Jasprit Bumrah interview: এক্সপ্রেস আড্ডায় যোগ দিলেন জসপ্রিত বুমরাহ। মন খুলে কথা বললেন। প্যাট কামিন্স, ইমরান খান, কপিল দেবের উদাহরণ দিয়ে, বোলাররা ভালো অধিনায়ক হতে পারেন না, এই মিথ ভেঙে দিলেন। জসপ্রিতের সোজা কথা, 'আমি সত্যিই বোলারদের সম্পর্কে খুব বেশি ভাবি। আমি নিজে ফাস্ট বোলারদের ভক্ত। আমার মনে হয়, ক্রিকেট দুনিয়ায় তাঁরাই সবচেয়ে বেশি স্মার্ট।' বৃহস্পতিবার এক্সপ্রেস আড্ডায় ভারতের একনম্বর পেস বোলার বুমরাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সুযোগ পেলে তিনি ভারতের অধিনায়কত্ব করতে প্রস্তুত।
বুমরাহ বলেছেন, 'কে ক্যাপ্টেন হবে, সেটা আমি ঠিক করি না। আমি কারও কাছে গিয়ে বলতে পারব না যে, এখন আমাকে অধিনায়ক করতে হবে। আমার এত ক্ষমতা নেই। আমি বেতন পাই, এই পর্যন্ত।' বুমরাহর কথায়, 'আমি সবসময় বোলারদের পক্ষে। খেলার দুনিয়ায় বোলারদেরকেই বেশি নম্বর দেব। কারণ, বোলাররা সবসময় ফায়ারিং লাইনে থাকে। আর, ক্রিকেট এমন এক খেলা, যেন সেটা সবসময় ব্যাটসম্যানের দিকে ঝুঁকে আছে। আর, সেই জন্যই আমি আরও বেশি করে বোলারদের পক্ষে।'
আহমেদাবাদের এই আড্ডায় বুমরাহ বলেন, 'আমি মনে করি বোলাররা ভীষণ স্মার্ট। কারণ, তাঁদের ব্যাটসম্যানদেরকে আউট করতে হয়। সবসময় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। কারণ, মাঠ ছোট, ব্যাটের মান ভালো। আমার মনে হয় না, এমন কোনও প্রযুক্তি এখনও পর্যন্ত এসেছে, যা বোলারদের বল সুইং করতে সাহায্য করে।'
দর্শকরা যে ভালো বলের চেয়ে রান তোলাটাই বেশি পছন্দ করে, সেটাও অবশ্য গোপন করেননি বুমরাহ। তিনি বলেন, 'এটা ঠিকই যে, দর্শকরা চান যে ব্যাটার মাঠের চারপাশে বল মারুক। ছক্কা মারুক। কিন্তু, আমার মনে হয় বোলাররা রীতিমতো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেন। তাঁদের কঠিন কাজ করতে হয়। তাঁদের ব্যাটের আড়ালে লুকিয়ে থাকার উপায় নেই। আমরা বোলাররা যেন ঠিক ফায়ারিং লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।'
বুমরাহ বলেন, 'আমরা যখন ম্যাচ হারি, তখন সাধারণত বোলারদেরকেই দায়ী করা হয়। আর, সেই জন্যই আমি নিজের কাজটা করতে গর্ব অনুভব করি। বোলিং করতে অনেক সাহসের প্রয়োজন। শারীরিকভাবে শরীরে চাপও অনেক বেশি পড়ে। তারপরও যখন কোনও বোলার সেই খেলা উপভোগ করেন, তখন তাঁকে বেশ প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। এই সব চ্যালেঞ্জের জন্যই বোলারদের সফল হওয়ার জন্য উপায় খুঁজে বের করতে হয়। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়'
কপিল দেব, ইমরান খান ও প্যাট কামিন্সের মতো বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের উদাহরণ তুলে ধরে বুমরাহ বলেন, 'বোলাররা অধিনায়ক হিসেবে কতটা সফল এবং তাঁরা কতটা সাহসী, এই সব বিশিষ্টদের উদাহরণই তার প্রমাণ।' বুমরাহর কথায়, 'আমার মনে হয় যে নেতার সবসময় সাহসী হওয়া দরকার। আমি একথা বিশ্বাস করি। প্যাট কামিন্সকে সত্যিই ভালো অধিনায়কত্ব করতে দেখেছি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ওয়াসিম আক্রমকে অধিনায়কত্ব করতে দেখেছি। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন কপিল দেব। পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন ইমরান খান। এঁরা সকলেই বোলার ছিলেন। তাই আবারও বলব যে, বোলাররাই সবচেয়ে স্মার্ট। এটা ঠিক যে, তাঁদের ওপর কখনও সখনও শারীরিকভাবে বেশি চাপ পড়ে। মাঝে মধ্যেই ম্যাচের রাশ ব্যাটারদের হাতে চলে যায়। এটা যেমন ঠিক। তেমনই ব্যাটাররাও নেতা হিসেবে গুরুত্ব পান, এটাও ঠিক। তবে, সবটাই নির্ভর করে কোন দল কোনটা সঠিক মনে করে, কীভাবে টিম ম্যানেজমেন্ট কোনও দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তার ওপর। কিন্তু, আমি বোলারদের পক্ষে। বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের। আমার মনে হয়, ক্রিকেট ময়দানে বোলাররাই বেশি স্মার্ট।'
