বল হাতে বাজিমাত করার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও বিশ্ব ক্রিকেটকে চমকে দিচ্ছেন শার্দূল ঠাকুর। ওভাল টেস্টে তো ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই অর্ধশতরান করেছেন শার্দূল। সেই সঙ্গে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন মোট ৩ উইকেট। এই রেকর্ড ভারতের আর কোনও ক্রিকেটারের নেই।
শার্দূলই ভারতের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি একই টেস্টের দুই ইনিংসেই অর্ধশতরান করার পাশাপাশি দুই ইনিংসেই এক বার তার বেশি উইকেট নিয়েছেন।
তারকা এই অলরাউন্ডার তোলপাড় ফেলেছেন ক্রিকেট বিশ্বে। ওভালে প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যখন চরম দুর্দশা, সেই সময়ে কিছুটা হলেও দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন শার্দূল ঠাকুর। আর চেষ্টা করতেই সফল! শার্দুলের অবদানে ভারতের ইতিহাস গড়া মসৃণ হয়েছে বিদেশের মাটিতে।
আরও পড়ুন: বুমরাকে যা গালি দিয়েছিল, মুখে আনা যাবে না! প্রকাশ্যে বিষ্ফোরণ শার্দূলের
প্রয়োজনের সময়েই বারবার জ্বলে উঠেছেন শার্দূল। নিঃসন্দেহে ওভাল টেস্টে জয়ের পিছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে শার্দূলের।
দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বিদেশের মাটিতে কোনও টেস্টের আট নম্বর বা তার নীচে ব্যাট করে দুই ইনিংসেই অর্ধশতরান হাঁকানোর নজির গড়েছেন তিনি। এতদিন এই কৃতিত্ব ছিল শুধুমাত্র ভুবনেশ্বর কুমারের। ২০১৪ সালে নাটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসেই ৫০ রান করেছিলেন তিনি। একে একে নানা বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছেন।
শার্দূলের ব্যাট হাতে ঝোড়ো ইনিংসের সুবাদে তিনি নিজের জায়গাও পাকা করে ফেলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রিজার্ভ দলে। হার্দিক পান্ডিয়ার পরিবর্ত হিসেবেও অলরাউন্ডারের কোটাতেও ভাবা হচ্ছে তাঁকে।
আরও পড়ুন: আইপিএলে আমিরশাহি ঢুকতে ‘বাধা’ আফগান তারকাকে! বড় সমস্যায় নাজেহাল সানরাইজার্স
বলের পাশাপাশি ব্যাটের এমন ধুন্ধুমারের আসল রহস্যটা কী? সেই ঘটনার নেপথ্যে দুবছর আগের গোড়ালির চোট লাগা। এই প্রসঙ্গে শার্দূল বলেছিলেন, “যখন দুই বছর আগে গোড়ালিতে চোট পাই, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমার ব্যাটিংকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রয়োজন। আমার মধ্যে ক্ষমতা ছিলই। কিছু করার প্রয়াস তো ছিলই। আমি নিজেকে বলেছিলাম, কুছ ভি হো যায়ে, ব্যাটিং মে আছা করনা হি পাডেগা (যাই ঘটুক, আমাকে ভালো ব্যাটিং করতে হবে)। অতীতেও সুযোগ ছিল কিন্তু আমি কাজে লাগাতে পারিনি।"
সেই সঙ্গে শার্দূলের আরও সংযোজন, "আমি নিজেকে বলেছিলাম, এভাবে চলতে পারে না।" তার ব্যাটিং স্কিলকে উন্নত করতে ১৫০ কিমি বেগে ছুটে আসা পেসের মুখোমুখি হয়েছিলেন নেটে একাধিকবার। তিনি জানান “প্রথমে দুরন্ত পেস আমি ট্যাকেল করতে পারিনি, ধীরে ধীরে এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। অনায়াসেই এখন সামলাতে পারি। সেরকম আর কোন সমস্যা হয়না।"
আরও পড়ুন: অন্ধ্রপ্রদেশ ছাড়লেন বিহারি! আজাহারউদ্দিনের পরামর্শে কেরিয়ারের বড় সিদ্ধান্ত তারকার
আর নিজের ব্যাটিং শৈলীর প্রসঙ্গে মাহিবন্দনায় মেতে উঠেছেন শার্দুল। তিনি পুরোনো এক ঘটনার কথা শেয়ার করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “একবার হোটেলে মাহি ভাইয়ের রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে ওঁর ব্যাট নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। সেই সময় আমার ব্যাটিংয়ের গ্রিপিং দেখে মাহি ভাই বলেন, ব্যাটের গ্রীপ যেন একটু নিচে ধরি। যাতে শট হাঁকানোর সময় আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। সেই কথা শুনে আমার ব্যাটিং আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে।" সেই এক পরামর্শেই কেল্লাফতে। সেই সঙ্গে তিনি রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির উৎসাহেরও উল্লেখ করেছেন শার্দুল, “ওঁরা আমাকে বারবার উৎসাহ দিয়েছে। ওঁদের পরামর্শ, ব্যাটিং করার সময় যেন ব্যাটসম্যানদের মত চিন্তা করি।”
ব্রিসবেন টেস্ট থেকে শুরু করে ওভাল। দূরত্ব পেরিয়েছেন অনেকটা। শার্দুল ঠাকুর দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে নিজের লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়। ভাল পারফর্মেন্সের জন্য মুখিয়ে থাকা শার্দূল বলেন “এখন আমার কাছে ব্যাটিং কোন সমস্যা নয়। টিম ম্যানেজমেন্টের আমার উপর আস্থা রয়েছে। আমি নিজের ব্যাটিং স্টাইল চেঞ্জ করেছি। আমি সেই ধরনের মানুষ নই, আমি নিজের ফর্মের ওপর আস্থা রেখে সামনে এগোতে ভালবাসি।"
ফাস্ট বোলার হিসাবে আত্মপ্রকাশ অনেকটাই কাকতালীয়। শার্দূল জানিয়েছেন, “সেটা ছিল অনুর্ধ ১৩’র একটি ম্যাচ। আমরা এক মারাঠি মাধ্যমের স্কুলে পড়তাম। দীপাবলির ছুটি তখনও শুরু হয়নি। তার আগে একটা ম্যাচে আমাদের ফাস্ট বোলাররা মাঠে নামতে পারেনি। দ্বিতীয় ফাস্ট বোলার ছিল না। আমি বললাম, ‘চলো, আমি দ্রুত বোলিং করব। তারপর থেকেই আমার নামের পাশে জুড়ে গেল ফাস্ট বোলারের তকমা। তার আগে পর্যন্ত আমি শুধু ব্যাট করতাম এবং স্পিন বল করতাম। তারপর থেকেই নিয়মিত ফাস্ট বোলিং শুরু।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন