Harshit Rana Flying Kiss Celebration: কেকেআর কর্তা শাহরুখ খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আইপিএল জিতলে তিনি 'চুমু ছুড়ে' জয়টাকে উদযাপন করবেন। কথা রেখেছেন কেকেআর কর্তা। শাহরুখ জয়ের পর 'চুমু ছুড়ে' দিয়েছেন। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছেন। কারণ, আইপিএল চলাকালীন বিপক্ষের খেলোয়াড়কে আউট করার পর এই 'চুমু ছুড়ে' দিয়েই শাস্তির মুখে পড়েছিলেন হর্ষিত রানা। সেই হর্ষিতই এবার ফাঁস করে দিলেন কেকেআর কর্তারা প্রতিশ্রুতির কথা।
এবারের আইপিএলে হর্ষিত ১৩ ম্যাচে ১৯টা উইকেট নিয়েছেন। যা কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবারের আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা হর্ষিত আদতে দিল্লির ছেলে। দলের আইপিএল জয়ের পর ইন্ডিয়া টিমের জার্সি গায়ে তোলাই এখন তাঁর স্বপ্ন।
হর্ষিতের এই স্বপ্ন দেখার রীতিমতো অধিকার আছে। কারণ, কেকেআরের একনম্বর বোলার মিচেল স্টার্ক এবারে আইপিএলের প্রথমদিকে ফর্মেই ছিলেন না। সেই সময় জীবনে একবারও সিনিয়র জাতীয় দলে না খেলা হর্ষিত একের পর এক ম্যাচে কেকেআরকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। পেস বোলিংয়ে দলকে অভাব বুঝতে দেননি। সেই হর্ষিত রানা এবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে মুখ খুলেছেন। ২২ বছরের পেসার জানিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক শাহরুখ তাঁকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কেনই বা তিনি ক্রিকেটার হতে চাইলেন, তাঁর লক্ষ্যই বা কী?
এক্সপ্রেস- কোনটা বেশি স্পেশ্যাল ছিল, আইপিএল জয়, নাকি শাহরুখের সঙ্গে সেলিব্রেশন?
হর্ষিত- দুটোই (হাসি)।
এক্সপ্রেস- 'চুমু ছুড়ে' দেওয়ার পরিকল্পনাটা কি শাহরুখের আগে থেকেই ছিল?
হর্ষিত- হ্যাঁ, অবশ্যই! আমি একটা ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শাহরুখ স্যার এসে বললেন, 'টেনশন করো না। জেতার পর আমরা এই কায়দাতেই ট্রফির সঙ্গে আনন্দটা পালন করব।' উনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এক্সপ্রেস- নিষেধাজ্ঞা কি আপনার আগ্রাসনে ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে?
হর্ষিত- কোনও চান্স নেই। পরের বার আমি শুধু বিদায়ের সময় এটা (চুমু) ছুড়ব না। এটা আমার ক্রিকেট। আমি ক্রিকেট সবসময় এভাবেই খেলি। আমি মাঠের বাইরে সবসময় মজা করতে রাজি আছি। কিন্তু, মাঠের মধ্যে আমি কোনও বন্ধুত্ব করতে আসিনি। অভিষেক পোড়েল আমার প্রথম ওভারে ১৬ রান নিয়েছিল। চার মেরে কেউ হাসলে ইগোতে তো ধাক্কা লাগবেই। পরের ওভারেই আমি ওঁর উইকেট নিয়েছিলাম। তা নিয়েই আনন্দ করেছি। কিন্তু, আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হয়।
এক্সপ্রেস- আপনার কি মনে হয়, দিল্লির ক্রিকেটাররা একটু বেশি আগ্রাসী?
হর্ষিত- আমার ওপর এই তকমাটা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দিল্লির লোকজন খুব আবেগপ্রবণ। অন্তর দিয়ে খেলি। এই আগ্রাসনই বিরাট কোহলিকে আজকের বিরাট কোহলিতে পরিণত করেছে। ইশান্ত শর্মা ১০০টা টেস্ট খেলেছেন। ঋষভ পন্থ গাব্বায় অসাধারণ খেলেছিলেন। গৌতম গম্ভীর ভারতের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন।
এক্সপ্রেস- এবারের আইপিএলে আপনাকে মেদহীন দেখাচ্ছিল, কত কিলো ঝরিয়েছেন?
হর্ষিত- আমি গত বছর নভেম্বরে (২০২৩-২৪) মুস্তাক আলি ট্রফি খেলেছি। সেই থেকে মার্চে আইপিএল শুরু হওয়া পর্যন্ত ১৭ কেজি ওজন ঝরিয়েছি।
এক্সপ্রেস- ফিটনেস নিয়ে এই বিপ্লবের কারণ কী?
