/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/23/RJWQXa7MncpVs98OGLF3.jpg)
Laxmi Ratan Shukla: লক্ষ্মীরতন শুক্লা। (ছবি- টুইটার)
Laxmi Ratan Shukla: ক্রিকেটে বাংলার প্রতি বঞ্চনা অব্যাহত। এবার এমনই অভিযোগ করলেন প্রাক্তন তারকা লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি বলেছেন, 'বাংলার ছেলেরা ভালো খেললে তাঁদের ভারতীয় এ দলে জায়গা দেওয়া হয়। আর, অন্যরা ভালো খেললে তাঁদের জাতীয় দলে নিয়ে নেওয়া হয়।' ২০২৪-২৫ বর্ডার গাভাসকর ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণার পর সমর্থক, বিশেষজ্ঞ থেকে গণমাধ্যম- ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত সকলেই অভিমন্যু ঈশ্বরনের হয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন। বাংলার ওপেনার গত পাঁচটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের মধ্যে চারটিতে খেলে তিনটিতেই সেঞ্চুরি করেছেন। সেই কারণে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি সিরিজে ঈশ্বরনের যোগদান সমর্থকের মধ্যে আনন্দের ঢেউ তুলেছিল।
কিন্তু, নির্বাচকরা অভিমন্যুকে নিলেও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে তিনি পছন্দের ছিলেন না। গোটা আড়াই মাসের সফরে অভিমন্যু মাত্র ৯৬ বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া এ দলের বিরুদ্ধে তিনি অবশ্য তেমন খেলতে পারেননি। রান করেছেন- ৭, ১২, ০, ১৭। কিন্তু, পার্থে প্রথম ম্যাচে যখন রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল দলের বাইরে, সেই সময়ও অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামানো হয়নি।
এনিয়ে বলতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বাংলার বোলার হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি বলেছেন, 'আমি একশোভাগ বিশ্বাস করি যে অভিমন্যু ঈশ্বরনের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। আমি ওঁকে আর ইন্ডিয়া এ দলে দেখতে চাই না। ও এখন সিনিয়র খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছে। আমার মনে ওঁর বদলে যাঁরা ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভালো খেলছে, সেই জুনিয়রদের ভারতীয় এ দলে সুযোগ দেওয়া উচিত। ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে খেলার জন্য আমরা ওঁকে ঘরোয়া সিরিজেও পাচ্ছি না। ইন্ডিয়া এ দলের সফরের চেয়ে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাই সুদর্শন এবং অভিমন্যু ঈশ্বরনের মত খেলোয়াড়দের এখন প্রমাণ করার মত কিছু নেই। তাদের এখন হয় সরাসরি ভারতের হয়ে খেলা উচিত। অথবা, ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া দরকার।'
দেবদত্ত পারিক্কলের মত খেলোয়াড়, যে ভারতীয় স্কোয়াডে নিয়মিত নয়, তাঁকে পর্যন্ত পার্থের প্রথম টেস্টে তিন নম্বর পজিশনে নামানো হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে পারিক্কর ২৩ বল খেলে বিনা রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭১ বলে করেন ২৫ রান। ২০২৩ থেকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার ভারতীয় টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিমন্যু ঈশ্বরনের রান ছিল সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় দলের হয়ে বেশি কিছু সফরেও গিয়েছেন অভিমন্যু। কিন্তু, ওই পর্যন্তই। তাঁকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছে। আর, এতেই ক্ষুব্ধ মনোজ তিওয়ারি।
বাংলার হেড কোচ বলেন, 'বাংলার খেলোয়াড়দের সঙ্গে বঞ্চনা এই প্রথম হচ্ছে না। কিন্তু, আমাদের হাত-পা বাঁধা।' লক্ষ্মীর নিজের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে লক্ষ্মীরতনের প্রথম একাদশে নামা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে লক্ষ্মীর বদলে নামানো হয়েছিল আশিস নেহরাকে। মজার কথা হল, লক্ষ্মী যখন মাঠে নামছেন, তখনও ইলেকট্রনিক্স স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছিল লক্ষ্মীর নাম। মাসখানেক পরে লক্ষ্মীকে একদিনের ফরম্যাটে সুযোগ দেওয়া হলেও মাত্র তিনটি ম্যাচের বেশি তিনি খেলার সুযোগ পাননি। তাঁর বদলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে আশিস নেহরা ও জাহির খানকে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্মীর বদলে দলে জায়গা পেয়েছেন হৃষীকেশ কানিতকর, সঞ্জয় বাঙ্গার ও ইরফান পাঠান।