বুমরাহ নিজের কেরিয়ার থেকে উপলব্ধি করেছেন যে, একজন বোলারকে বেশি দায়িত্ব নিতে হয়। আর, তাতেই ম্যাচের চরিত্র বদলে যেতে পারে। বুমরাহর কথায়, 'আমার সম্পর্কে অনেকেই বলেছিলেন যে আমার বোলিং অ্যাকশন কোনও ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে না। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ফলাফল দেখুন। আসলে, কথা না বলে চেষ্টা চালালে লাভ হয়। প্যাট কামিন্সই এই ব্যাপারে বড় উদাহরণ। তাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া একদিনের বিশ্বকাপ জিতেছে। অনেক ম্যাচে সাফল্য পেয়েছে। একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে তাই কামিন্সের জন্য আমার গর্ব হয়।'
বুমরাহ বলেন, 'দায়িত্ব নেওয়াটা কোনও বোঝা নয়। একজন বোলার হিসেবে আমি অন্তত তাই মনে করি। আপনি পিছনের সারিতে চলে যেতে না চাইলে, পরিশ্রম করতে হবে। শান্তভাবে নিজের কাজটা করে যেতে হবে। আসলে দায়িত্ব নিতে হলে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, আমায় বল দিলে একটা ফারাক তৈরি করে দেব। অবশ্য, সবসময়ই যে ভালো কিছু করতে পারবেন, তা কিন্তু, নয়। আমি যতক্ষণ আছি, ভালো কিছু করতে চেষ্টা করি। ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করি। তার মধ্যেই চোট-আঘাত থাকে। চোট-আঘাত লাগতে পারে। আর, সেটা সবার জীবনেই ঘটতে পারে।'
খেলার মাঠে চোট-আঘাত লেগেই থাকে। সেই ব্যাপারে বলতে গিয়ে বুমরাহ বলেছেন, 'একজন ব্যাটসম্যানও মাথায় আঘাত পেতে পারেন। সেই আঘাতে তিনি মাঠের বাইরে চলে যেতে পারেন। তাহলে তখন আপনি কী বলবেন? তাহলে, একথা বলা যাবে না যে চোট-আঘাত শুধু ফাস্ট বোলারদেরই লাগে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ফাস্ট বোলিং একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু, সেটা নির্ভর করে, আপনি ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখছেন, তার ওপর। যদি এটি একটি গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে যে সেই গ্লাসের বাকি অংশটা কিন্তু খালি। সুতরাং চোট-আঘাত সারিয়ে বোলাররা কিন্তু, মাঠে ভালো পারফরম্যান্সও উপহার দিয়ে থাকেন।'
বুমরাহর মতে, 'ক্রিকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, একজন অধিনায়ক কীভাবে বোলিং করছেন, কীভাবে ফিল্ডারদের সেই সময় সেট করছেন, সেই ব্যাপারটা। কারণ, যখন দল ব্যাটিং করে, তখন অধিনায়কের সবাইকে নিয়ে ভিতরে বসে থাকতে হয়। সেই সময় ক্রিজে কেবল দুই জন লোক থাকে। তাই বোলিং পরিবর্তন করাটাই প্রধান। এক্ষেত্রে বোলারদের প্রতি অধিনায়কের সহানুভূতি থাকা দরকার। রোহিত হলেন তেমন কয়েকজন অধিনায়কের মধ্যে একজন, যাঁর ব্যাটসম্যান হিসেবে বোলারদের প্রতি বেশ সহানুভূতি আছে। ও জানেন যে বোলারদের ভালোভাবে ব্যবহার করতে হলে, তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। এটা একটা কঠিন কাজ। বোলারদের মানসিকতা বোঝাটা সহজ না। সেটা বোলাররাই বেশি ভালো বুঝতে পারে। তাই আমি মনে করি, বোলাররা খুব ভালো অধিনায়ক হতে পারে। কারণ, তারা খেলাটা বোঝে, জানে যে তাঁদের কী করতে হবে।'