলছোড়া দূরত্বেই রয়েছেন লেবু-জল এবং কাটা ফল বিক্রেতারা। তাঁদের মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে ব্ল্যাকারদের কাছে। তাঁদের কাজটা হচ্ছে ব্ল্যাকার এবং ক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধনের। এক কথায়, দালালি করছেন তাঁরা।
বিক্রিবাটার ফাঁকেই লোক বুঝে জিজ্ঞাসা করছেন, কোন ম্যাচের ক'টা করে টিকিট লাগবে? দিল্লির ম্যাচের ৫০০ টাকার টিকিটের জন্য দিতে হবে ১,০০০ টাকা। আর চেন্নাই ম্যাচের জন্য দিতে হবে ২,০০০ টাকা। এমনটাই জানিয়ে দিলেন তাঁরা। এর পাশাপাশি বলছেন, তাঁদের কাছে কোনও টিকিট নেই। কিন্তু টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ১০০ টাকা নেবেন।
এরকমই এক ফল বিক্রেতা রাস্তা পার করে নিয়ে গেলেন ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবের সামনের ফুটপাতে। তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন এক মহিলার সঙ্গে। নাম মঞ্জু। যিনি প্রথমে ফোন নম্বর দিতে না-চাইলেও পরে, বেশি টিকিট নেওয়া হবে শুনে নিজের মোবাইল নম্বরটিও দিলেন। মঞ্জুও সেই একই রেট বললেন যা ফল বিক্রেতা জানিয়েছিলেন খানিক আগে, সংখ্যায় বেশি পরিমাণ টিকিট নিলে চেন্নাই ম্যাচের ২,০০০ টাকার টিকিট তিনি ১,৫০০ টাকায় ছাড়তে পারেন। কিন্তু তার কমে নয়। এমনকি ওঁর সংগ্রহে ২,৫০০ টাকার টিকিটও রয়েছে। যেগুলো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন বলেই জানালেন।
ময়দান চত্বরে এরকম অনেক ব্ল্যাকারই ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইতিউতি। পুলিশের ভয়ে ক্রেতাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন কথা বলার সময়। মঞ্জুর মতোই এক ব্ল্যাকার বললেন, তাঁদের লভ্যাংশ খুবই কম থাকে, টিকিট পিছু ১০০ টাকা বড়জোর। কিন্তু ম্যাচের দিন বা তার আগে তাঁরা গড়ে ৫০-১০০টা করে টিকিট এরকম তিন বা চারগুণ দামেই বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছেন। মোটামুটি শ'পাঁচেক টিকিট তাঁরা আগে থেকেই কিনে রাখেন।
আপনি যদি মনে করেন যে, আইপিএল রোম্যান্সের স্বাদ নেবেন, তাহলে অনলাইনে টিকিট না-কাটার আক্ষেপ করবেন না। ম্যাচের দিন বা আগের দিন গেলেও টিকিট ঠিক পেয়েই যাবেন। শুধু কালোবাজারিদের স্বর্গোদ্যানে দ্বিগুণ থেকে চারগুণ দামে কিনতে হবে টিকিট।