আইপিএল নিলামের পরেই আলিগড়ে এলপিজি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির স্টোরেজ কম্পাউন্ড শহরের আলোচনায় উঠে এসেছিল। ছোটখাটো বাড়ির মালিক যে স্বয়ং রিঙ্কু সিং। যাঁকে নিলামে কেকেআর কিনে নিয়েছিল শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্স। ২০ বছরের অলরাউন্ডারকে পাওয়ার জন্য নাইটরা নিলামের টেবিলে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে। শেষমেশ কেকেআর সংসারে চলে আসেন উত্তরপ্রদেশের রিঙ্কু ৮০ লক্ষ টাকায়।
প্লে অফের লাইফ লাইন দিয়ে রিঙ্কু সিং যেদিন নাইটদের কঠিন চাপের ম্যাচ সহজ করে জেতাল সোমবার সেই বাড়ির আশেপাশ, পড়শি মহল আরও একবার আলোচনায় গমগম করে উঠল। রিঙ্কুর বাবা খানচন্দ্র বাড়ি বাড়ি এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। এক দাদা অটোরিকশা চালান। অন্য ভাই কোচিং সেন্টারে কাজ করেন। ছেঁড়া কাঁথাতে শুয়েই যে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা যায়- সেই আখ্যানই যেন রিঙ্কু সিংয়ের কেরিয়ারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজস্থান ম্যাচে রিঙ্কু তালুতে কেন ৫০ লিখে নামলেন! রহস্য ফাঁস ম্যাচের শেষেই
তাঁকে নিয়ে যখন নিলাম-যুদ্ধ চলছিল কেকেআর এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মধ্যে, সেই সময় রিঙ্কু নিজের মনে মনেই বলে চলেছিলেন, "ভেবেছিলাম ২০ লাখেই বিক্রি হয়ে যাব। আমার দাম তো ৮০ লাখে পৌঁছে গেল। এত টাকায় প্ৰথম যে চিন্তা মাথায় চলে এসেছিল তা হল, ভাইয়ের এবং বোনের বিয়ের জন্য কিছু জমিয়ে রাখা। আর একটা ভালো ঘরে শিফট হয়ে যেতে হবে।"
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। সময়ের অনেক কঠিন স্রোত পেরিয়ে এসেছেন এই বয়সেই। তিন বছর সগে পরিবার দেনায় ডুবে গিয়েছিল। পাঁচ লাখ টাকায়6 দেনা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল রিঙ্কুদের। সেই টাকা প্রায় পরিশোধের সীমার বাইরে চলে গিয়েছিল। নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ না হতে পারা রিঙ্কু তখনই ভেবে ফেলেছিল আর্থিক এই দৈন্যতা ঘোচাতে পারে একমাত্র ক্রিকেট।
উত্তরপ্রদেশের যুব ক্রিকেট দলে খেলার সময় থেকে কিছু অর্থ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল পরিবারের দেনা শোধ করতে। বছর দুয়েক আগে জাতীয় যুব দলে খেলার দাবি জোরদারভাবে পেশ করেছিলেন তিনি। তবে শেষমেশ যুব বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
"বাবা মাসিক ৬-৭ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। বড় ভাইয়েরও উপার্জন এরকম ছিল। পরিবারের কঠিন সময় যেন শেষই হচ্ছিল না। ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছুতে ফোকাস করার জায়গাই ছিল না। জীবনে অনেক স্ট্রাগল করেছি। ঈশ্বর যেন তাঁর মূল্য ফিরিয়ে দেন।" বলছিলেন রিঙ্কু।
রিঙ্কুও পরিবারের আস্থা অর্জন করছিলেন ধারাবাহিক নিয়মিত পারফরম্যান্স করে। দিল্লিতে এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সিরিজ সেরা হয়ে মোটর বাইক উপহার পেয়েছিলেন। সেই মোটরসাইকেল শেষমেষ কাজে লেগে যায় বাবার গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন: অন্যায্য ওয়াইড রাজস্থানকে, আম্পায়ারের ভুলের পুরো ফায়দা নিল KKR, দেখুন বিতর্কিত ঘটনা
তবুও ক্রিকেট যে তাঁকে যশ, প্রতিপত্তি এনে দেবে, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না রিঙ্কু। সংশয় থাকার কারণেই রিঙ্কু ভাইকে বলেছিলেন নতুন কাজের সন্ধান করে দিতে। "ভাই আমাকে একটা কাজ দেখে দিয়েছিল, যেখানে সাফাই, ঝাড়পোঁছের কাজ করতে হবে। বাড়িতে ফিরে এসে মাকে বলি, আর কোনওদিন ওখানে যাব না। ক্রিকেটেই নিজের ভাগ্য পরখ করতে দাও।" আহত গলায় বলছিলেন তিনি।
৯টা রঞ্জি ট্রফি ম্যাচে রিঙ্কু ৪৯ গড়ে ৬৯২ রান করেছেন। ধীরে ধীরে নজরে চলে আসছিলেন। গত বছরে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব রিংকুকে কিনেছিল। তবে একটাও ম্যাচে নামার সুযোগ পাননি। ভাগ্য বদলে গিয়েছিল যখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ট্রায়ালের জন্য ডেকে নিয়েছিল তাঁকে। সেই সময় ৩১ বলে ৯১ রানের ইনিংসে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
রিঙ্কু বলছিলেন, "মনে হচ্ছিল, আমার ইনিংস প্রভাব ফেলছে। ঘরোয়া ক্রিকেট দারুণ কেটেছিল। জানতাম নিলামে কোনও না কোনও দল আমাকে নেবে। তবে সেটা যে এই বিশাল অর্থের বিনিময়ে, ভাবতে পারিনি। আমাদের বংশে কেউ এত টাকা দেখেনি।"