বৈশাখের প্রবল দাবদাহ এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু তার আগেই উত্তপ্ত ময়দানি ফুটবলের অন্দরমহল। যে উত্তাপের আঁচ এসে পড়েছে দিল্লির ফেডারেশনের অফিসেও। ইস্টবেঙ্গলের স্টার ফুটবলার জবি জাস্টিন সরকারিভাবে সই করে ফেলেছেন অ্যাটলেটিকো দে কলকাতায় (এটিকে)। এই খবরেই তোলপাড় ভারতীয় ফুটবল।
সরকারিভাবে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দল জবির খবর জানানোর পরেই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। তাদের দাবি খুব পরিষ্কার, জবির 'টোকেনের' মালিক তারাই। ফলে জবিকে খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলেই। কিছুদিন আগেই ক্লাব জোটের 'মহাগাঁটবন্ধন' সামাল দিতে বেকায়দায় পড়েছিল ফেডারেশন। সুপার কাপ নিয়ে এখনও সমস্যায় সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা। তার মধ্যেই এবার এটিকে বনাম ইস্টবেঙ্গলের 'যুদ্ধে' রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে প্রফুল প্যাটেলের ফেডারেশনকে।
আরও পড়ুন: পুড়ে যাওয়া উয়াড়ির পাশে বঙ্গ ফুটবলের অভিভাবক, সাড়া নেই সিএবি-র
জবি বিতর্কে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা অবশ্য ঢাল করছেন 'টোকেন'-কে। লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের দাবি, জবির টোকেন তাঁদের কাছেই রয়েছে। অন্যদিকে, এটিকে কর্তাদের বক্তব্য, চুক্তিপত্রে সই করে ফেলেছেন তারকা স্ট্রাইকার। দেবব্রত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সাফ জানিয়ে দিলেন, "জবির টোকেন আমাদের কাছেই রয়েছে। ফেডারেশনের কাছে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
পালটা হিসেবে এটিকে কর্তারা আবার চুক্তিপত্র দেখাচ্ছেন। যদিও এটিকের পাঠানো ই-মেলে 'প্রি-কন্ট্র্যাক্ট' শব্দবন্ধনী ঘিরে ধন্দ বেড়েছে। যার অর্থ মালুম নেই খোদ এটিকে কর্তাদেরও। ফেডারেশনের নিয়ম কী বলছে? আইলিগের সিইও সুনন্দ ধর ফোনে জানালেন, "ফেডারেশনের কাছে টোকেনের কোনও গুরুত্ব নেই। চুক্তিপত্রটাই আসল।"
জবিকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল টানাপোড়েন। ইস্টবেঙ্গলে যা বেতন পান মালয়ালি স্ট্রাইকার, তার প্রায় তিনগুণ বেতনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন এটিকের কাছ থেকে। যা কার্যত উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না সদ্য শেষ হওয়া আই-লিগে সেরা দেশীয় স্ট্রাইকারের। জানা গিয়েছে, জবি স্বয়ং কোয়েসের শীর্ষ কর্তাকেও ফোন করে নিজের বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। তবে আশ্বাস মেলেনি। এই ঘটনা অবশ্য মাস দু'য়েক আগের। তখনই ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন জবি।
আরও পড়ুন: জীবনের বিশেষ দিনে এক অন্য় সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় ‘মিস্টার আইপিএল’
তা বিতর্কের মধ্যমণি কী বলছেন? পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ প্রকাশ না করেই দক্ষিণী স্ট্রাইকারের দাবি, "বহুদিন আইএসএল-এ খেলার স্বপ্ন ছিল। এটিকে দেশের অন্যতম সফল দল। ওদের কাছে প্রস্তাব পাওয়ার পরে না করতে পারি নি। ওখানে আরও ভালভাবে পারফর্ম করাই আপাতত লক্ষ্য আমার।" টোকেন বিতর্কে জবি আবার বলছেন, "টোকেন তো এখন ভ্যালিডই নয়। টোকেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানিও না। সেদিন ক্লাবে গিয়েছিলাম আলোচনার জন্য। তারপরেই খবরে টোকেনের বিষয়ে জানতে পারি। আপাতত টোকেন নয়, এটিকে-তে ভালভাবে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
শুধু কর্মকর্তারাই নন, জবিকে ঘরে রেখে দেওয়ার জন্য কোচের মাধ্যমেও বোঝানো হয়েছিল। তবে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেজ দলের তারকা স্ট্রাইকারকে ধরে রাখতে পারেন নি। জবি বলছেন, "কোচের সঙ্গে আগামিকাল কথা বলব। পাশাপাশি ঠিক করেছি, শীঘ্রই এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দেব।"
সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগেই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আঁচ পেয়েছিলেন, যে দলের রত্ন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই আসরে নামেন তাঁরা, যদিও জবির আর্থিক চাহিদা মেটানোর কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি কর্তারা। গত ২৮ মার্চ বোর্ড মিটিংয়েও জবির প্রসঙ্গ উঠেছিল। তবে জবি যে 'লস্ট কেস', তা ইদানিং বুঝে গিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। গত সপ্তাহে জবির সঙ্গে ক্লাব কর্তাদের বৈঠকও হয়। জবি নিজের চূডান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। এরমধ্যেই এটিকে-র তরফে সরকারিভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়, আগামি মরসুমে তাদের হয়েই মাঠে নামবেন জবি।