অনেক আশা নিয়ে টুর্নামেন্ট অভিযান শুরু হয়েছিল। ফেভারিট হিসাবে মরশুম শুরু করার পরে শেষমেশ জিতেই আইএসএল থেকে বিদায় ঘটে গিয়েছে। সেমিফাইনালে প্ৰথম লেগে কুখ্যাত ফলাফলই ফুলস্টপ ফেলে দিয়েছে এটিকে মোহনবাগানের সমস্ত স্বপ্নের।
কোটি কোটি টাকার দল গড়েও ব্যর্থতার এমন হাহাকার কেন, কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বারবার ময়নাতদন্তে উঠে আসছে রক্ষণ।
১) রক্ষণের ত্রুটি: গোটা টুর্নামেন্টে এটিকে মোহনবাগান তিরিশের ওপর গোল হজম করেছে। এই রক্ষণ নিয়ে আইএসএলের মত বড় টুর্নামেন্ট জেতা যায়না, এমনটাই বলে দিচ্ছেন বাগানের অতীতের মহারথীরা। ১৯৮৪-এ জাতীয় দলের হয়ে খেলা বিখ্যাত কৃষ্ণেন্দু রায় যেমন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে আক্ষেপ উজাড় করে দিলেন। বলে দিলেন, "এরকম রক্ষণ চোখে দেখা যায়না। হায়দরাবাদের বিপক্ষে প্ৰথম লেগের ম্যাচে এই রক্ষণ সত্যিই ভাবার বিষয়! কোনও কভারিং নেই, সময় মত ট্যাকল নেই। খুব হতাশ হয়েছি।"
কৃষ্ণেন্দু রায়ের সঙ্গে একমত তার5 একসময়ের সতীর্থ অলোক মুখোপাধ্যায়ও। তাঁরও নিশানায় বাগান রক্ষণ। সাফ বলছিলেন, "দ্বিতীয় লেগে দল ভাল খেলেছে। তবে প্ৰথম লেগে রক্ষণের চূড়ান্ত ব্যর্থতা শেষমেশ ফ্যাক্টর হয়ে গেল। শুরুতে তো মোহনবাগান গোল করেছিল। তারপরেই সেই রক্ষণ… কোনও কভারিং নেই, ক্লিয়ারেন্স নেই। এরকম হলে জয়ের আশা না করাই ভাল।"
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের জার্সিতে ব্যাটে ঝড় তোলেন কোহলি! বিরাটের বাঙালি কোচ এখনও সুখ-স্মৃতিতে ডুবে
২) ফ্লপ সন্দেশ: রক্ষণের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়েই বারবার উঠে আসছে সন্দেশ জিংঘানের পারফরম্যান্স। মরশুমের শুরুতে ভারত ছেড়ে ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন। তারপরে মাঝপথে পুরোনো দলে প্রত্যাবর্তন ঘটে চোট আঘাত সারিয়ে।
সন্দেশকে নিয়ে সরাসরি বাগান-প্রাক্তনী কৃষ্ণেন্দু রায় বলছিলেন, "সন্দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আদৌ কোনও লাভ হয়নি। কভার করা তো দূর ক্লিয়ার করতেও পারে না। হাইট ভাল, হেড করতে পারে। বাদবাকি যত কম বলা যায় ততই ভাল।" আরও চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলছিলেন, "এজেন্ট ধরে ক্রোয়েশিয়ায় ও গেল। তারপরে কী হল? যদি ভাল ডিফেন্ডারই হবে তাহলে ফিরে এল কেন?" অলোক মুখোপাধ্যায়ের গলাতেও সমালোচনার সুর। তিনি বলছিলেন, "সন্দেশ গতবারের ফর্মের ধারেকাছেও নেই। ক্রোয়েশিয়া থেকে চোট আঘাত সারিয়ে ফিরে দলের সঙ্গে যে খাপ খাওয়াতে পারেনি, তা স্পষ্ট।"
কাজে এল না ফেরান্দোর ট্যাকটিক্স (টুইটার)
৩) কোচের স্ট্র্যাটেজি: হাবাসের জমানায় একসময় লিগ টেবিলে ক্রমাগত পতন অব্যাহত ছিল বাগানের। তারপরই এফসি গোয়ার হেড স্যার হুয়ান ফেরান্দোকে বেনজির দল-বদলে সই করায় সবুজ মেরুন শিবির। ফেরান্দোর হাত ধরে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। কৃষ্ণেন্দু রায়ের বক্তব্য, "বারবার কোচ বদল মোটেই ভাল নয়। তবে হাবাসকে সরিয়ে ভালোই হয়েছে। ফেরান্দো তো ভালোই। এফসি গোয়া থেকে সই করিয়েছিল ওঁকে।"
ময়দানের মহীরুহ বিদেশ বসুর গলাতেও খুল্লামখুল্লা ফেরান্দো-স্তুতি, "এই টিম যে খারাপ মোটেও বলা যাবে না। হাবাস ছাড়ার পরে দলের হাল ধরেন ফেরান্দো। তারপরে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত দল। এই দলকে কীভাবে খারাপ বলব?"
সবুজ মেরুন জার্সিতে নজর কাড়লেন লিস্টন (টুইটার)
কৃষ্ণেন্দু রায়, বিদেশ বসুরা ফেরান্দোর প্রশংসা করলেও অলোক মুখোপাধ্যায় আবার স্প্যানিশ কোচের গেম রিডিং নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বলছেন, "দ্বিতীয় লেগে মনবীর, ডেভিড উইলিয়ামসকে অবশ্যই আগে নামানো উচিত ছিল। আগের ম্যাচে লিস্টন কোলাসো হঠাৎ তুলে নিল কেন, সেটাও বুঝলাম না!"
আরও পড়ুন: কৃষ্ণের গোলেও স্বপ্নভঙ্গ বাগানে, জিতেও ফাইনালে ওঠা হল না সবুজ মেরুনের
৪) চোট আঘাত: সন্দেশ জিংঘান তো বটেই, টানা ম্যাচ খেলায় চোট-আঘাতের খপ্পরে পড়ে দলের একাধিক তারকা। ডেভিড উইলিয়ামস, তিরি, রয় কৃষ্ণ সহ একাধিক তারকা চোটের কবলে। সেটাও অনেকটা ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে মনে করছে ময়দানি ফুটবল মহল।
সবমিলিয়ে, দুঃসময় কাটিয়ে আগামী মরশুমে ছন্দে ফিরবে দল, এমনটাই মনে করছে ময়দানি ফুটবল।