Lucknow Super Giants vs Punjab Kings, Mayank Yadav:
গোটা বিশ্ব জুড়েই পেস বোলারদের যম ধরা হয় তাঁকে। তবে শনিবারের রাতটা অন্যরকম ছিল। আইপিএলে অভিষিক্ত এক পেসার যে এভাবে কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে, কস্মিনকালেও ভাবেননি জনি বেয়ারস্টো। ব্যাক অফ দ্য লেন্থ বল ধেয়ে এসেছিল তাঁর কাছে। তিনি পুল হাঁকিয়েছিলেন কিছুটা অস্পষ্টভাবেই। বাকিটা সহজ ক্যাচ। মায়াঙ্ক যাদব আইপিএল অভিষেকেই হইচই ফেলে দিয়েছেন রুদ্ধশ্বাস স্পেলে। ২৭ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট। এর মধ্যে ১৫৫.৮ কিমি সেই সুপার সনিক গতির ডেলিভারিও রয়েছে।
মায়াঙ্কের এই গতি-প্রীতির নেপথ্যে রয়েছেন বাবা প্রভু যাদব। কার্টলি এমব্রোজের গল্প বলার ফাঁকে তিনিই যে সেই গতির বীজ পুঁতে দিয়েছিলেন শিশু মায়াঙ্কের মনে।
মায়াঙ্ক যেদিন আইপিএলে অভিষেক ঘটাচ্ছিলেন, সেই সময় সিনিয়র যাদব গিয়েছিলেন ফ্যাক্টরির কাজে। ফ্যাক্টরিতে এম্বুলেন্স এবং পুলিশ গাড়ির সাইরেন তৈরি হয়। বাড়ি ফেরার পথে দাঁড়িয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ্বরা কলেজের সামনে। তারপর পুত্রের দুর্ধর্ষ স্পেলে বুকে শান্তি পেয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বাড়ি ফেরার সময়েই বলছিলেন, "ওঁকে কেন ব্যাটসম্যানরা ভয় পান জানেন? ও মাথা লক্ষ্য করে বোলিং করে। ওঁকে বলেছিলাম ব্যাটারদের ভয় পাওয়াতে হলে হেলমেট টার্গেট করে বল করতে হবে। সেই কারণে ওঁকে ব্যাটাররা এত বেশি ভয় পায়। শৈশব থেকেই এভাবে বোলিং করে এসেছে ও। দিল্লি ক্রিকেট সার্কিটে মায়াঙ্ক হেলমেট তাক করা বোলার হিসাবে পরিচিত।"
শনিবার যখন পাঞ্জাব ব্যাটারদের গতির কড়াইয়ে ভাজছেন মায়াঙ্ক, সেই সময়েই গতির জাদুকর ব্রেট লি টুইট করলেন, "ভারত নিজেদের দ্রুততম বোলার খুঁজে পেল। কাঁচা পেস রয়েছে। ইম্প্রেসিভ।" ম্যাচের শেষে মায়াঙ্ক বলছিলেন, "জীবনেও সবসময় গতি পছন্দ করি। রকেট, জেট প্লেন, সুপার বাইকস আমার পছন্দের।"
সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১৫৩ কিমি গতিতে বোলিং করার পরেই নির্বাচকদের নজরে ছিলেন। এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও একসময় ভাবা হয়েছিল তাঁকে। সাইড স্ট্রেনের সমস্যা ছিল। ভাবা হয়েছিল, জানুয়ারির মধ্যেই পুরো ফিট হয়ে যাবেন। সেই সময় মায়াঙ্ক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, "৬০ শতাংশ ফিট থাকলেও এক পায়ে খেলার চেষ্টা করব।"
বিরাট কোহলি যেখান থেকে বেড়ে উঠেছেন, তাঁর কিছু দূরেই পশ্চিম দিল্লির মোতিনগরের বাসিন্দা মায়াঙ্ক। শৈশব থেকেই দিল্লির স্পিডস্টারকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফাস্ট বোলার হতে চাইলে কার্টলি এমব্রোজের মত হও। বাবা প্রভু যাদব ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির ফ্যান হলেও পুত্র মায়াঙ্ক আবার ছিলেন ডেল স্টেইনের অন্ধভক্ত। প্রভু যাদব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, "এমব্রোজ, ওয়ালশ আমার পছন্দের বোলার। যেভাবে ওঁরা গতি ব্যবহার করে বাউন্সার দিত, সেটা দারুণ লাগত। মায়াঙ্ককে শৈশব থেকেই ওঁদের গল্প শোনাতাম।"
