করোনার তৃতীয় ঢেউ কার্যত বেআব্রু করে দিয়েছে আইএসএলের বায়ো নিরাপদ বাবলকে। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজির ফুটবলার থেকে সাপোর্ট স্টাফ আক্রান্ত। গত শনিবারের পরে এই শনিবারও স্থগিত হয়ে গেল সবুজ মেরুনের খেলা।
তবে করোনায় পথ হারিয়ে ফেলা আইএসএল একই বন্ধনীতে এনে ফেলেছে এটিকে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে। অদূরদর্শীতা, যোগ্য পরিকল্পনার অভাবের ব্র্যাকেটে ঠেলে দিয়েছে কলকাতার দুই প্রধানকে।
সবুজ মেরুন ব্রিগেড এখনও ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে নিজেদের দ্বিতীয় মরশুমে তলানিতে থাকা অভ্যেস করে ফেলেছে। তবুও কীভাবে মিলে যাচ্ছে দুই প্রধান?
আরও পড়ুন: ফের ধাক্কা সবুজ মেরুনে! ওড়িশার পরে ফের স্থগিত হল বেঙ্গালুরু ম্যাচ
এটিকে মোহনবাগান: গতবারের রানার্সরা এবারে ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার ছিল। প্ৰথমে কেরালা ব্লাস্টার্স, তারপরে ইস্টবেঙ্গলকে ডার্বিতে উড়িয়ে দিয়ে দুরন্ত সূচনা করেছিল মেরিনার্সরা। তারপরেই শুরু হয় হাবাস জমানার টালমাটাল পর্ব। রয় কৃষ্ণরা গোল পাচ্ছিলেন না। অন্যদিকে রক্ষণও ভালরকম ভোগাচ্ছিল সবুজ মেরুনকে। সন্দেশ জিংঘান ক্রোয়েশিয়ার সিবেনিকে খেলতে পাড়ি দিয়েছিলেন ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
অন্যদিকে তিরিকেও চোটের জন্য পাচ্ছিলেন না হাবাস। তৃতীয় ম্যাচে মুম্বইয়ের কাছে হঠাৎই পাঁচ গোল হজম করে বসে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি। তারপরে জামশেদপুরের কাছে হার এবং চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ম্যাচে জোড়া ড্রয়ের পরেই হাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে এটিকে মোহনবাগান।
ফুটবল মহলে প্ৰশ্ন উঠে গিয়েছিল, মাত্র চার ম্যাচে জয়হীন থাকার পরে কীভাবে আইএসএলের অন্যতম সফলতম কোচকে এভাবে দরজা দেখিয়ে দেওয়া হল?
আরও পড়ুন: কীভাবে সবুজ মেরুন শিবিরে করোনার হানা, জোড়া ঘটনায় উঠে যাচ্ছে আঙুল
এটিকে মোহনবাগানের তরফে অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবাশিস দত্ত সেই পরিস্থিতির বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলে দিয়েছেন, "হাবাসকে মোটেই ছাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। বরং উনিই ছেড়ে দিতে চাইছিলেন। অনিচ্ছুক ঘোড়াকও দিয়ে তো আর লম্বা রেসে নামা যায়না!"
হাবাস বিতর্ক সরিয়ে রাখলেও এটিকে মোহনবাগান শিবির উত্তাল হয়েছে মার্জার ইস্যুতে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বারবার সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং করেছেন 'break the merger' শব্দবন্ধনী। এই নিয়ে অবশ্য সবুজ মেরুনের শীর্ষকর্তারা কিছু বলতে চাইলেন না।
হাবাস বিদায়ের পরে অবশ্য মসৃন গতিতেই চলছে এটিকে মোহনবাগানের আইএসএল সফর। হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরু জোড়া ম্যাচ স্থগিত হওয়ার আগে টানা দুটো ম্যাচ এটিকে মোহনবাগানকে জিতিয়ে সেরা তিনে তুলে এনেছেন কোচ ফেরান্দো।
আরও পড়ুন: করোনার ঢেউ এবার বাগানে! শনিবারের বারবেলায় বিরাট দুঃসংবাদ মেরিনার্সদের
ইস্টবেঙ্গল:
বাগান শিবিরে হাবাস বিতর্ক মাথাচাড়া দিলে ইস্টবেঙ্গল অবশ্য দিন শুরু করছে বিতর্ককে সঙ্গী করে। বিদেশি বাছাই, জঘন্যতম পারফরম্যান্স, দলের প্রতি বিষোদগার করে স্প্যানিশ কোচের প্রস্থান, নতুন বিদেশি নিয়ে এসেও চুক্তি ঝুলিয়ে রাখা, ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্থানীয় কর্তার বিদ্রোহ, ফুটবলারদের অভিযোগ। একের পর এক বিতর্কে দগ্ধ হয়েছে ইস্টবেঙ্গল।
ক্লাবের অন্যতম এক শীর্ষকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানাচ্ছেন, "ক্লাবের ঐতিহ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। দূরদর্শিতা তো বটেই ম্যানেজমেন্টের সদিচ্ছা টুকুও নেই। ক্লাবের তরফে বহুবার এসব বিষয় জানানো হয়েছে। তবে কোনও প্রত্যুৎত্তর দেওয়া হয়নি। এতে ক্লাবই বেশি সাফার করছে।"
আরও পড়ুন: নতুন বছরে বিরাট সুখবর বাগানে! ইউরোপ ফেরত সুপারস্টার ফিরলেন দলে
আহত গলায় ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি গৌতম সরকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়ে দিলেন, "ক্লাবের খেলা দেখা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছি। দিনের পর দিন অসহ্য ফুটবল। জানি না, কতজন সমর্থক এই খেলা উপভোগ করছেন! মাঠে নেমে জীবন বাজি রেখে খেলতে নামতাম আমরা। আর এঁরা হাস্যকর পর্যায়ের ফুটবল খেলছে।"
"হীরা মন্ডল, আদিল খানরা লড়াই করছে। তবে সেটুকুও ও যথেষ্ট নয়। স্রেফ টাকা নিয়ে ক্লাবের জার্সি গায়ে চাপালাম, এটা তো পেশাদারিত্বের নিদর্শন হতে পারে না। ক্লাবের প্রতি সেই আনুগত্য, সেই ভালবাসা কোথায়? প্রচন্ড হতাশ হচ্ছি।"
ড্যানিয়েল চুকুকে রিলিজ করে জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার মার্সেলো ডস স্যান্টসকে। মিডফিল্ডার আমির ডার্বিসেভিচের বদলে আবার স্প্যানিশ এক মিডিও-কে উড়িয়ে নিয়ে আসা হলেও সই করানো হয়নি। কারণ একটাই, চুক্তি করানোর পরে যদি আইএসএল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নতুন স্প্যানিশ মিডিওকে চুক্তির পুরো অর্থ দিতে হবে। টাকা, টালবাহানার আক্ষেপ নিয়েই যে মরশুম ফিনিশ করতে হবে ইস্টবেঙ্গল কে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন