যে সময় তিনি প্যারালিম্পিক জগতে নাম লিখিয়েছিলেন, সেই সময় ভারতে প্যারালিম্পিক শব্দটার সঙ্গেও অনেকের পরিচয় ছিল না। ২০০৪-এর পর কেটে গিয়েছে অনেক বছর। দিলরাজ কৌর হয়ে উঠেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশের প্রথম প্যারা মহিলা শুটার।
তবে তাঁর দুর্দশা একটুও কমেনি। ৩৪ বছরের দিলরাজ বর্তমানে দেহরাদুনের গান্ধী পার্কের কাছে একটি রাস্তার ধারে স্টলে বিস্কুট এবং চিপস বিক্রি করেন। দুর্দশা শুরু ২০১৯ থেকে। বাবা মারা গেলেন চোখের সামনে। তারপর শুরু হল করোনা অতিমারীর ঢেউ। সেই সময়েই মৃত্যু হল ভাইয়েরও।
আরো পড়ুন: শুধু ব্যাটিং নয়, নেতৃত্বেও সেরা তিনি, কোহলি প্রমাণ করলেন সাউদাম্পটনেই
জাতীয় পর্যায়ে ৩০-রও বেশি পদকজয়ী তারকা নিজের পেট চালানোর জন্য আপাতত বেছে নিয়েছেন বিস্কুট বিক্রিকেই। চলতি বছরেও জিতেছেন উত্তরাখন্ড রাজ্য শ্যুটিং কম্পিটিশন। তবে তাতেও দারিদ্র্য ঘোচেনি। রাস্তার ধারে মায়ের সঙ্গে কিয়স্কে বিস্কুট, চিপস বিক্রি করেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
কাঁদতে কাঁদতে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে বলছিলেন, "প্রথমে আমরা গোবিন্দগড়ের কাছে বিক্রি করতাম। তবে মা-ই পরামর্শ দিলেন আরো গান্ধীপার্কের মত একটু জনবহুল এলাকায় কিয়স্ক খুলতে।"
একসময় দিলরাজ কৌরকে গোটা দেশ চিনত ভারতের সেরা প্যারা পিস্তল শ্যুটার হিসাবে। প্রতিবন্ধীদের অলিম্পিক যা প্যারালিম্পিক নামে পরিচিত, সেই টুর্নামেন্টেও অংশগ্রহণ করেছেন দেশের হয়ে। একাধিক শ্যুটিং কম্পিটিশন এবং নির্বাচক প্যানেলেও ছিলেন তিনি। চলতি বছরে দিল্লিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন বিশ্বকাপেও আধিকারিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে বর্তমানে তিনি অসহায়। বলছিলেন, "বাবা ২০১৯-এ মারা যান। বাবার ডায়ালিসিস করতে হত নিয়মিত। এবং সেটা ছিল বেশ খরচসাধ্য। এই বছরেই ফেব্রুয়ারিতে ভাই মারা গেল। একটা বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিল। ওর চিকিৎসার জন্য সব খরচ করে ফেলেছি আমরা। বাঁচাতে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি। ১ কোটি টাকারও বেশি। তবে ব্রেনে এতটাই ইনজুরি হয়েছিল, বাঁচানো গেল না। এখন ধারে-দেনায় আমরা জর্জরিত। কিছু বেঁচে নেই।
এরপরে তিনি আরো জানান, "উত্তরাখন্ড ক্রীড়া মহল আমাকে ভালোভাবেই চেনে। তবে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। কোনো রাজনৈতিক নেতা তো বটেই, কোনো ক্রীড়াবিদের সাহায্য পাচ্ছি না।"
আরো পড়ুন: জাতীয় দলের ফুটবলার এখন ইঁটভাটার শ্রমিক! পেট চালানোর তাগিদে নেমে পড়লেন রাস্তায়
সর্বস্ব হারিয়েও আত্মসম্মানবোধ প্রবল। তা বজায় রেখেই তিনি বলে দিয়েছেন, "নিজের শ্যুটিং কেরিয়ারে অনেক কিছুই অর্জন করেছি। আমাকে সরকারি চাকরি তো দেওয়াই যায়। রাজস্থান, হরিয়ানায় ক্রীড়াবিদদের বি গ্রেড-এর চাকরি দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কিছুই হয় না।"
উত্তরাখণ্ডের ক্রীড়া মন্ত্রী কিন্তু এসব বিষয়ে অবহিতই নন। তিনি টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে জানিয়েছেন, "আমাদের এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। যদি সংশ্লিষ্ট ক্রীড়াবিদ সাহায্যের আবেদন করেন, তাহলে গাইডলাইন মেনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন