ওস্তাদ ধোনির মার শেষ রাতে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। তবে এল ক্ল্যাসিকোয় ধোনি নন, ম্যাচ সেরার শিরোপা জিতে নিয়েছেন অনামি মুকেশ চৌধুরি। মুম্বইয়ের ব্যাটিংকে ধসিয়ে দেওয়ার মুখ্য কারিগর যিনি।
চলতি আইপিএলের আগে ভারতীয় ক্রিকেটে কার্যত অপরিচিত ছিলেন মুকেশ চৌধুরি। তবে চলতি আইপিএলে দীপক চাহারের পরিবর্তে সিএসকের পাওয়ার প্লে-র মূল বাজি হয়ে দাঁড়িয়েছেন ৩৯ বছরের এই সিমার।
আইপিএলে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২টো ম্যাচে জিতেছে চেন্নাই। সিএসকের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পিছনে অনেকটাই কারণ চাহারের চোট পেয়ে গোটা মরসুম থেকে ছিটকে যাওয়া। মুম্বই ম্যাচের আগে পাওয়ার প্লে-তে সিএসকে বোলাররা ধারাবাহিকভাবে খারাপ পারফরম্যান্স করে চলেছিলেন।
আরও পড়ুন: টানা ৭ ম্যাচে হার, এখনও প্লে অফে যেতে পারে মুম্বই! কীভাবে সম্ভব, জানুন অঙ্কের হিসাব
তবে মুম্বই ম্যাচে মুকেশ চৌধুরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, দল তাঁর ওপর ভরসা রাখতেই পারে। প্ৰথম ওভারেই মুকেশ চৌধুরির বলের শিকার মুম্বইয়ের দুই হেভিওয়েট ওপেনার- রোহিত শর্মা এবং ঈশান কিষান। দুজনেই রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। চেন্নাইয়ের বাঁ হাতি সিমার ৩ ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে মুম্বইয়ের টপ অর্ডারে ভাঙচুর চালান। রোহিত, ঈশানের সঙ্গেই মুকেশের তৃতীয় শিকার দেওয়াল্ড ব্রেভিস।
দুর্ধর্ষ ম্যাচের পরে মুকেশ জানিয়ে দেন, তিনি কখনও যে পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেবেন, তা ভাবেননি। আনক্যাপড ভারতীয় পেসার জানিয়ে দিয়েছেন, "কখনই ভাবিনি ক্রিকেট খেলব। পুনেতে বোর্ডিং স্কুলে পড়তাম। স্পোর্টস পিরিয়ডের জন্য একঘন্টা বরাদ্দ থাকত। সেখানে সমস্ত ধরনের খেলা খেলতাম আমরা। সেই সময়ে ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি বেশ ভালোই খেলি। পাওয়ার প্লে-তে তিন ওভার বল করতে হয়। তাই সেই ওভারে ভালো করাটা জরুরি ছিল।"
বেড়ে ওঠা রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলায়। গ্রামে ক্রিকেট খেলার কোনও ক্লাবই ছিল না। টেনিস বলে খেলতেন। গ্রামে শিক্ষার কোনও পরিকাঠামো ছিল না। তাই মুকেশের বাবা পাঠিয়ে দেন পুণের বোর্ডিং স্কুলে। সেখানেই টেনিস বল ছেড়ে লেদার বলে খেলার প্রাথমিক পাঠ।
বোর্ডিং ক্রিকেটে দুরন্ত খেলা থেকে মহারাষ্ট্রের রঞ্জি দলের সদস্য হতে সময় লেগেছিল পাক্কা দু-বছর। তবে পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিচ্ছেন, তা বাবা-মা'কে একটা সময় পর্যন্ত জানাননি। জানতেন কেবলমাত্র ভাই। বেশ কয়েক বছর ধরে মুকেশ সিএসকের নেট বোলার হিসাবে স্কোয়াডে যুক্ত ছিলেন। এবার নিলামের আগে ২০ লক্ষ টাকার বেস প্রাইসে চেন্নাই কেনে নিজেদেরই নেট বোলার প্রশান্ত সোলঙ্কি এবং মুকেশ চৌধুরিকে।
আরও পড়ুন: ধোনির শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস ফিনিশিং, চার-ছক্কায় কীভাবে উঠল ১৭ রান! দেখুন ভিডিও
সিএসকের মত দলের জার্সিতে পাওয়ার প্লে-তে বোলিং করা, প্রবল চাপের বিষয়। তবে মুকেশ জানাচ্ছেন, দলে একাধিক বার ক্রিকেটারদের সান্নিধ্য চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। "চারপাশে এত বড় বড় ক্রিকেটার যে সেই অর্থে কোনও চাপই অনুভব করিনি। ওঁরাই অটোমেটিকভাবে সমস্ত চাপ সরিয়ে দেয়। স্রেফ নিজের খেলা উপভোগ করতে চাইছি।" বলে দিয়েছেন মুকেশ।
ম্যাচের পরে ক্যাপ্টেন জাদেজাও মুকেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে জাদেজার পরামর্শ, ফিল্ডিংয়ে মুকেশকে আরও উন্নতি করতে হবে। জাদেজার বক্তব্য, "মুকেশ দুরন্ত বোলিং করে গেল, বিশেষ করে পাওয়ার প্লে-তে। ম্যাচ না জিতলেও শান্ত থাকতে হয়। (নিজের ক্যাচ ফেলার প্রসঙ্গে) এমনটা ঘটেই থাকে। এই কারণেই কখনও ফিল্ডিং সহজভাবে নিইনা। বরাবর অনুশীলনে ফিল্ডিংয়ে কঠোর পরিশ্রম করি। ফিল্ডিংয়ে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। কোনওভাবেই ক্যাচ ফেলা যাবে না।" মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়ে সিএসকে আপাতত টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় জয় পেল।