২০১৯-এর ১৩ অগাস্ট ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে রেড লেটার-ডে হিসেবেই লেখা থাকবে। লাল-হলুদের প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম কর্তা পল্টু দাসের জন্মদিনটাই ফি-বছর ক্লাবের ক্রীড়া দিবস হিসেবে পালন করে ইস্টবেঙ্গল। এবার কিন্তু সেই দিনটা একটা অন্য় মাহাত্ম্য় পেল। কারণ অবশ্য় একটা নয়, দু'টো। একেতে ক্লাবের প্রাক শতবর্ষ উদযাপন। অন্য়দিকে ৩২ বছর পরে ফের একবার ইস্টবেঙ্গলে মজিদ বাসকর। সঙ্গী জামশিদ নাসিরি। এই যুগলবন্দির কাছে যেন বাকি সবকিছুই ম্লান হয়ে যায়।
মঙ্গলবার বিকালে সময় এসে থমকে গেল নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। আট থেকে নয়ের দশক পেরিয়ে শেষ উনিশ বছরের কিংবদন্তি আর কৃতীদের সম্মানজ্ঞাপন করার জন্যই মঞ্চটা বেছে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। একের পর এক দৃশ্য জুড়ে তৈরি হল স্মৃতির কোলাজ। আটের দশকে দুই ইরানিয়ান ফুটবলার ইস্টবেঙ্গলে মশাল জালিয়েছিলেন। যা আজও জ্বলছে। মজিদ বাসকর ও জামশিদ নাসিরি। স্বদেশীয় দুই ভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু দেখা হল তিন দশক পর। শেষ ৪৮ ঘন্টায় শহর মজে রয়েছে প্রাক্তন বিশ্বকাপারে। আর এই মজিদই উত্তরীয় পরিয়ে জামশিদকে সম্মান জানালেন এই মঞ্চে। আরও একবার বন্ধুকে আপন করে নিলেন তিনি। কিন্তু জামশিদ নিজের উত্তরীয়তেই জড়িয়ে নিলেন মজিদকে। তৈরি হল ব্রাহ্মমুহূর্ত। এই ফ্রেম আজীবনের সম্পদ হয়ে থাকল ভারতীয় ফুটবলের আর্কাইভে।
আরও পড়ুন- ‘প্রিয়’ সুব্রত-র হাতেই মহামেডানে সম্মানিত ক্লাবের ১৬ ট্রফির নায়ক
মজিদের জন্য সোনার কয়েন আর একটি ছবি উপহার হিসেবে তুলে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু মজিদও ক্লাব কর্তাদের জন্য ইরান থেকে নিয়ে এসেছিলেন ব্য়াগ ভর্তি উপহার। তুলে দিলেন প্রণব দাশগুপ্ত, কল্য়াণ মজুমদার, দেবব্রত সরকারদের হাতে। মজিদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, "ইস্টবেঙ্গল আমাকে সেরা বিদেশি ফুটবলার হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদের কাছে আমি ধন্য। কলকাতা কত বদলে গিয়েছে। কিন্তু আজও একই রয়ে গেছে লাল-হলুদ উন্মাদনা। কলকাতার এই ভালবাসার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।"
আরও পড়ুন- হৃদয়ের টানেই প্রিয় শহরে বাদশা, লাল-হলুদ মাঠে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসন মেসিকে
ইস্টবেঙ্গলের এই বিশেষ অনুষ্ঠান শুধু ক্রীড়ার মধ্য়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাহিত্য় ও শিল্প জগতের গুণিদের সমাবেশেও চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল। রাজ্য়ের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মজিদ, বরেণ্য় চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমজার, সাহিত্য়িক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্য়ায়, নাট্য়ব্য়ক্তিত্ব রুদ্রপ্রদাস সেনগুপ্ত এবং ফুটবলার সুকুমার সমজাপতিরা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেই অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেছিলেন। শীর্ষেন্দুবাবুর হাতেই শতবর্ষের বিশেষ অ্য়ালমানাক প্রকাশিত হয়।
এদিন আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আজীবন সদস্য়পদ। এদিন নেতাজী ইন্ডোরের দর্শকদের আসন ছেড়ে উঠে নাচতে বাধ্য় করাল ক্লাবের শতবর্ষ উপলক্ষ্য়ে বিশেষ থিম সং। যা গেয়েছেন অরিজিত সিং। যা মুক্তির সঙ্গেসঙ্গে সুপারহিট তকমা কুড়িয়ে নিল ফ্য়ানেদের কাছে। সমবেত কণ্ঠে বারবার শোনা গেল, "১০০ বছর ধরে মাঠ কাঁপাচ্ছে যে দল, লাল-হলুদ ঝড়ের নাম ইস্টবেঙ্গল।"
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যেন টাইমমেশিন রাইডে নিয়ে গেল। কয়েক ঘণ্টায় শেষ ৯৯ বছরের একটা দৃশ্য়পট তৈরি হল চোখের সামনে। ইস্টবেঙ্গলের জীবিত ৪২ জন অধিনায়ককে সম্মান জাননোর এক বেনজির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ছিলেন সুকুমার সমাজপতি, পরিমল দে, সুনীল ভট্টাচার্য, সমরেশ চৌধুরী, প্রশান্ত বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, সুলে মুসা, ইলিয়াস পাসা, সৌমিক দে, সঞ্জু প্রধান, মেহতাব হোসেন, হরমনজ্যোত সিং খাবরা, দীপঙ্কর রায়, গুরবিন্দর সিং, অনীত ঘোষরা।
কোচেদের মধ্য়ে সম্মানিত হলেন অরুণ ঘোষ, প্রবীণ মজুমদার, শ্যাম থাপা, সৈয়দ নইমুদ্দিন, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক, সুব্রত ভট্টাচার্য, আর্মান্দো কোলাসো, বিশ্বজিত ভট্টাচার্য ও মৃদুল দাশগুপ্ত থেকে আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজরা। যদিও সুব্রত, মৃদুলরা আসতে পারেননি। আগামিকাল ম্য়াচ রয়েছে বলে আসেননি আলেয়ান্দ্রো।
এই অনুষ্ঠানে ইস্টবেঙ্গলের পঞ্চপাণ্ডব ধনরাজ, আপ্পারাও, সালে, আহমেদ এবং ভেঙ্কটেসের পরিবারকেও সম্মানিত করে ইস্টবেঙ্গল। ইমন চক্রবর্তী আর নচিকেতা চক্রবর্তীর গানের সঙ্গে মীরের সঞ্চালনা এই অনুষ্ঠানে অন্য় মাত্রা যোগ করে।