মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বরাবর স্লো স্টার্টার। অর্থাৎ শুরুটা ঐতিহাসিকভাবে খারাপ করেন রোহিত শর্মারা। এবারেও সেই ঘটনার ব্রাত্যয় ঘটেনি। টানা পাঁচ ম্যাচ প্রথমেই হেরে বসেছে মুম্বই। ২০১৪ সালে শেষবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে এরকম অসহায় লেগেছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার দীর্ঘ আট বছর পরে।
২০১৪-য় আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন রোহিতরা। শেষ নয় ম্যাচের সাতটিতে জিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স প্লে অফে পৌঁছে যায়। যদিও শেষমেশ সিএসকের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় মুম্বইয়ের।
এবার কিন্তু পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো। একাধিক তারকাকে নিলামের আগে ছেড়ে দেওয়ার পরে মুম্বই সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বোলিং বিভাগে। জোফ্রা আর্চার নেই চোটের কারণে। বাকি বোলাররা প্রতিপক্ষের কাছে রান মেশিন হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া একাধিক সিনিয়র তারকা ফর্মে নেই, দল গঠনেও বিস্তর গলদ- এবারে মুম্বইয়ের সমস্যা অনেক গভীরে।
আরও পড়ুন: পাক ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা ভারতে এসেছিল নজরদারি করতে! বিষ্ফোরক পিসিবির প্রাক্তন চেয়ারম্যান
পাঞ্জাব কিংসের কাছে বুধবার হারের পরে হেড কোচ মাহেলা জয়বর্ধনে জানিয়ে দিয়েছেন, জোফ্রা আর্চারের না থাকা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কান কোচ বলেছেন, "নিলামের অন্যতম সেরা বোলার ছিল জফ (জোফ্রা আর্চার)। জফ খেলতে পারছে না। তাই এরকম পরিস্থিতিতে এটা রীতিমত চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে।"
জোফ্রা আর্চার থাকলে একাধিক সমস্যার যে তুরন্ত সমাধান হয়ে যেত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০ ওভারের ইনিংসে যেকোনও সময় বুমরার সঙ্গে পার্টনারশিপে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামানো হোক, বা পোলার্ডের পরে ব্যাটিং অর্ডারে পিঞ্চহিটারের ভূমিকা পালন করা- জোফ্রা মুশকিল আসান করতেন। তবে জোফ্রাকে চলতি আইপিএলে পাওয়া যাবে না জেনেই কিনেছে মুম্বই।
জোফ্রার অনুপস্থিতিতে ড্যানিয়েল স্যামস, টাইমাল মিলসদের নিয়ে কোনওরকমে কাজ চালানোর চেষ্টা করছে মুম্বই। তবে তা একদমই কাজে আসেনি। নূন্যতম চার ওভার বল করা চলতি আইপিএলে ইকোনমি রেটের বিচারে স্যামস আপাতত দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম। এই তালিকায় মিলসের অবস্থান ৫২তম (৭২ জনের মধ্যে) তিন ম্যাচে স্যামস রান বিলিয়েছেন ওভার পিছু ১২.৬৩ গড়ে। মিলসের ইকোনমি রেট ৯.৭১।
আরও পড়ুন: ভেবেছিলাম মুম্বইয়ের নেতৃত্ব ছাড়বে রোহিত! কোহলির প্রসঙ্গ টেনে বিষ্ফোরক তারকা
বাসিল থাম্পি, জয়দেব উনাদকাটের মত ভারতীয় সিমাররাও কেউ সেভাবে নজর কাড়তে পারছেন না। এমন অবস্থায় কায়রণ পোলার্ডকে দিয়েও পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৭ ওভার বল করানো হয়েছে। যা রীতিমত আশ্চর্যের। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ডেথ ওভারে পোলার্ড মুম্বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অপশন ছিলেন।
পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে বোলিং লাইন আপের শক্তি বাড়িয়ে একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়ে মাঠে নেমেছিল মুম্বই। তবে তা কাজে আসেনি। মুম্বইয়ের হতশ্রী বোলিং লাইন আপ পাঞ্জাবের সামনে ১৯৯ রান খরচ করে বসে। আর ব্যাট করতে নেমে জোড়া ওপেনার দ্রুত আউট হওয়ার পরে তরুণ তিলক ভার্মা এবং দেওয়াল্ড ব্রেভিসের ওপর যাবতীয় চাপ এসে পড়ে। প্ৰথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার পরে ঈশান কিষানের ব্যাটিং এখনও পর্যন্ত নিশ্চুপ। এভাবে চললে আর কয়েকদিন বাদেই হয়ত তাঁর প্রাইস ট্যাগ নিয়ে কথা উঠবে। অন্যদিকে, রোহিত শর্মাও চূড়ান্ত রান খরায় ভুগছেন। যদিও কোচ জয়াবর্ধনে তারকার পাশেই দাঁড়াচ্ছেন।
এই মুহূর্তে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হারানোর কিছুই নেই। প্লে অফে যাওয়ার আশা কার্যত শেষ। এমন অবস্থায় সিএসকের টেমপ্লেট ফলো করতে পারেন রোহিতরা। দলের পাশে দাঁড়িয়ে একই টিম খেলিয়ে যাওয়া।
মুম্বই নিজেদের একাদশে এই মুহূর্তে পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালাতে পারে। কয়েক বছর আগে হলেও অফফর্মের রোহিত নিজেকে মিডল অর্ডারে ঠেলে নিতেন। এবারেও সেরকম কিছু ঘটতেই পারে। টিম ডেভিড অথবা ফ্যাবিয়েন এলেনকে দলে নিয়ে রোহিতকে মিডল অর্ডারে দেখা যেতে পারে।
আপাতত মুম্বইকে একাধিক বিষয়ে ত্রুটি মেরামত করতে হবে। সেরা একাদশ বাছাই করে মাঠে নেমে সেরাটা দিতে হবে। আপাতত প্রত্যেক ম্যাচ ধরে হিসাব করতে হবে রোহিতদের।