/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/Messi-mbappe-2.jpg)
এমবাপের বিশ্বকাপ অর্জন ছুঁয়ে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। মেসি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতেই প্ৰশ্ন উঠে গেল এবার এমবাপে কবে আর্জেন্টাইন মহাতারকার সেই কীর্তি কবে অর্জন করবেন, যা এখনও তাঁর অধরা- ব্যালন ডি'অর! বিশ্বকাপ ফাইনালে রোহমর্ষক থ্রিলারের পর এবার ব্যালন ডি'অর জয়ের বিষয়ে ফেভারিট মেসি, এমবাপে দুজনেই।
এতেই মেসি বনাম এমবাপে সংঘাতের দ্বিতীয় এপিসোড চালু হয়ে যাচ্ছে। বুধবার থেকেই এই দ্বৈরথের প্ৰথম রাউন্ড শুরু হচ্ছে, যেখানে মেসি লিগা-ওয়ানে পিএসজির জার্সিতে নামছেন এঞ্জার্সের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ জয় সেলিব্রেট করার জন্য ক্লাব থেকে মেসিকে টানা ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে মেসি প্যারিসে এসে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। এবার বিশ্বকাপ জয়ের পর প্ৰথমবার মাঠে নামার অপেক্ষা। কোচ ক্রিস্টোফ গ্যালতিয়ের জানিয়েছেন, এঞ্জার্স ম্যাচে নামার জন্য মেসি প্রস্তুত।
ক্লাব পর্যায়ে একই দলের হয়ে খেললেও মেসি বনাম এমবাপের এই সংঘাত কোন পর্যায়ে পৌঁছয়, তা দেখতে মুখিয়ে গোটা বিশ্ব ফুটবল। মেসির দখলে রয়েছে ৭ বার রেকর্ড সংখ্যক ব্যালন ডি'অর। এই দুর্মূল্য ট্রফি জিতেছেন হাতে গোনা মাত্র ৫ জন ফরাসি। যে তালিকায় রয়েছেন বেঞ্জিমা এবং জিদান। এই কীর্তি অর্জন করতে এখন মুখিয়ে এমবাপে।
One more trophy for Lionel Messi ! #ARGFRA #ArgentinaVsFrance pic.twitter.com/LpROfyN60a
— Ballon d'Or #ballondor (@francefootball) December 18, 2022
নিজের লক্ষ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন এমবাপে। বেঞ্জিমা ব্যালন জেতার পরেই এমবাপে জানিয়ে দিয়েছিলেন, " অবশ্যই এই খেতাব একবার অথবা বারবার অর্জন করতে চাইব। তবে সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া থাকে। আমার মনে হয় আমি সঠিক পথেই এগোচ্ছি।"
আরও পড়ুন: মেসির বিপক্ষেই অভিষেক রোনাল্ডোর! উটের দেশে ফুটবলের ডুয়েল ঘিরে বিরাট আপডেট
তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এরলিং হালান্ড। তবে এক ক্ষেত্রে তিনি পিছিয়ে। সুপার-ফরোয়ার্ড বিশ্বকাপেই খেলেননি এখনও পর্যন্ত। নরওয়েও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
এমবাপে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। মেসি ২০১৪-য় ট্রফি জয়ের ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে এবার অবশেষে জুলে রিমে ট্রফিতে নিজের নাম খোদাই করেছেন। ৯২ বছরের বিশ্বকাপ ফুটবলের সবথেকে উত্তেজক ফাইনাল উপহার দিয়ে মেসি ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করতে সাহায্য করেছেন। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে সাতটা গোল যেমন করেছেন, তেমন চারটে গোলে এসিস্টও রয়েছে তাঁর। সবমিলিয়ে দেশের হয়ে ৯৮ গোল করে ফেলেছেন কিংবদন্তি। আর্জেন্টিনীয় সমর্থকদের সুসংবাদ দিয়ে তিনি আরও জানিয়ে দিয়েছেন, আলবিসিলেস্তেদের হয়ে এখনও বেশ কিছুদিন খেলবেন তিনি।
আরও পড়ুন: মেসির সঙ্গে পুরনো শত্রুতার জের! দেশ আর্জেন্তিনা নয়, ফ্রান্সকেই চ্যাম্পিয়ন চেয়েছিলেন তেভেজ