তবে পুত্র মায়াঙ্ক স্টেইনের ফ্যান হওয়ায় পাল্টা বাবাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, "তোমার এমব্রোজ কি আমার স্টেইনের থেকেও ভালো? এরপরে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাতাবরণ তৈরি করে ফেলেছিলাম।"
ঋষভ পন্থের কোচ তারক সিনহার অবদান
লিস্ট-এ ক্রিকেটে মায়াঙ্ককে ব্রেক থ্রু দিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান। সেই ধাওয়ানকেই গতিতে নাজেহাল করে ছাড়লেন তিনি। যুব পর্যায়ে অনুর্ধ্ব-১৪ বা ১৬ পর্যায়ে কখনও খেলেননি। তবে উঠতি পেসারকে স্পট করেছিলেন ঋষভ পন্থের বাঙালি কোচ তারক সিনহা। প্রয়াত তারক সিনহার সঙ্গে জুড়ে যাওয়া সনেট ক্লাবের বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম দেবেন্দর শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, "একবার কোনও কিশোরকে দেখেই তার প্রতিভা যাচাই করার বিরল ক্ষমতা ছিল তারক সিনহার। যেমন ঋষভ পন্থ, মায়াঙ্ক যাদব। দিল্লি দলে ও সুযোগই পাচ্ছিল না। সার্ভিসেসের হয়ে তিন ফরম্যাটে খেলা এবং চাকরির অফার ছিল। তবে মায়াঙ্ক দিল্লি ছাড়েনি। তারক স্যারকে ও প্রমিস করেছিল দিল্লি দলে ও সুযোগ পেয়ে দেখাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তারক স্যার প্রয়াত হন।"
তারক সিনহার মৃত্যুর ঠিক একমাস পরে বিজয় হাজারে ট্রফিতে সুযোগ পান মায়াঙ্ক। চন্ডীগরের সেক্টর-১৬ স্টেডিয়ামে দিল্লির হয়ে অভিষেক ঘটে তাঁর। প্রতিপক্ষের জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। ৪৯ তম ওভারে মেডেন নিয়ে ম্যাচের ফয়সালা করে দেন মায়াঙ্ক।
তারক স্যারের প্রসঙ্গ উঠলে এখনও আবেগে বিহ্বল হয়ে যান পিতা প্রভু যাদব। বলছিলেন, "তারক স্যার ভগবানের মত। একবার আমার ব্যবসায় মন্দা চলছিল। সনেট ক্লাব সেই সময় এক ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সেই ক্যাম্পের অংশগহণ-এর জন্য প্রয়োজন ছিল ৬৫ হাজার টাকা। আমি দেবেন্দর ভাইকে অনুরোধ করি যাতে পরবর্তীতে সেই টাকা আমি পরিশোধ করতে পারি। সেই সময় আমার কাছে মাত্র ২০ হাজার টাকা ছিল। পার্স থেকে টাকা বের করার পরেই তারক স্যার তা ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। বলে দেন, এবার ক্যাম্পের ফিজ আমি দেব। ওঁর সেই কথা কখনই ভুলব না।"
ম্যাচের পর মায়াঙ্ক বলছিলেন দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য ফিটনেসে উন্নতি করতে হবে তাঁকে, "গত দু বছরে তিনটে বড় চোটের ধাক্কা সামলেছি। চোটের কারণে গত বছরের আইপিএল তো বটেই এবারের রঞ্জিও মিস করেছি। এই বিষয়ে আমাকে খাটতে হবে।"