বাবা অসুস্থ। তাই এবার পার্কিং আটেনডেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করে দিলেন জাতীয় স্কুল বক্সিং চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিট। মাত্র ২৩ বছর বয়স। এই বয়সেই প্যাশনকে ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়তে হল অ্যাথলিটকে।
বক্সিংকে বিদায় জানানোর পালা শুরু হয়েছিল বছর চারেক আগেই। ২০১৭ সালে প্রবল আর্থিক অনটনের কারণে খেলাধুলা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তারপর ক্রমাগত লকডাউন আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়। তারপরেই বর্তমানে এই মহিলা বক্সিং চ্যাম্পিয়ন পার্কিং অ্যাটেন্ডেন্ট হিসাবে চন্ডীগড়ের একটি পার্কিং জোনে কাজ করছেন। বেতন দৈনিক ৩৫০ টাকা।
পার্কিং জোনে আসা গাড়িগুলিতে কুপন দিতে এবং রশিদ সংগ্রহ করতে করতেই তার সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বক্সিং শেখার সময় আর হয় না!
আরও পড়ুন: অলিম্পিকে সোনা জিতেই শাস্তির মুখে ব্রাজিল ফুটবলাররা! ক্ষোভে ফুঁসছে অলিম্পিক কমিটি
জানা গিয়েছে, স্কুল বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী বছর ২৩ এর প্রাক্তন এই মহিলা অ্যাথলিটের নাম ঋতু। বাবার অসুস্থতার কারণে সংসারের হাল ধরতে ২২, নম্বর সেক্টরের শাস্ত্রী মার্কেট পার্কিংয়ে পার্কিং অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। ঋতুর বলছিলেন, "বাবা ২০১৭ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের ভরণপোষণ সামলানোর জন্য বক্সিং এবং অন্যান্য খেলাধুলা ছেড়ে দিতে হয়। আমার তিন ভাই যথাক্রমে মোহালি এবং চণ্ডীগড়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও আয় আমার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। অতএব, আমি একটি পার্কিং অ্যাটেন্ডেন্টের কাজ শুরু করেছি। এটা কঠিন ছিল। কিন্তু আমার অন্য কোন অপশনও নেই।"
স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পরমজিৎ সিং-এর তত্ত্বাবধানে বক্সিংয়ে যোগ দেন স্কুলে পড়ার সময়। ২০১৬ সালে আন্ত:স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৬৩ কেজি বিভাগে তিনি সোনা জেতেন। ওই বছরই তিনি ওপেন ইন্টারস্কুল টুর্নামেন্টে রৌপ্য পদক অর্জন করেন।
আরও পড়ুন: ‘সোনার ছেলে’র জন্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি, কোটি কোটি টাকায় ভাসবেন নীরজ
তেলেঙ্গানায় স্কুল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া কর্তৃক অনুষ্ঠিত স্কুল ন্যাশনাল গেমসে বক্সিংয়ে ৬৩ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। ঋতু বলছিলেন, স্কুলের দিনগুলির কথা আজও তাঁর খুব মনে পড়ে। স্কুল না ছাড়লে আজও তিনি খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। আর্থিক অনটনের কারণে কোনওদিন ভাল কোচের কাছে অনুশীলনও করতে পারেননি। আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। বারবার খেলাধুলার সংরক্ষণ কোটায় চাকরির আবেদন করেও পাননি তিনি।
আক্ষেপ করে ঋতু আরও বলছিলেন "ইউটি পুলিশে হোম গার্ড পদে আবেদন করেছিলাম কিন্তু শারীরিক পরীক্ষায় সফল না হতে পারার জন্য সেটি বাতিল হয়।" এখনও চাকরির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন তিনি। আক্ষেপের সুরে তিনি এব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীন মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করার পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও একহাত নিয়েছেন। ঋতুর কথায়, আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ক্রীড়াবিদদের সামগ্রিক দায়ভার কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা উচিত। এতে আরও নতুন নতুন নীরজ চোপড়ারা উঠে আসবেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন