Advertisment

পিতার প্রয়াণ দিবসেই মোহনবাগানে রত্ন ফেরত কিংবদন্তি-পুত্রের, ক্ষোভ শিল্ডজয়ী পরিবারেও

ভারতীয় ফুটবলে চিনের প্রাচীর যাঁকে বলা হয় সেই গোষ্ঠ পাল ছিলেন আদতে ওপার বাংলার। তবে মহাতারকা-খ্যাতি পান গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে খেলেই। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল, ক্লাবের মিউজিয়াম। ঐতিহাসিক সমস্ত ট্রফি, স্মারকের ভিড়ে যেন শোভা পায় তাঁর অর্জিত পুরস্কারও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mohanbagan

ফের অস্বস্তি মোহনবাগানে। (এক্সপ্রেস ছবি)

অপমান, তাচ্ছিল্যের জ্বালা অনেক সয়েছেন। ক্লাবের নির্বিকার ভঙ্গিরও প্রতিবাদ করেছেন। তবে পিতার মৃত্যুদিনে সমস্ত ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল নীরাংশু পালের। পিতা গোষ্ঠ পালের প্রতি ক্লাবের ঔদাসীন্য দেখে মোহনবাগান রত্নও ফিরিয়ে দিলেন তিনি। তা-ও আবার পিতার মৃত্যুদিবসেই। গত মাসে মোহনবাগানের তরফে পিতার দুর্মূল্য সমস্ত ট্রফি, স্মারক, পদ্মশ্রী সহ একাধিক সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিংবদন্তির পরিবারের হাতে। পদ্মশ্রী, বহুমূল্য ব্যাজ, দামি মানপত্র- কি ছিল না সেই তালিকায়! তবে ফেরত পাওয়ায় আনন্দ পালটে গিয়েছিল আশাভঙ্গের যন্ত্রণায়। ক্লাবের তরফে নীরাংশুবাবুর কাছে যে স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছিল তা ছিল জরাজীর্ন। প্রবাদপ্রতিম পিতার ঐতিহাসিক স্মৃতিমাখা সেই সব স্মারকের পরিণতি দেখে স্থির থাকতে পারেননি তিনি। ক্লাবেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই ধ্বংসাবশেষ নিয়েই তিনি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

Advertisment

আরও পড়ুন মানবিক মোহনবাগান, ডার্বিতে বিশেষ উদ্যোগ ক্লাবের

তারপরে ক্লাবের তরফে কোনও হেলদেল লক্ষ্য না করে প্রয়াণ দিবসেই পিতার 'সম্মান' মোহনবাগান-রত্ন ক্লাবে ফিরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সকালেই নীরাংশুবাবু ক্লাবে এসে মোহনবাগান রত্ন ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানান ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ক্লাব কর্তারা অনেক অনুরোধ করলেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন কিংবদন্তি-পুত্র।

ভারতীয় ফুটবলে চিনের প্রাচীর যাঁকে বলা হয় সেই গোষ্ঠ পাল ছিলেন আদতে ওপার বাংলার। তবে মহাতারকা-খ্যাতি পান গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে খেলেই। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল, ক্লাবের মিউজিয়াম। ঐতিহাসিক সমস্ত ট্রফি, স্মারকের ভিড়ে যেন শোভা পায় তাঁর অর্জিত পুরস্কারও, ক্লাবে খেলে পাওয়া সমস্ত সম্মান যেন ক্লাবের মিউজিয়ামেই সংরক্ষিত থাকে। সেই আশাতেই ১৯৯২ সালে গোষ্ঠ পালের পরিবার তদানীন্তন ক্লাব প্রশাসকদের হাতে তুলে দেয় সমস্ত খেতাব, অর্জিত সম্মান। তারপর কেটে গিয়েছে ২৭ বছর। গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। মিউজিয়ামের স্বপ্ন রয়ে গিয়েছে কল্পনাতেই।

ফুটবল সচিব বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে ধরা হলে তিনি জানান, "১৯৯২ সালে যখন ব্যাপারটা ঘটেছিল তখন আমরা ছিলাম না। স্বাধীন মল্লিক বিষয়টি দেখেছিলেন। ক্লাবে উনি রত্ন ফেরত দিয়ে গিয়েছেন। ক্লাবে এই নিয়ে বৈঠকের পরে খুব দ্রুত ওঁনাদের স্মারক ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

কিংবদন্তির পরিবারের এমন অসম্মান দেখে চুপ থাকতে পারেননি শিবদাস ভাদুরীর পপৌত্রী দেবিকা ভাদুরি। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সাফ জানিয়ে দেন, "কর্তাদের অসৌজন্যতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরে ক্লাবে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি বহুদিন। ২০১০ সালে অঞ্জনবাবু নিজে আমাদের প্রতিবছর ক্লাবে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কোথায় কী! ন্যূনতম সৌজন্যও ওঁরা দেখান না। তাই অভিলাস ঘোষের বাড়িতে নিজেরাই নিজেদের মতো করে ঘরোয়া অনুষ্ঠান করি। নীরাংশুবাবুদের বিষয়টি জানি। ভীষণই দুর্ভাগ্যজনক।" ২০০৩ সালে মরণোত্তর মোহনবাগান রত্ন দেওয়া হয় শিবদাস ভাদুরিকে। ২০১০-এ শিল্ডজয়ী বাকি সদস্যদের। সেই ২০১০ সালেই শেষবার মোহনবাগান ক্লাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন শিবদাসবাবুর বংশধররা। তারপরে 'সব ভুল হয়ে গেছে বিলকুল...'

শিল্ড জয়ের নায়ক বিস্মৃতপ্রায়, আর গোষ্ঠ পালের স্মৃতিতেও মরচে ফেলে দিয়েছেন প্রশাসকরা।

Mohun Bagan
Advertisment