ক্রিকেটের প্রতি তীব্র অনুরাগ ছিল। শিরায় শিরায় বইত বাইশ গজের ভালবাসা। লতা মঙ্গেশকরের জীবনে স্টুডিও, গান রেকর্ডিং, প্লে ব্যাকের মতই শিরশিরানি নিয়ে আসলে হাজির হত খেলার প্রতি আসক্তি।
ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়া (সিসিআই)-য়ে খেলা থাকলে হাজির হওয়া তো বটেই, যে কোনও ক্রিকেট বিষয়ক আলোচনায় গুণগ্রাহী শ্রোতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন লতা মঙ্গেশকর। সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন ভাই দিননাথ মঙ্গেশকর।
ওয়াংখেড়ে এবং সিসিআই-তে যেমন নিত্য যাতায়াত ছিল সুরসম্রাজ্ঞীর, তেমনই আরব সাগর পেরিয়ে গঙ্গার পারেও এসে দেখিয়ে গিয়েছেন ফুটবল প্রতি প্যাশন। আশির দশকে খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন ভারতের নাইটেঙ্গেল।
সেই সময়েই অসাধ্য সাধন করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা সুপ্রকাশ গড়াগড়ি। ক্লাবে কনসার্ট আয়োজন করে সটান এনে হাজির করেছিলেন লতা মঙ্গেশকরকে। ইস্টবেঙ্গলের সাম্মানিক আজীবন সদস্য পদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। টাইম মেশিনে চেপে ফিরে যাওয়া যাক ১৯৮৮-তে। ক্লাব সেই সময় প্রি-প্ল্যাটিনি গোল্ডেন জুবিলি সেলিব্রেশন আয়োজন করেছিল। আর কনসার্টে হাজির হন স্বয়ং লতা মঙ্গেশকর। যে শেষ পর্যন্ত কোনও ফুটবল ক্লাবের হয়ে তাঁর করা একমাত্র কনসার্ট হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: BCCI-এর আর্থিক দৈন্যতায় ত্রাতা! কনসার্টে গেয়ে বিশ্বকাপজয়ী কপিলদের পুরস্কারের ব্যবস্থা লতার
ইস্টবেঙ্গল দীর্ঘ ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণালব্ধ বই 'ইস্টবেঙ্গল ১০০' নিয়ে কাজ করা প্রখ্যাত ফুটবল ঐতিহাসিক গৌতম রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "সেই সময় অত বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের টাকা পয়সার বেশ টান ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাবের মাঠে ফাংশন আয়োজন করা হয়। ক্লাব কর্তা সুপ্রকাশ গড়াগড়ি বিখ্যাত গায়িকাকে নিয়ে আসেন। লতার অনুষ্ঠানে ১৮ হাজার দর্শক উপস্থিত হন সেই সময়। অনুষ্ঠানে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন অমিত কুমার-ও।"
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধোনিদের জয়ের জন্য গোটা ম্যাচে উপবাস! লতার রক্তেই ছিল ক্রিকেট-প্রেম
ভারতীয় ফুটবল নিয়ে চর্চা করা অন্য এক ফুটবল গবেষক হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তিন দশক আগের স্মৃতি রোমন্থন করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "সেই অনুষ্ঠান কোনওদিন ভুলতে পারব না। একদম ফ্রন্ট রো-তে বসে সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিলাম। সুপ্রকাশ গড়াগড়ির সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের হৃদ্যতা ছিল। তাই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে আসার অনুরোধ উনি ফেলতে পারেননি। সটান হাজির হয়েছিলেন লাল হলুদ তাঁবুতে। অমিত কুমার বাবা কিশোরের বিখ্যাত সমস্ত গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দিচ্ছিলেন। আর লতার জন্য কলকাতার দর্শকদের ছিল পাগলপারা উন্মাদনা।"
আরও পড়ুন: ‘২০ বছরের লেডি নেই, বিশ্বাসই হচ্ছে না’, সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে মুষড়ে পড়লেন সৌরভ
রবিবার স্বরস্বতী পূজার পূজার পরের দিনই অমৃতলোকে যাত্রা করেছেন লতা। তাঁর প্রয়াণের খবর ভেসে আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। রবিবার কিংবদন্তি মহাগায়িকাকে সম্মান জানানোর জন্য ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
রবিবার ক্লাবের এক ভিডিও বার্তায় ক্লাব কর্তা দেবব্রত সরকার জানিয়েছেন, "গতকাল দেবী স্বরস্বতীর বন্দনা করেছিলাম আমরা। আজ প্রকৃত দেবী স্বরস্বতীকে হারালাম। ব্যক্তিগতভাবে ওঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়। লতাজি অমর হয়ে থাকবেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন