হাবাসকে গত মরশুমের মাঝপথে ছাঁটাই হতে হয়েছিল। হেভিওয়েট ফল নিয়েও স্প্যানিশ কোচ মোটেই সুবিধা করতে পারেননি। টানা ড্র এবং হারের আবর্তে শেষমেশ হাবাসকে রিলিজ করে সঙ্গেসঙ্গে কোচ হিসেবে নিয়ে আসা হয় এফসি গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে। তারপরে অবশ্য সবুজ মেরুন শিবিরের আস্থা জুগিয়েছেন নতুন স্প্যানিশ বস। আইএসএল-এ চ্যাম্পিয়ন না হলেও হাবাস জমানার দুর্দশা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল এটিকে মোহনবাগান। এএফসি কাপের যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্ব হোক বা মূল পর্ব- ফেরান্দোর বাগান অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটেছে।
চলতি ট্রান্সফার উইন্ডোয় এটিকে মোহনবাগান শিবিরে একাধিক রদবদল ঘটেছে। প্রবীর দাস, রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, অমরিন্দর সিং, সন্দেশ ঝিংগানদের মত তারকারা যেমন ছেড়ে গিয়েছেন, তেমন স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে ব্রেন্ডন হ্যামিল, ফ্লোরেন্তিন পোগবা, দিমিত্রি পেত্রাতোসের মত আন্তর্জাতিক তারকার। সেই সঙ্গে আশিক কুরুনিয়ান, আশিস রাই, বিশাল কাইথদের মত তরুণ প্রতিভাদের সই করিয়েও নিজেদের দল গুছিয়ে নিয়েছে এটিকে মোহনবাগান।
আরও পড়ুন: ভারত ছাড়লেন আইলিগ জয়ী মোহনবাগানের ‘বস’! সই করলেন স্প্যানিশ ক্লাবে
ফেরান্দোর স্ট্র্যাটেজিতে যে তিন ফুটবলার এবার বড়সড় ভূমিকা নিতে পারেন তারা-
আশিক কুরুনিয়ান: ফেরান্দো এবার উইংপ্লে ভিত্তিক পাসিং ফুটবল খেলতে চাইছেন। এমন স্ট্র্যাটেজিতে দুই সাইড ব্যাক এবং উইঙ্গারদের বড়সড় ভূমিকা থাকে। আশিক সাইড ব্যাক তো বটেই উইঙ্গার হিসাবে খেলতেও স্বচ্ছন্দ। স্প্যানিশ কোচ এমনই একজন ইউটিলিটি ফুটবলার খুঁজছিলেন। যিনি ম্যাচের ফর্মেশন অনুযায়ী দুই পজিশনেই খেলতে পারবেন।
বাগানের স্প্যানিশ কোচ প্রতিপক্ষ অর্ধে আক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ট্রাডিশনাল ভাবেই ফুলব্যাকদের ব্যবহার করেন। আশিক এবং আশিসের জুটি এবার লিগের অন্যতম সেরা হয়ে উঠতে পারে। দুজনের গতি এবং স্কিল বারবার বিপক্ষের এটাকিং থার্ডে আক্রমণ তুলে নিয়ে যেতে যাবে।
হুয়ান ফেরান্দোর সিস্টেমে ফুলব্যাকের বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এফসি গোয়ার কোচিংয়ের সময়েই ফেরান্দোর ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়াস ছিল জোড়া ফুলব্যাক। তাই দুই প্রান্ত বরাবর মুভ করার ক্ষেত্রে আশিক কুরুনিয়ান এবার এটিকে মোহনবাগানের অন্যতম সেরা সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
ফ্লোরেন্তিন পোগবা: এএফসি কাপ এবং আইএসএলের দিকে নজর রেখেই এবার রক্ষণ সংগঠন মজবুত করার দিকে নজর দিয়েছেন কোচ হুয়ান ফেরান্দো। সেই কারণেই তিরি, কার্ল ম্যাকহিউয়ের মত পরীক্ষিত স্টপাররা থাকলেও ফ্লোরেন্তিন পোগবা এবং ব্রেন্ডন হ্যামিলকে সই করিয়েছে সবুজ মেরুম শিবির।
আরও পড়ুন: যুব বিশ্বকাপে খেলা স্ট্রাইকারকে চেয়েও পেল না ইস্টবেঙ্গল! তারকার মন বদলাল শেষ মুহূর্তে
এর মধ্যে তিরি আপাতত দ্বিতীয় ট্রান্সফার উইন্ডোর আগে দলে ঢুকবেন না। সেন্ট্রাল ব্যাক হিসাবে পোগবার ভূমিকা এবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। কার্ল ম্যাকহিউ অথবা ব্রেন্ডন হ্যামিলের সঙ্গে জুটি বাঁধতে হবে তাঁকে।
ঘটনা হল কেবলমাত্র স্টপার হিসাবেই নয়, কোচ ফেরান্দো ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন সিনিয়র পোগবাকে। তিনিও ইউটিলিটি ফুটবলার। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে খেললেও দ্রুত আক্রমণে উঠতে পারেন। ফ্রান্সের দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাবে অন্তত একাধিকবার আক্রমণের সূচনা করেছেন তিনি। ডিফেন্সিভ কোয়ালিটি তো বটেই আক্রমণাত্মক হিসাবেও ফেরান্দোর রণকৌশলে দারুণভাবে খাপ খেয়ে যাবেন তিনি।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের খেলা থাকলেই কালীঘাটে পুজো দিতেন মা! সবুজ মেরুন তাঁবুতে আবেগরুদ্ধ মমতা
দিমিত্রি পেত্রাতোস: রয়-ডেভিড দল ছাড়ার পরে ভাবা হয়েছিল একজন বক্স স্ট্রাইকার নেবে এটিকে মোহনবাগান শিবির। তবে ফেরান্দো এবার সই করিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দিমিত্রি পেত্রাতোসকে। তবে এ লিগে সাফল্যের সঙ্গে খেলা পেত্রাতোস একদমই প্রথাগত স্ট্রাইকার নন। উইথড্রয়াল পজিশনেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ।
পেত্রাতোসের অন্তর্ভুক্তির পরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তাহলে কি বিদেশি স্ট্রাইকার ছাড়াই এবার স্বদেশীদের নিয়ে আক্রমণ সাজাবেন স্প্যানিশ কোচ।
এমনিতেই লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং স্ট্রাইকার হিসাবে বেশ সফল। জাতীয় দলে কোচ স্টিম্যাচের সিস্টেমেও দারুণভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছেন দুই তারকা। তবে ঘটনা হল, দুজনকে একদম আপফ্রন্টে ঠেলে দিলে এটাকিং থার্ডে সৃজনশীলতার অভাব ঘটতে পারে।
সবমিলিয়ে এবার ফেরান্দো স্ট্রাইকার-বিহীন ফর্মুলায় দল সাজাতে পারেন। যেখানে কোনও বক্স স্ট্রাইকার ছাড়াই নামতে দেখা যেতে পারে সবুজ মেরুন তারকাদের। সেক্ষেত্রে ফলস নাইন পজিশনে ফেরান্দোর তুরুপের তাস হতে পারেন পেত্রাতোস।