এই প্রসঙ্গে বাংলার হেড কোচ বলেন, 'আমার পারফরম্যান্স দেখেই আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমার কোনও বাহানাও ছিল না। তারপরও আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলার ক্রিকেটের সঙ্গে বঞ্চনা চলছেই। এটা একদম লিখে দেওয়া যায় যে আমরা ভালো খেললেও ভারতীয় এ দলে জায়গা পাব। আর, অন্যরা ভালো খেললে সরাসরি জাতীয় দলে জায়গা পাবে।' যে তিনটি একদিনের ম্যাচে লক্ষ্মী খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, সেখানে পরের দিকে নেমে করেছিলেন ১৮ রান। আর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিমি অ্যাডামসের উইকেট নিয়েছিলেন।
অভিমন্যু ঈশ্বরনের ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হল, যাঁরা তাঁর তারিফ করছিলেন, এ দলের হয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁরাই ঈশ্বরনের নিন্দা করতে শুরু করে দেন। এই ইস্যুতে বাংলার হেড কোচের সোজা কথা, 'ম্যাচ খেলতে না দিয়ে আপনি কারও বিচার করতে পারেন না। কাউকে সুযোগ না দিয়েই সে খেলতে পারবে না, রান করতে পারবে না বলাটা ঠিক না।' বাংলার হেড কোচ হিসেবে লক্ষ্মী নতুন ছেলেদের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করছি। অঙ্কিত চ্যাটার্জি, বিশাল ভাটি অনূর্ধ্ব ১৯ থেকে এবার উঠে এসেছে। আমি যখন ওঁদের বাছাই করেছি, ওঁদের খেলাব। নতুন ছেলেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
অভিমন্যু সম্পর্কে লক্ষ্মীরতন বলেন, 'বাংলা হরিয়ানার সঙ্গে খেলেছে। বরোদার বিরুদ্ধে খেলেছে। সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সবসময় ভালো খেলে যাবে, এমনটা হয় না। তার মানে সে ভালো খেলেনি, সেটাও নয়।' অভিমন্যুর হেয়ারলাইন ফ্র্যাকচার হয়েছে। সেই কারণে তিনি বাংলার হয়ে দুটো ম্যাচ খেলতে পারবেন না। অনুষ্টুপ মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বাংলা দল পঞ্জাবের সঙ্গে খেলার আগে হরিয়ানার সঙ্গে খেলবে।
আকাশদীপ বর্তমানে পিঠের চোট সারাতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আছেন। বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি সিরিজেই পিঠে চোট পান আকাশদীপ। তাঁর বদলে নতুন মুখ হর্ষিত রানাকে খেলিয়েছিলেন কোচ গৌতম গম্ভীর। এটা গম্ভীরের আরও একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন লক্ষ্মীরতন। এই গম্ভীরের অধিনায়কত্বেই লক্ষ্মীরতন কেকেআরে খেলেছেন। গম্ভীর সম্পর্কে বাংলার হেড কোচ বলেন, 'আমি কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু, একজন ট্রফিজয়ী অধিনায়ক আর একজন মেন্টরের মধ্যে ফারাক আছে। আমি চাই, ভারতীয় দল যাতে সেরা খেলাটা খেলতে পারে।'
বছর ৪৩-এর লক্ষ্মীরতনের আইপিএলে ৪০৫ রান এবং ১৫টি উইকেট আছে। চলতি টি২০ সিরিজ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলে আছেন মহম্মদ শামি। সেই কারণে, বাংলা সামনের ম্যাচগুলোয় তাঁকেও পাবে না। ডান গোড়ালিতে অস্ত্রোপচারের পর শামি ইতিমধ্যে টিম ইন্ডিয়ায় ফিরেছেন। একে লক্ষ্মীরতন তাঁর ব্যক্তিগত জয় বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, 'শামিকে জাতীয় দলে ফিরতে দেখে বিরাট আনন্দ পেয়েছি। গত দু'মাস ধরে আমি সেই পুরোনো দিনের মতই ওঁর সঙ্গে খেটেছি। শামি যখন কিছুই ছিল না, তখন আমিই ওঁকে সুযোগ দিয়েছিলাম। আমি সেই সময় অধিনায়ক ছিলাম। আর, আমি ওঁকে বেছে নিই। আমি সেই সময় নির্বাচক সম্বরণ ব্যানার্জিকে বলেছিলাম, আমাকে ওই ছেলেটিকে দিন, আমি ওঁকে খেলাব। এটাকে কাকতালীয় বলতে পারেন, ওঁর দ্বিতীয়বার প্রত্যাবর্তনও আমার তত্ত্বাবধানেই হল।'
আরও পড়ুন- তারকা ক্রিকেটারকে বিতর্কিত আউট! আম্পায়ারিং ঘিরে চরম উত্তেজনা, বেশ কিছুক্ষণ ম্যাচ বন্ধ
শামিকে হয়তো আসন্ন চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিতেই ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যাবে। কিন্তু, অভিমন্যু ঈশ্বরন এবং আকাশদীপকে ভারতীয় দলে জায়গা পেতে এখনও জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হবে। জুনে ভারত টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে। সেই দলে জায়গা পেতে পারেন ঈশ্বরন আর আকাশদীপ।