বাবা- কাকার স্বপ্ন ছিলো ভালো ফুটবলার হওয়ার। চেষ্টা করেও সফল হননি। স্বপ্নপুরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক অনটন। রাজ্য, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে এগোতে পারেনি বেশিদূর। তাঁদের স্বপ্নই এবার পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন সৌম্যজিৎ মান্না।
জুলাইয়ে ডেনমার্কে আয়োজিত হতে চলেছে ডানাকাপ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল প্রতিযোগিতা। ৪৫ টি দেশের ১০০০ টি দল অংশগ্রহন করবে। ভারতীয় দলের অনূর্ধ্ব ১৬ এর বিভাগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে মহিষাদলের সৌম্যজিৎও।
ছোট থেকে খেলার প্রতি নেশা ছিলো। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন চালিয়ে যেত খেলাও। খেলায় আগ্রহ লক্ষ্য করেই পরিবারের তরফে মহিষাদল রাজ হাই স্কুল ময়দানে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে একের পর এক জেলা, রাজ্যস্তরের খেলায় অংশগ্রহন করে পুরস্কার অর্জন করা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভরা যুবভারতী সমস্যা হতে পারে বাগানের! AFC যুদ্ধের আগেই হুঁশিয়ারি আলেহান্দ্রোর ‘বাংলাদেশি’ বন্ধুর
সম্প্রতি মহিষাদলে দ্রোণাচার্য পুরস্কার প্রাপ্ত প্রশিক্ষক তপন পানিগ্রাহী উদ্যোগে মহিষাদল সুইমিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় স্পোর্টস ফেষ্টিভেলের আয়োজন করা হয়। সেই ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত ফুটবল কোচ মলয় সেনগুপ্ত। তিনি সৌম্যজিৎ -এর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। পরিবারের সাথে কথা বলে তিনিই জাতীয় দলে সুযোগের ব্যবস্থা করেন।
কোচের কাছে একান্তে ফুটবল সাধনা সৌম্যজিতের (নিজস্ব চিত্র)
তবে আনন্দের এই খবরেও নতুন দুশ্চিন্তা পরিবারের মাথায়। অভাবের সংসারে কিভাবে এতগুলো টাকা কীভাৱে জোগাড় হবে, তা ভেবেই ঘুম উড়েছে সকলের। ভারতীয় দলের হয়ে খেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমান অর্থের।
তবে এই সুযোগ কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় সৌম্যজিৎ-এর পরিবার। বাবা জগাইহরি মান্না পেশায় একজন খেতমজুর। মাঠে ধান পান চাষ করে কোনো রকমে সংসার চলে। ছেলের এই ধরনের সুযোগের খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও প্রশিক্ষকদের সাহায্য ও সহযোগিতায় আবেদন জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশগ্রহণের সেই চিঠি (নিজস্ব চিত্র)
সকলেই সৌম্যজিৎ এর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বাবা-কাকার পাশাপাশি বাংলা ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে রাতদিন এক করে আপাতত প্রশিক্ষণে ব্যস্ত সৌম্যজিৎ।
প্রশিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত জানা জানালেন, "সৌম্যজিৎ খুব শান্ত প্রকৃতির, খেলা পাগল ছেলে। সকাল বিকেল অনুশীলনে নিজেকে নিংড়ে দেয়। আমরাও চাই ও প্রতিষ্ঠিত হোক। আমার আশা ও দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করবে।"