হর্ষিত- গতবছর আইপিএল খেলার সময় এনিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। আইপিএলের পর দলীপ ট্রফি খেলি। ভারতীয় এ দলেও চান্স পেয়েছিলাম। কিন্তু, চোট পেয়ে যাই। আমি বুঝতে পারি, ভালো খেলছি। লোকেও আমার খেলা পছন্দ করছে। কিন্তু, বারবার চোট পাচ্ছি। আমি দেশের হয়ে খেলতে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। এজন্য আমাকে ফিট থাকতে হবে। চোটের জন্য স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না!
এক্সপ্রেস- আপনি বরাবর হিট-দ্য-ডেক ধাঁচের বোলার ছিলেন। কিন্তু, এবারের আইপিএলে গুড লেংথে বল করেছেন। দুর্দান্ত অফ-কাটার বোলিং করেছেন। এসব কোথায় শিখলেন?
হর্ষিত- নিজের থেকেই শিখেছি। রঞ্জির ক্যাম্পের শুরুতে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পর আমি এনসিএ-তে বোলিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার মাথায় সবসময় ছিল, বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। চোট কাটিয়ে ফিরে আসার সময় সেটা নিয়েই কাজ করেছি।
এক্সপ্রেস- গত দু'বছর তো ভরত অরুণের কোচিংয়ে ছিলেন?
হর্ষিত- ভরত স্যারের অধীনে থেকে খুব আনন্দ পেয়েছি। উনি খুব ভালো শ্রোতা। আমি কিছু বললে, উনি সবসময় শুনেছেন। এমনিতে তিনি খুব বেশি কথা বলেন। কিন্তু, উনি আপনাকে মানসিক জোরটা পাইয়ে দেবেন। উনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার মধ্যে দক্ষতা আছে বলেই আইপিএলটা খেলতে পারছি। কিন্তু, দেশের হয়ে খেলতে গেলে এটুকু দক্ষতায় চলবে না। আমাকে দুর্দান্ত ওভার করতে হবে। যাতে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারি।
এক্সপ্রেস- মিচেল স্টার্ক থাকলেও শ্রেয়স আইয়ার আপনার ওপরই বেশি ভরসা রেখেছেন, কারণটা কী?
হর্ষিত- প্রতি ম্যাচে আমি পারফরম্যান্সটা ভালো করেছি। টিম ম্যানেজমেন্টও তাই আমার ওপর আস্থা রেখেছে। অধিনায়কের বিশ্বাস ছিল যে আমি দলের হয়ে ভালো বোলিং করতে পারব। আমিও শেষ ওভারে বোলিং করেও কয়েকটা ম্যাচ জিতিয়েছি।
এক্সপ্রেস- আপনি কি নিজেকে অলরাউন্ডার ভাবেন?
হর্ষিত- আরে, স্যার! দলীপ ট্রফিতে আমার সেঞ্চুরি আছে। আমি নিজেকে অলরাউন্ডারই মনে করি। এই আইপিএলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়মে আমি ব্যাট করার সুযোগ পাইনি। আমি কয়েকটা ছক্কাও মারতে চাইছিলাম। কিন্তু, দলের বাকিরা এত ভালো খেলেছে যে সুযোগটা পাইনি।
এক্সপ্রেস- আপনার কেরিয়ার তৈরিতে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
হর্ষিত- আমার বাবা প্রদীপ রানা। তিনিও অ্যাথলিট, হ্যামার থ্রোয়ার ছিলেন। তিনি সবসময় চাইতেন আমি কোনও না কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকি। আর, দেশের হয়ে খেলি। আমার ক্রিকেট ভালো লাগত না। বন্ধুদের সঙ্গে অবশ্য পাড়ায় খেলতাম। একদিন আমি স্কুলের (গঙ্গা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল) ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখতে গেছিলাম। বাড়ি ফিরতে দেরি করে ফেলি। বাবা জিজ্ঞাসা করেছিল, কোথায় গেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখতে। বাবা আমাকে পালটা জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি কি ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি? আমি একটু ভয়ে ভয়েই উত্তর দিয়েছিলাম, 'হ্যাঁ'। পরের দিনই উনি আমাকে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন।
এক্সপ্রেস- এরপর লক্ষ্য কী?
হর্ষিত- আমার ভারতীয় দলের জার্সি চাই। সেটা টি-২০, একদিনের ম্যাচ না টেস্ট দলের- সেটা বড় ব্যাপার না।