/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/02/SAVE_20210209_165512_copy_1200x676.jpg)
By Rabiul Islam Biddut
সময় কত দ্রুতই না চলে যায়! মনে হয় এই তো সেদিন! যেদিন আকবর আলিরা দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বিশ্বজয়ের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে জানিয়ে দিয়েছিল, "আমরাও পারি।" দিনটি ছিল ২০২০-এর ৯ ফেব্রুয়ারি। দেখতে দেখতে বছুর ঘুরে এলো সেই দিন। যেদিন পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপ আবেগে, স্বপ্নপূরণের স্বপ্নে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। গ্রাম থেকে শহর-সব জায়গায় আকবরদের নামে স্লোগান উঠেছিল। আর হবেই না-বা কেন! আইসিসির বৈশ্বিক কোনও টুর্ণামেন্টে সেটাই যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। এখনও পর্যন্ত।
দিনটা তো কখনও ভুলে যাবার নয়। ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল বলেই দেশের মানুষ ভয়ে ছিল। আশঙ্কা দানা বাঁধছিল। তাদের অনুমান ছিল পসেফস্ট্রুমে হয়তো আরেকটা হৃদয়ভাঙার গল্প লিখতে যাচ্ছেন আকবররা। এটা ভাবার যথেষ্ট কারণও ছিল। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে এশিয়া কাপ ও ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় কাপে তীরে এসে তরি ডুবিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের যুবাদের৷
তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচিত এই চিত্রনাট্যে বদল করে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। পরিস্কার করে বললে অধিনায়ক আকবর আলীর ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবলের কাছে হেরে গিয়েছিল ভারতীয় বোলাররা।
শরিফুল-তানজিম-অভিষেকদের দুরন্ত বোলিংয়ের সামনে ১৭৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত৷ যশস্বী জয়সোয়াল (৮৮) ও তিলক ভার্মা (৩৮) ছাড়া আর কেউই বড় স্কোরের নাগাল পাননি। বৃষ্টির কারণে ডিএল মেথডে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ৪৬ ওভারে ১৭০ রান।
আরো পড়ুন: অবিচারের শিকার কুলদীপ! গনগনে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালল কাইফদের টুইট
শুরুতে মনে হয়েছিল হেসেখেলেই জিতে যাবে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন দুরন্ত শুরু করে ৮.৫ ওভারেই তুলে ফেলেন ৫০ রান। এরপরই আসল ছোবলটা বসিয়েছিল ভারত। ৬২ থেকে ৬৫- মাত্র ৩ রানের মাঝে একে একে ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয় ও শাহাদাত হোসেন।
তারপরেই হারের দুশ্চিন্তা আরো জাঁকিয়ে বসেছিল আপামর ক্রিকেট প্রেমীদের মনে। এবারও বুঝি ভারত জুজু কাটানো গেল না! এই চিন্তায় যখন অনেকে টেলিভিশন সেটের সামনে থেকে উঠে গিয়েছেন তখন আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন পারভেজ-আকবররা। পারভেজ (৪৭) ফিরলেও আকবর (৪৩*) ৩ উইকেটের জয় নিয়ে তবেই ফিরেছেন।
আরো পড়ুন: পন্থকে ‘আউট’ করেছেন কোহলি! বিশ্রী হারের পরেই ভয়ানক অভিযোগে ছিন্নভিন্ন ক্যাপ্টেন
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আকবর আলিকে যখন ফোনে ধরা হলো তখন তিনি অনুশীলনের জন্য মাঠে পৌঁছে গিয়েছেন। বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ তুলতেই যেন থমকে গেলেন! পসেফস্ট্রুমের সেই ফাইনাল নিয়ে এক নিঃশ্বাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে আকবর বলে চলেন, "আমাদের বিশ্বাস ছিল। মনে হয়েছে একটা ব্যাটসম্যানও যদি থাকে আমরা ম্যাচটা জিতব। আর পরিস্থিতিটা এমন ছিল যে একজন ব্যাটসম্যানকে খেলতে হবে৷ আমরা খুব বেশি চিন্তা করিনি। ভাবনাটা ছিল সিম্পল যে আমাকে উইকেটে থাকতে হবে।”
শেষ অবধি আকবর উইকেটে থেকেছিলেন এবং বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন। তবে ম্যাচ শেষ অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল। যেটা নিয়ে বিশ্বকাপের পরেও খুব বেশি কথা বলেননি আকবর। এদিনও বললেন না।
শুধু এটুকু বলে গেলেন,“ হিট অফ দ্য মোমেন্টে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু এটা আর আমরা মাথায় রাখিনি। খেলা শেষে আমরা হোটেলে ফিরে এসেছি…পরেরদিন সকালে একসাথে প্রাত:রাশ সেরেছি। এটা নিয়ে আমাদের কথা হয়নি। অনেক সময় হয়ে যায়…ফাইনাল গেম…এত বড় একটা গেম। সবাই একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। হয়তো একটু সীমা অতিক্রম করেও গিয়েছিলাম। দুই টিমই হয়তো আবেগকে সংযমে রাখতে পারেনি।"
আকবরদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনেক বড় পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সেখানে বাঁধ সেধেছে। আকবর বলছিলেন, "করোনাভাইরাস তো গোটা বিশ্বজুড়েই প্রভাব ফেলেছে। এখানে কারও কিছু করার নেই। এখন আবার আমরা মাঠে যেতে পারছি। খেলতে পারছি। আমি বলব, অন্য দেশগুলোর তুলনায় এই পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়েই আছি।"
যুব দল স্বপ্নপূরণ করে দেখিয়েছে। এবার সাকিবরা কবে, এভারেস্টে উঠতে পারেন, সেদিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন