Pole Vaulter Dev Meena: বয়স মাত্র ১৯। তার মধ্যে জাতীয় গেমসে নতুন রেকর্ড গড়লেন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা দেব মীনা। অনূর্ধ্ব ২০ এবং সিনিয়র উভয় বিভাগেই তিনি সোনা জিতেছেন। দেরাদুনের মহারানা প্রতাপ স্পোর্টস কলেজে তাঁর এই সাফল্যের পরই দেবকে দেখা গেল কোচ ঘনশ্যামের দিকে ছুটে যেতে। তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে। তারপরই কিউবান কোচ অ্যাঞ্জেল এডুয়ার্ডো গার্সিয়া এস্তেবানকেও জড়িয়ে ধরলেন এই ক্রীড়াবিদ।
পোল ভল্টে ৫.৩২ মিটার লাফ দিয়ে দেব ভাঙলেন তিন বছরের পুরোনো জাতীয় রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ৫.৩১ মিটার। ওই রেকর্ড করেছিলেন শিব সুব্রামণি। ২০২২ গুজরাত জাতীয় গেমসে ওই রেকর্ড করেছিলেন সুব্রামণি। মধ্যপ্রদেশ স্পোর্টস একাডেমি থেকে উঠে আসা দেব মীনা অনূর্ধ্ব-১৮ থেকেই জাতীয় গেমসে পরিচিত মুখ। এবার রেকর্ড করার পর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, 'সকাল থেকেই মনে হচ্ছিল আজ ভালো কিছু করব। জাতীয় রেকর্ড ভাঙা সবসময়ই আমার ভাবনার মধ্যেই ছিল। আজ সেটা করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।'
মাত্র তিন বছরের মধ্যে মীনা ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। আগে ৪০০ মিটার দৌড়তেন। কিন্তু, মধ্যপ্রদেশ স্পোর্টস অ্যাকাডেমির কোচ ঘনশ্যাম তাঁর লম্বা (১৮০ সেমি) চেহারা দেখে পোল ভল্টে নামিয়ে দেন। মীনার কথায়, 'স্যারই আমাকে বোঝান, আমি যাতে পোল ভল্টে নামি। কারণ, আমার হাত ভালো, গ্রিপ ভালো। ভবিষ্যতে বড় কিছু করার সুযোগ আছে পোল ভল্টে।'
কোচ ঘনশ্যাম বলেন, 'ও অ্যাকাডেমিতে যোগ দেওয়ার পর আমি ওঁকে কীভাবে পোল ভল্টে লাফ দিতে হয়, সেটা সেখাই। প্রথমে প্রতিযোগিতায় নামাইনি। শুরুতেই খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতায় নামলে তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।' এরপরই মীনা ২০২২ সালে তাঁর প্রথম রেকর্ড করেন। লাফান ৪.৬০ মিটার। ২০২৩ সালের শুরুতে, মধ্যপ্রদেশের 'খেলো ইন্ডিয়া যুব গেমসে' ৪.৯১ মিটার লাফিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ (U18) বিভাগে জাতীয় রেকর্ড ভাঙেন। এই ব্যাপারে সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদ বলেন, 'আমি যখন প্রতিযোগিতায় নামি, তার আগে টানা ছ'মাস অনুশীলনের মধ্যে ছিলাম। তাতে কাজ হয়েছে। প্রতিযোগিতায় নামার পর থেকে দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করি।'
ঘনশ্যাম বলেন, 'অনূর্ধ্ব ১৮ (U18) এবং ওই বিভাগে জাতীয় রেকর্ড (NR) ভাঙার পর ও প্রথমবার ২০২৩-এ ৫ মিটার পর্যন্ত লাফায়। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি। আমি জানতাম ও বড় পর্যায়ে ভালো কিছু করবে। এজন্য ধীরে ধীরে তৈরি করতে হবে। সেটাই করছিলাম। কাজে দিয়েছে। ও এখন সিনিয়র পর্যায়েও জাতীয় রেকর্ড ভাঙল।'
২০২৩-এ গোয়াতেও এই ক্রীড়াবিদ লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, সেবার বৃষ্টির জন্য খেলা ভন্ডুল হয়ে যায়। গত বছর পাটনায় অনূর্ধ্ব ২৩ (U23) ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড গড়ার চেষ্টা করেছিল মীনা। কিন্তু, সেবার মাঠের এক অংশে ফ্লাড লাইট নিভে যায়। যার ফলে মীনার পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে।
এরপর কিউবার কোচ গ্রেসিয়ার আসার পর মীনা দ্রুত উন্নতি করে। তবে, তাঁর কেরিয়ারের অগ্রগতির পিছনে মূল কারিগর কোচ ঘনশ্যাম। প্রাক্তন এই পোল ভল্টার ১৬ বছর বয়সেই মীনাকে জহুরির চোখ দিয়ে চিনে নিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়া ক্রীড়াবিদ বলেন, 'আমি আজ যেখানে উঠে এসেছি, সেটা ঘনশ্যাম স্যারের হাত ধরেই। উনি যদি আমাকে পোল ভল্টে না নামাতেন, তবে আমি আর এতদূর আসতে পারতাম না। দৌড়ে আমি কখনই তেমন সাফল্য পাইনি। পোল ভল্টে নামার পর থেকেই যা পাচ্ছি।'
সোমবার মীনা দু'বার লাফিয়েও ৫.২৫ মিটারের সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। এরপর কোচের কাছে যান। তাঁর লাফানোর ভিডিও ফুটেজগুলো কোচকে ট্যাবে দেখিয়ে জানতে চান, সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? ঘনশ্যাম বলেন, 'আমি তখন ওঁকে বলি, লাফানোর আগে একটা শ্বাস নে। আর টেকঅফ স্পটের কাছে গিয়ে গতিটা বাড়া। ও ওগুলো করার পরেই সাফল্য এসেছে। আমি, ওকে সবসময় বলি, তোর এই মহাভারত মার্কা লড়াইয়ে আমি সবসময় পাশে আছি।'
আরও পড়ুন- ন্যাশনাল গেমসে জোড়া পদক, আলোড়ন ফেললেন 'বেঙ্গল টাইগার' মৌমিতা
মীনা চান এরপর আরও উঁচুতে লাফাতে। আর, সেটা বিশ্বের দরবারে। এই ব্যাপারে তাঁর কথা, 'আকাশটা চেনা হয়ে গেছে। এটা উচ্চতা বাড়ানোর খেলা। আমি এখন সেটাই করতে চাই।'