একাধিক ক্লাবের প্রস্তাব ছিল। ইস্টবেঙ্গল, মুম্বই সিটি এফসি, নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড তো বটেই এ লিগের ওয়েলিংটন ফিনিক্সের হয়েও খেলার অফার ছিল রয় কৃষ্ণের কাছে। তবে শেষ ধাপে বাজিমাত করে ফিজির জাতীয় দলের তারকা স্ট্রাইকারকে তুলে নিল বেঙ্গালুরু এফসি।
দু-বছরের চুক্তিতে তারকার যোগদান সোমবার সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হল বেঙ্গালুরু এফসির তরফে। পরে আরও একবছর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির অপশনও থাকছে। নিজের চুক্তি সম্পন্ন করেই রয় কৃষ্ণ জানিয়ে দিয়েছেন, "বেঙ্গালুরু দলে যোগ দিতে পেরে আমি রীতিমতো উত্তেজিত। কোচের (সাইমন গ্রেসন) সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছে। আমার সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর একদম প্ৰথমদিকেই উনি বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন যে ক্লাবের ফর্মেশনে বেশ প্রভাব ফেলতে পারব আমি। বরাবর বেঙ্গালুরুর খেলার তারিফ করে এসেছি। ওঁরা কয়েক বছরে যেভাবে উন্নতি করেছে, তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়।"
আরও পড়ুন: মহামেডানের মুখের গ্রাস কাড়ল ইস্টবেঙ্গল! গেইলের দেশের সুপারস্টার এবার লাল-হলুদে
লাবাসায় বেড়ে ওঠা। ২০০৮-এ প্ৰথমবার বিদেশ যাত্রা। নিউজিল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপের দল ওয়েতাকেরে ইউনাইটেডে নাম লেখান। তারপর টানা ছয় মরশুম ওয়েতাকেরের জার্সিতে ৭৫ ম্যাচে ৫৫ গোল করেন। ২০১২/১৩-য় নিউজিল্যান্ডের লিগের গোল্ডেন বুট পুরস্কারও অর্জন করে নেন তিনি। এরপরে অল্প সময়ের জন্য খেলেন অকল্যান্ড সিটির হয়ে। যেখানে প্ৰথম ফিজির ফুটবলার হিসাবে ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের প্লে অফে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন রাজা কাসাব্লাঙ্কার হয়ে। এরপরে তিনি নাম লেখান এ লিগের নামি দল ওয়েলিংটন ফিনিক্সের হয়ে।
কৃষ্ণ বলছেন, "বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে যখনই খেলতে নেমেছি, তখনই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছে। সহজ সরল ম্যাচ কখনও খেলিনি। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলার সময় বরাবর আলাদা আলাদা স্ট্রাটেজি নিয়ে খেলতে হয়েছে আমাদের। শুরু থেকেই বেঙ্গালুরু আমার মনে ছাপ ফেলেছিল। তবে বেঙ্গালুরুকে হ্যাঁ বলতে কিছুটা সময় নিয়েছি পারিবারিক ফ্যাক্টরের জন্য। তারপরে পুরো বিষয়টি যেভাবে গড়িয়েছে তাতে বেশ খুশি। সবথেকে বড় কথা প্রতিপক্ষ হিসাবে আর বেঙ্গালুরুর মোকাবিলা করতে হবে না, সেটা জেনেও ভালো লাগছে।"
আরও পড়ুন: সব জল্পনার অবসান! রাশিয়া বিশ্বকাপের স্ট্রাইকারকে সই করিয়ে চমক বাগানের
২০১৭/১৮-য় ওয়েলিংটন ফিনিক্সের হয়ে বর্ষসেরা ফুটবলারের তকমা পান। সেই বছরেই ১৮ গোল সমেত গোল্ডেন বুটও জিতে নেন। ফিনিক্সের হয়ে রয় কৃষ্ণ সর্বকালের সেরা গোলদাতা ৫১ বার বল জালে জড়িয়ে। আর কোনও ফিনিক্স স্ট্রাইকার একই মরশুমে ১৮ গোলের নজিরও গড়তে পারেনি এখনও পর্যন্ত।
আইএসএলে তিন সিজন খেলে রয় কৃষ্ণের নামের পাশে ৩৬ গোল, ১৮টি এসিস্ট। লিগে দু-বার সর্বোচ্চ গোলদাতার সম্মানও পেয়েছেন। ২০১৯/২০ মরশুমে এটিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরে রয় কৃষ্ণ ১৫ গোল করেছিলেন। ২০২০/২১-এ কৃষ্ণের নামের পাশে ১৪ গোল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বছরেও ফাইনালে পৌঁছয় এটিকে মোহনবাগান।
ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশনের ব্র্যান্ড আম্বাসাডর রয় কৃষ্ণ। জাতীয় দলের হয়ে অনুর্দ্ধ-২০, ২৩ দলেও খেলেছেন তারকা। ২০০৭-ও সাউথ প্যাসিফিক গেমসে সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক ঘটে। ২০১৬-য় রিও অলিম্পিকের প্ৰথম গোল ছিল রত কৃষ্ণের। মেক্সিকোর বিপক্ষে। অলিম্পিকে সেটাই ফিজির একমাত্র গোল। দেশের জার্সিতে ৪৫ ম্যাচে ৩১ গোল করে তিনিই আপাতত সর্বোচ্চ গোলদাতা।
বেঙ্গালুরুর হেড কোচ সাইমন গ্রেসন জানিয়েছেন, "কৃষ্ণ ভারতীয় ফুটবলে বেশ বড়সড় সই। ওঁকে দলে নিতে পেরে ভালো লাগছে। বছরের পর বছর ধরে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন কৃষ্ণ। দারুণ একজন গোলস্কোরার ও। আইএসএলে ওঁর অভিজ্ঞতাও আমাদের কাজে লাগবে। আমি নিশ্চিত দলের যুব ফুটবলাররা রয় এবং সুনীলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখবে।"