হাইকোর্ট প্রান্ত ধরে মাইকেল হোল্ডিংয়ের ছুটে আসা থেকে সুনীল গাভাস্করের শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরে যাওয়া। শচীন তেনডুলকরের বিতর্কিত রানআউটে গ্যালারির ক্ষোভ থেকে বিনোদ কাম্বলির চোখে জল। হরভজন সিংয়ের হ্যাটট্রিক থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ৩৩৫ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ। এসবেরই সাক্ষী থেকেছে ইডেন গার্ডেন্স। বিশ্বের অন্যতম এই সেরা স্টেডিয়াম যেন চলমান ইতিহাস। ক্রিকেটের নন্দনকাননে বসে এই ইতিহাস চাক্ষুষ করেছেন নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী, অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তীর স্ত্রী।
অনেকেই জানেন না যে নীলাঞ্জনা একজন বিরাট মাপের ক্রিকেট ফ্যান। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, ১৯৭৭-৭৮ থেকে এখন পর্যন্ত ইডেনের কোনও ম্যাচ বাদ দেননি তিনি। ছোট-বড় প্রতিটি টুর্নামেন্টে দেশের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছেন। গত ৪০ বছরে ৪০০-র বেশি ম্যাচ দেখেছেন নীলাঞ্জনা। শুরুটা সেই ছোট্ট বয়স থেকেই। নীলাঞ্জনা বলছেন, "১৬-১৭ বছর বয়স থেকে মাসতুতো-পিসতুতো ভাই-বোনদের সঙ্গে ইডেনে আসতাম। এরপর বড় হওয়ার পর থেকে একাই আসতে শুরু করি। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-২০, আইপিএল। কিছুই বাদ দিইনি। এমনকি কর্পোরেট টুর্নামেন্টেও এসেছি।”
আরও পড়ুন, তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতা: এবারের আইপিএলে কার জয়গান?
ইডেন নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে পারেন না নীলাঞ্জনা। অজস্র স্মৃতি ভিড় করে আসে মাথায়। বিশেষ কোনও মুহূর্তে বেছে নিতে বললে বেজায় সমস্যায় পড়েন। তবুও, বিশেষ একটি ঘটনা তাঁর আজও মনে পড়ে। নীলাঞ্জনা বলছেন, একবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট চলাকালীন মাঝপথে খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণটা ছিলেন নীলাঞ্জনা। হ্যাঁ এটাই সত্যি। নীলাঞ্জনার সানগ্লাসের প্রতিফলন গিয়ে পড়ছিল ব্যাটসম্যানের চোখে। ব্যাটসম্যান খেলা থামিয়ে দেন। নীলাঞ্জনাকে সানগ্লাসটা খুলে রাখার অনুরোধ করা হয়। এই ঘটনায় রীতিমতো চমকে গিয়েছিলেন নীলাঞ্জনা।
এতগুলো বছর ইডেনে আসার সুবাদে স্টেডিয়ামের প্রায় প্রতিটি ব্লকেই বসে খেলা দেখেছেন নীলাঞ্জনা। শুধু এফ, এ ও ডি-তে বসেননি তিনি। কিন্তু নীলাঞ্জনা বলছেন, মাঠে খেলা দেখার ব্যাপারে তাঁর সংস্কার কাজ করে। জানালেন, “আমি লোয়ার টিয়ারে বসেই খেলা দেখতে পছন্দ করি। ওখান থেকে ভিউটা দুর্দান্ত। এছাড়াও ওটা আমার জন্য লাকি। যারা আমাকে চেনেন তাঁরাও এসে বলেন আমি যেন ম্যাচের সময় ওই জায়গাতেই বসি। ওখানে বসলেই দল জেতে। সেটা ভারত হোক বা কেকেআর। এমন কি মুখ চেনা হয়ে গেলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারও সেকথা বলেন।”
আইপিএল বলতে আজও নীলাঞ্জনা সৌরভকেই বোঝেন। কেকেআরের ক্যাপ্টেন বদলে যাওয়ায় অসংখ্য বাঙালির মতো তিনিও ব্যথিত হয়েছিলেন। আইপিএলেও নীলাঞ্জনার স্মৃতিতে দু’টো ঘটনাই টাটকা। নীলাঞ্জনা নিজে একজন নিউমেরোলজিস্ট।, কেকেআর-এর জার্সির রঙ বদলানোর পরামর্শ সৌরভকে তিনিই দিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলছেন, “সৌরভকে বলেছিলাম কালো রঙে কখনই টিমের সাফল্য আসবে না। ওই রঙ ক্রিকেটের জন্য শুভ নয়। পরে আমি, জুহি চাওলা, সঞ্জয় জুমানি মিলে জার্সির রঙ বদলাই। এটা নিয়ে পরে লেখালিখিও হয়েছিল।”
আরও পড়ুন, ক্রিকেটটাই কি ফিক্সড! ক্রিকেটারদের হাতের পুতুল বানাতে টি-২০ টুর্নামেন্ট
এছাড়াও নীলাঞ্জনার স্মৃতিতে ভীষণভাবে উজ্জ্বল আরও একটা ম্যাচের ঘটনা। যদিও সেটা ইডেনে নয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। সেটা ছিল আইপিএলের প্রথম ম্যাচ। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের ইনিংসে ভর দিয়ে কেকেআর ১৪০ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল। নীলাঞ্জনা বলছেন, সেদিন কলকাতার হয়ে চিয়ার করার জন্য বেঙ্গালুরুর গ্যালারিতে একজনই কেকেআরের সাপোর্টার হাজির ছিল -- তিনি স্বয়ং। বললেন, “আমি সেদিন কালোর ওপর গোল্ড প্রিন্টের শাড়ি পরে গিয়েছিলাম মাঠে। যে দিকে চোখ যায়, শুধু লাল আর লাল। আমি একাই কেকেআরএর সাপোর্টার। আমার গলা ফাটানো দেখে আরসিবি-র ফ্যানেরাও প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন। পরে এই সমর্থনের জন্য শুধু সাধুবাদই দেন নি, কলকাতার হয়ে চিয়ারও করেন।”
দেশের প্রায় প্রতিটি মাঠেই খেলা দেখেছেন নীলাঞ্জনা। কিন্তু তাঁর চোখে ইডেনই শ্রেষ্ঠ। তাঁর মতে, গাড়ি পার্কিং সুবিধা থেকে পুলিশের সহযোগিতা, প্রতিটি বিষয়েই ইডেন সেরা। সিএবি-র পরিচালনা থেকে প্রশাসক সৌরভের তারিফও করেছেন ইডেনের লাকি ম্য়াসকট নীলাঞ্জনা।