ইস্টবেঙ্গল: ১ (আলেক্স লিমা)
কেরালা ব্লাস্টার্স: ৩ (লুনা, ইভান কালিইউজনি-২)
একজন যুদ্ধের ভয়াবহ মিছিল দেখেছেন। অন্যজন সদ্য নিজের শিশু কন্যাকে হারিয়েছেন। ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির ঝুলি পেরিয়ে আইএসএল-এর প্ৰথম ম্যাচেই রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন দুই বিদেশি। আদ্রিয়ান লুনা এবং ইভান কালিইউজনি- উরুগুয়ে এবং ইউক্রেনের দুই ফুটবলার শুক্রবার ঝলসে দিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। ৩-১ গোলে লাল-হলুদ রংকে বিবর্ণ করার ম্যাচে লুনা কেরালার হয়ে গোলের সূচনা করেন। অন্যদিকে, দ্বিতীয়ার্ধের শেষলগ্নে নেমে ইভান জোড়া গোল করে স্টিফেনের ইস্টবেঙ্গলে শেষ পেরেক পুঁতে যান। আলেক্স লিমা একটি গোল শোধ করলেও তা দিনের শেষে স্বান্ত্বনা হয়েই রয়ে গেল।
গোটা ম্যাচে বল পজেশন, গোলমুখী শট হোক বা পাসিং- সবেতেই এগিয়ে কেরালা ব্লাস্টার্স। তবু গোল পেতে হলুদ জার্সির লেগে গেল ৭১ মিনিট। কারণ, একটাই সারা মাঠ দাপিয়ে খেললেও গোলের ফিনিশিংটাই হচ্ছিল না। যে সময় মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল আনকোরা নতুন দল নিয়ে হয়ত কোচির মাঠেই রুখে দেবে গতবারের ফাইনালিস্টদের, সেই সময়েই গোল লুনার।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ ডে’তেই মুখ খুললেন বাগানের তিরি! মনখারাপ করা বার্তায় গলিয়ে দিলেন হৃদয়
বিশ্বমানের গোল যা হামেশাই দেখা যায় ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলে, সেরকম এক গোলের মাধ্যমেই চলতি আইএসএল-র প্রথম গোল করে গেলেন সদ্য মেয়ে হারা লুনা। আকাশের তারা হয়ে যাওয়া মেয়ের ট্যাটু করিয়েছেন হাতে। গোলের জন্য ছটফট করছিলেন গোটা ম্যাচেই। যে শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পেল ৭১ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল যেভাবে ওয়ান টাচে কমলজিৎকে পেরিয়ে জালে রাখলেন তা মনে থেকে যাবে বহুদিন।
গোল আর তার পরবর্তী উদযাপনও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গোটা স্টেডিয়াম যেন হলুদ সর্ষে ফুলের ক্ষেত। সেই পাগল ফুটবল জনতাকে সাক্ষী রেখে দেখিয়ে গেলেন হাতে আঁকা মেয়ের ট্যাটু।
লুনার সঙ্গেই এদিন ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিকে সাক্ষী করে আইএসএল-এ নিজের প্ৰথম ম্যাচ স্মরণীয় করে গেলেন ইভান কলিউঝনি। যুদ্ধের সময় দেশে ফিরতে পারেননি বেশ কয়েকমাস। কাটাতে হয়েছিল বিদেশে। এবারই সই করেছেন আইএসএল-এ। আর প্ৰথম ম্যাচেই তিনি 'ভিনি, ভিডি, ভিশি'- এলেন দেখলেন, জয় করলেন! দ্বিতীয়ার্ধের একদম শেষের দিকে একদম পরিবর্ত হিসাবে আবির্ভাব ঘটেছিল ইউক্রেনীয় তারকার। আর প্ৰথম টাচেই ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স তছনছ করে দিয়ে গোল। এরপরে আলেক্স লিমা দুর্ধর্ষ ভলিতে ১-২ করে দিলেও ম্যাচের ফিনিশিংও করলেন ইভান। নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ মিনিটে কলিউজনিই দুরন্ত ভলিতে ৩-১ করে যান।
আইএসএল-এর প্ৰথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল যেন সিংহের গুহায়। হাজারে হাজারে হলুদ জার্সির সমর্থনে মিইয়ে গিয়েছিল গুটিকয়েক লাল-হলুদ জার্সিধারী সমর্থক। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েই দল সাজিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ। রক্ষণ শক্তপোক্ত করতে কিরিয়াকৌকে লেফট ব্যাক পজিশনে নামিয়ে দেন। ইভানের সঙ্গে স্টপার পজিশনে জুড়ে দেওয়া হয় যথারীতি নুঙ্গাকে। আপফ্রন্টে ক্লেইটনের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় সুহেরকে। ৩-৫-২ ছকে ম্যাচ শুরু করলেও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের মাঝেই ফর্মেশন বদলে প্রথাগত ৪-৪-২ হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: বাগানের নজরে থাকা স্ট্রাইকারই কাঁপিয়ে দিলেন রোনাল্ডোর Man U-কে, আক্ষেপ কি হচ্ছে কোচ ফেরান্দোর
বিরতির আগে কেরালা প্রায় সবেতেই এগিয়ে থাকলেও ইস্টবেঙ্গলও বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মোক্ষম সময়ে কনস্টানটাইন তুহিন দাস, কিরিয়াকৌকে তুলে অমরজিৎ সিং, জেরি এবং এলিয়ান্দ্রকে নামিয়ে ম্যাচে আগ্রাসী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে তিন-তিনটে বদলে ইস্টবেঙ্গলের বাঁ প্রান্ত একদম লঝঝরে হয়ে পড়ে। তার সুবিধা নিতে ভুল করেনি কেরালা।
ইস্টবেঙ্গল: কমলজিৎ, কিরিয়াকু, নুঙ্গা, ইভান গঞ্জালেজ, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, আলেক্স লিমা, তুহিন, সৌভিক চক্রবর্তী, ভিপি সুহের, ক্লেইটন সিলভা, সুমিত পাসসি