Mohun Bagan Iran trip cancellation: ইজরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর জেরে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মোহনবাগান। ভারতীয় সুপার লিগের ক্লাব মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস, এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচে ইরানের প্রো লিগ ক্লাব ট্র্যাক্টর এসসি-র বিরুদ্ধে খেলবে বলে কথা রয়েছে। ম্যাচ হওয়ার কথা ইরানে। কিন্তু, নাসরুল্লাহর মৃত্যুর জেরে লেবানন পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেইনিও ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যেই আবার ইহুদি মতে বর্ষবরণ হওয়ার রাতেই মঙ্গলবার দক্ষিণ ইজরায়েলে ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালিয়েছে তেহরান। পালটা, যে কোনও সময় ইজরায়েল ইরানে হামলা চালাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ইরানে খেলতে যাবে না বলে জানিয়েছে মোহনবাগান।
বাগানের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচ বুধবার ইরানের উত্তরে তাব্রিজের ইয়াদেগার ইমাম স্টেডিয়ামে ভারতীয় সময় রাত ৯:৩০-এ হওয়ার কথা ছিল। কলকাতার শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব গত মাসেই তাজিকিস্তান লিগের ক্লাব রাভশানের সঙ্গে গোলশূন্য অবস্থায় (০-০) ড্র করে এএফসি কাপে অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু, বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে ইরানে দল পাঠানো সত্যিই বিপজ্জনক। একথা মনে করিয়ে দিয়ে এক বাগান কর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আমরা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে বেশ কয়েকটা চিঠি দিয়েছি। আমরা গতকাল এএফসিকেও লিখেছি যে আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার দরকার। ওঁরা ইরানে যেতে চায় না বলে আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যখন কেউ যেতে চায় না, তখন ম্যাচটা অন্য জায়গায় করানোর জন্য আমরা এএফসির কাছে চিঠিতে অনুরোধ করেছি।'
বাগানকর্তা আরও বলেছেন, 'তিন দিন আগে, এএফসি আমাদের চিঠি দিয়েছিল। সেই সময় জানিয়েছিল পরিস্থিতি ঠিক আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু, গত তিন দিনে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আমরা ওদের থেকে আরও একটা চিঠি আশা করছি। আমরা আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি। সেই যুক্তি প্রমাণও করে দিয়েছি।'
কিন্তু, মোহনবাগান একথা বললেও ম্যাচ কোনও নিরপেক্ষ জায়গায় হবে কি না, সেটা এএফসি এখনও ঠিক করেনি। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর নিয়ম অনুযায়ী, মোহনবাগান ম্যাচটা একতরফা না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ধরে নেওয়া হবে ৩-০ ব্যবধানে তারা ট্র্যাক্টর এসসির কাছে হেরে গিয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় ক্লাবকে ৫.৭.২.২ ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হতে পারে। সঙ্গে, অনির্দিষ্টকালের জন্য এএফসি কাপে খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি হতে পারে মোহনবাগানের ওপর।
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন তাদের ওয়েবসাইটে এখনও পর্যন্ত শুধু এটুকু জানিয়েছে, 'মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস ক্লাব এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ এ ম্যাচে খেলার জন্য ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে যেতে চায় না বলে জানিয়েছে। এই ম্যাচ ট্র্যাক্টর এসসির বিরুদ্ধে ২ অক্টোবর, তাব্রিজের ইয়াদেগার ইমাম স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা। বিষয়টি এএফসির সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হবে।'
বাগান জানিয়েছে যে তার অনেক খেলোয়াড়ই বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানে যেতে চায় না বলে চিঠি দিয়ে ক্লাবকে জানিয়েছে। মোহনবাগানের তিন বিদেশি খেলোয়াড়ের একজন আবার অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। অস্ট্রেলিয়া তাদের নাগরিকদের ইরানে যাতায়াতের ওপর ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ দফতরের এক আধিকারিক বলেছেন, 'আমরা পর্যটকদের ইরানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ইরানের যে কোনও জায়গায় হামলা হতে পারে। তেহরান বা বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ইরানের বিভিন্ন জায়গাতেও হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। অস্ট্রেলিয়ানদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইরান ছাড়তে বলা হয়েছে।'
আরও পড়ুন- কোহলির থেকেও তো ভালো রেকর্ড আবদুল্লাহ শফিকের! বিস্ফোরক দাবিতে চরম বিতর্কের মুখে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন
মোহনবাগানের একজন খেলোয়াড় এবং কোচিং দলের তিন জন সদস্য স্পেনের নাগরিক। স্পেনও তাদের নাগরিকদের ইরান সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বাগানের অন্য বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ যথাক্রমে স্কটল্যান্ড এবং পর্তুগালের নাগরিক। ওই দেশগুলোও বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বর্তমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটগুলোও ইরানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে। কিন্তু, এতকিছু দেখেও শেষ পর্যন্ত এএফসি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বাগানকে।