এমবাপে অন্যদিকে বিশ্বকাপ ফাইনালে রেকর্ড গড়েছেন ক্লাব ফাইনালের ইতিহাসে জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসাবে হ্যাটট্রিক করে। মেসির থেকে এক গোল বেশি করে গোল্ডেন বুটও এবার জিতে নিয়েছেন এমবাপে। ২০০২-এ ব্রাজিলের রোনাল্ডোর পর এই প্ৰথমবার কেউ একটি বিশ্বকাপের সংস্করণে এতগুলো গোল করলেন।
সবমিলিয়ে ২টো বিশ্বকাপ খেলেই এমবাপের নামের পাশে ১২ গোল। বিশ্বকাপ গোলের নিরিখে এখনই ফরাসি সুপারস্টার ছুঁয়ে ফেলেছেন পেলেকে। মেসি এবং জাস্ট ফনটাইনের থেকে এক গোলে পিছিয়ে রয়েছেন। জাস্ট ফনটাইন একটি একটি বিশ্বকাপের সংস্করণেই ১৩ গোল করেছিলেন ১৯৫৮-য়। যে রেকর্ড আর কারোর নেই।
এমবাপে মেসি, ফনটাইনের সঙ্গেই পরের বিশ্বকাপে গোল করে পেরিয়ে যেতে পারেন পশ্চিম জার্মানির প্রাক্তন গোলকিপার গার্ড মুলার (১৪), রোনাল্ডো নাজারিও (১৫), জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোজেদের (১৬)।
আরও পড়ুন: রোনাল্ডোর ধারেকাছে নেই কেউ! এমবাপের এমন মন্তব্যেই মেসির সঙ্গে শুরু হয় ঝামেলা
২০২৬-এ এমবাপে ফ্রান্সের সর্বকালীন সেরা গোলদাতার লড়াইয়েও চলে আসতে পারেন। বর্তমানে ফ্রান্সের জাতীয় দলের হয়ে ৫৩ গোল করে সর্বকালের টপ স্কোরার অলিভিয়ের জিরু। খুব একটা পিছিয়ে নেই এমবাপেও। লে ব্ল্যুজদের হয়ে এমবাপের এখনই গোলের সংখ্যা ৩৬টি।
পরের বিশ্বকাপের সময়ে মেসির বয়স হবে ৩৯। হয়ত ফুটবল থেকে অবসরক নিয়ে ফেলবেন তিনি। তারপরে একের পর এক কীর্তি গড়ার রাস্তা পুরো পরিষ্কার এমবাপের কাছে। তবে মেসি-রোনাল্ডোদের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে বসার আগে এমবাপেকে ব্যালন ডি'অর জিততে হবে। সেটা তিনি ভালোই জানেন।
সেই কারণেই এবার তিনি ক্লাবের জার্সিতে ভাল করতে মরিয়া। বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের মাত্র ১০ দিন পরেই পিএসজির জার্সিতে নেমে পড়তে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আর এই যুদ্ধে ক্লাব সতীর্থ মেসির সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দিতা গোটা বিষয়টিকে আরও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: ফুটবল বিশ্বকাপ খেলবে এবার ভারত-ও! কিংবদন্তি ওয়েঙ্গারের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের ফুটবল
আর ব্যালন ডি'অর জিততে হলে প্ৰথমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করতে হবে কিলিয়ানকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমবাপে আপাতত চলতি সিজনে টপ এসিস্টের তালিকায় রয়েছেন (১৩)। মেসি এবং নেইমার এই তালিকায় যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে (১০ এসিস্ট)। গোল করার ক্ষেত্রে মহম্মদ সালাহের সঙ্গে যুগ্মভাবে শীর্ষে রয়েছেন এমবাপে (৭ গোল)। মেসির পাশে ৪ গোল।
মেসি এর আগে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে। বার্সার হয়ে ৬৭২ গোল করে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন মহাতারকা। অন্যদিকে, পিএসজি কখনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি। তাই ব্যালন যুদ্ধে বরাবর পিএসজি তারকারা পিছিয়ে থেকেছেন। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলে এমবাপে বিরল নজির গড়ে ফেলতে পারেন। ব্যালন ডি'অর জিতে।